ঢাকা, শনিবার, ১১ জানুয়ারি ২০২৫, ২৭ পৌষ ১৪৩১, ১০ রজব ১৪৪৬

যেখানে তিন ঘণ্টায় বিক্রি হয় ৩০ লাখ টাকার মাছ!

প্রকাশনার সময়: ০১ মার্চ ২০২৪, ১৮:০১ | আপডেট: ০১ মার্চ ২০২৪, ১৮:০৭
গাজীপুর বাজারে বিক্রির জন্য বোয়াল মাছ এনেছেন মাছ ব্যবসায়ী কাঞ্চন মিয়া। শুক্রবার সকালে তোলা ছবি।

ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ মহাসড়ক ব্যস্ত হয়ে ওঠার আগেই দূর-দূরান্ত থেকে ক্রেতা-বিক্রেতারা আসতে থাকেন ময়মনসিংহের গৌরীপুরের ডৌহাখলা ইউনিয়নের গাজীপুর বাজারের মাছের আড়তে। সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ক্রেতা-বিক্রেতা ও আড়তদারদের শোরগোলে পুরো মাছের বাজার চঞ্চল হয়ে ওঠে। আর প্রতিদিন এই তিন ঘণ্টাতেই বিক্রি হয় ৩০ লাখ টাকার মাছ।

প্রায় এক যুগ আগে ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ মহাসড়কের পাশে গাজীপুর বাজারে একটি মাত্র দোকানের মাধ্যমে মাছের ব্যবসা শুরু হয়েছিল। আর এখন এই বাজারে ৫০টি মাছের আড়ত রয়েছে।

স্থানীয় মাছচাষিদের পাশাপাশি নেত্রকোনা জেলার মোহনগঞ্জের হাওরের মাছ থেকে শুরু করে, আটপাড়া, মদন, ময়মনসিংহের ফুলপুর, তারাকান্দাসহ বিভিন্ন উপজেলা থেকে মাছচাষিরা নিজেদের মাছ নিয়ে আসেন।

সেখান থেকে মাছ ব্যবসায়ীরা মাছ কিনে প্রক্রিয়াজাত করে প্রতিদিন ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠান। পাশাপাশি স্থানীয়রাও মাছ কিনে নিয়ে যান সাশ্রয়ী মূল্যে।

শুক্রবার বেলা দশটায় বাজার ঘুরে দেখা যায় ক্রেতা-বিক্রেতাদের ভিড়। স্থানীয় ও আশেপাশের মাছচাষিরা গাড়িতে করে মাছ নিয়ে বাজারে আসছেন। আর আড়তদার ও পাইকাররা মাছ কিনে প্রক্রিয়াজাত করে পাঠাচ্ছেন দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। পাশাপাশি স্থানীয় ব্যবসায়ী ও খুচরা বিক্রেতারাও মাছ কিনে নিয়ে যাচ্ছেন এখান থেকে।

মাছ ব্যবসায়ী মঈন উদ্দিন বলেন, ‘আমি ঢাকা থেকে প্রতিদিন এখানে এসে অর্ধলক্ষ টাকার মাছ কিনে ঢাকায় নিয়ে বিক্রি করি। এখানে সাশ্রয়ী মূল্যে মাছ পাওয়া গেলেও থাকা-খাওয়ার সমস্যা। এখানে ভালো কোনো হোটেল ও বাথরুম নেই। এজন্য বিড়ম্বনায় পড়তে হয়।’

স্থানীয় স্কুল শিক্ষক মহসীন কামাল বলেন, ‘উপজেলার অন্যান্য বাজারের তুলনায় এই বাজারে মাছের দাম অনেক সাশ্রয়ী। তাই ছুটির দিনে এই বাজারে এসে একসাথে বিভিন্ন প্রজাতির ছয়/সাত হাজার টাকার মাছ কিনে ফেলি।’

শুরুতে এই বাজারের আড়তদার ও ক্রেতা ছিলেন গৌরীপুর উপজেলার বাইরের বাসিন্দা। দিনে এই উপজেলার ক্রেতা ও আড়তদার বেড়েছে। মাছের আড়ত জমে ওঠায় অনেকের আর্থিক অবস্থার উন্নতি হয়েছে। কর্মসংস্থান হয়েছে স্থানীয় অনেক বেকার যুবকের।

সংশ্লিষ্টরা জানান, গাজীপুর বাজার জমে ওঠার অন্যতম কারণ হচ্ছে এখানে ক্রেতাদের কাছ থেকে শতকরা ৩ টাকা ও বিক্রেতাদের কাছ থেকে ২ টাকা আদায় করা হয়। এর বাইরে অন্যকোন চাঁদা দেওয়া লাগে না। তবে ক্রেতা বিক্রেতা ও আড়তদারদের অভিযোগ দিনে দিনে বাজার জমজমাট হয়ে উঠলেও কোন স্থান বাড়েনি। এতে বর্ষাকালে কাদা হয়। এছাড়াও বাজারের পাশে মহাসড়ক থাকায় দুর্ঘটনার ঝুঁকি থাকে।

আড়তদার তৌহিদুল ইসলাম তপু বলেন, ‘পাঠান আমরা এই বাজার থেকে মাছ কিনে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পাঠাই। আবার সামুদ্রিক মাছ সহ বিভিন্ন মাছ আমরা দেশের নানা জায়গা থেকে এনে এখানে বিক্রি করি। মাছের বাজারটি জমে উঠায় এখানে অনেক বেকারের কর্মসংস্থান হয়েছে। মাছ ব্যবসা করে অনেকেই স্বাবলম্বী হয়েছে।’

গাজীপুর বাজার মাছ ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক কাঞ্চন মিয়া বলেন, ‘শুরুর দিকে এই বাজার তেমন জমে উঠতো না। তবে শেষ কয়েক বছর ধরে এই বাজার জমজমাট। প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে ১২ পর্যন্ত বাজার জমজমাট থাকে। এই তিন ঘণ্টায় ৩০ লাখ টাকার মতো মাছ বিক্রি হয়। তবে বাজারটি সরকারি ব্যবস্থাপনায় আধুনিকায়ন করলে ব্যবসার পরিধি আরও বাড়বে।’

নয়াশতাব্দী/ডিএ

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ