ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৯ জানুয়ারি ২০২৫, ২৫ পৌষ ১৪৩১, ৮ রজব ১৪৪৬

বীমার মেয়াদ শেষ হলেও টাকা পাচ্ছেন না গ্রাহকরা

প্রকাশনার সময়: ০১ মার্চ ২০২৪, ২০:৫৯

নানা সুবিধা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি আর বীমা পূর্তির টাকায় মেয়ের বিয়ে দেবেন ভেবে বীমা করেছিলেন আমিনুল হক। মেয়াদ পূর্তি হওয়ার দুই বছর হলেও পাচ্ছেন না টাকা। টাকা দেওয়ার কথা বলে দিনের পর দিন ঘুরাতো বীমা কোম্পানি। তবে এখন অফিসই খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার সালান্দর ইউনিয়নের ড্যানিশপাড়া গ্রামের বাসিন্দা আমিনুল হক। বাবার দেওয়া ভিটেমাটি ছাড়া আর কিছু নেই। অন্যের বাড়িতে কাজ করে সংসার চালাতে হয় তাকে। অভাবের সংসারে টানা পড়া যেন নিত্যদিনের সঙ্গী। সংসারের চাহিদা মেটাতে স্ত্রীকেও অন্যের বাড়িতে কাজ করতে হয়।

নানা প্রতিশ্রুতির ফুলঝুরি আর মেয়ের ভবিষ্যতের কথা ভেবে ২০১৯ সালে সানলাইফ ইনসুরেন্সে কোম্পানি লিমিটেড বীমা করেছিলেন তিনি। অন্যের বাড়িতে কাজ করে প্রতি মাসে ২০০ টাকা করে জমিয়েছিলেন তারা। অভাব-অনটন, সংসার চালাতে হিমশিম খেলেও অনবরত পরিশোধ করেছেন বীমার চাহিদা। মেয়ের বিয়ের বয়স হয়েছে আর বীমা পূর্তির দুই বছর হলেও মেয়াদ পূর্তির টাকা পাচ্ছেন না আমিনুল। অফিসের বারান্দায় বার বার ঘুরে মিলছে না কোন প্রতিকার। এখন আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না বীমা কোম্পানির সেই অফিস।

আমিনুল ইসলাম বলেন, প্রতিবেশী সিদ্দিকের কথা মত বীমা করেছিলাম। ১০ বছর মেয়াদ পূর্তি হলেও আমার টাকা পায়নি। বীমার টাকা কে কেন্দ্র করে সংসারে লেগে আছে নানা ঝুট-ঝামেলা। আগের জায়গায় অফিস আর নেই। অফিস আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। অভাবের সংসারে বীমার টাকা হলে স্বস্তি ফিরবে পরিবারে। নিজের জমানো টাকা ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি তার।

আরেক ভুক্তভোগী আনিস ইসলাম বলেন, আমি নিজেও সানলাইফে বীমা করেছি। সেই সাথে এলাকার ২০ জনকে আমার মাধ্যমে করিয়েছি। তাদের সবার মেয়াদ শেষ হয়েছে। আমি কর্তৃপক্ষকে বললে তারা বলেন মালিকানা পরিবর্তন হয়েছে। এখন সব গ্রাহকেরা আমাদের বাসায় এসে অনশন করে। আমাদের টাকা ফেরত চাই।

গ্রাহকদের দেওয়া তথ্য ও ঠিকানা অনুযায়ী গেলেও অফিসের অস্তিত্ব মিলেনি। জানা যায়, পৌরশহরের বদিউলের মোড়ে এক আবাসিক ভবনে গোপনে অফিস পরিচালনা করছে তারা। সেখানে গিয়ে কথা বলতে চাইলেও গণমাধ্যমের মুখোমুখি হতে কেউ রাজি হননি। কর্মকর্তা আর কর্মচারীদের সাথে কথা বললে তারা বলেন, মালিকানা বিক্রি হয়েছে তাদের। আর সানলাইফ ইনসুরেন্সে কোম্পানি লিমিটেড নামে নেই কোনো বীমা কোম্পানি। নতুন মালিকানা সিদ্ধান্ত নেবেন গ্রাহকেরা কবে টাকা পাবে।

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বেলায়েত হোসেন বলেন, এরকম অভিযোগ আমরা প্রায় পাচ্ছি। বীমার মেয়াদ শেষ হওয়ার পর কেনও গ্রাহকদের টাকা দেওয়া হচ্ছে না বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখবো। সেই সাথে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

নিশ্চিন্ত জীবন, নানা সুবিধা আর নিরাপদ ভবিষ্যতের জন্য বীমা করা গ্রাহকদের চোখে-মুখে এখন শুধু হতাশার ছাপ। বাড়তি সুবিধা তো দূরের কথা নিজের জমানো টাকা কবে ফেরত পাবেন সে দুশ্চিন্তায় সময় কাটছে গ্রাহকদের।

নয়া শতাব্দী/এসআর

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ