দীর্ঘ সময় ধরে দুবাইয়ে ব্যবসা করছেন এক প্রবাসী। নিজের ছেলে-সন্তান নেই। সম্প্রতি দেশে আসার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন তিনি। খরচ কমাতে কয়েকজন আত্মীয়-স্বজন মিলে দুই লাখ ৪৯ হাজার টাকা পাঠান বাড়ির পাশের এক যুবকের একাউন্টে। কথা ছিলো, টাকাগুলো তুলে প্রবাসীর স্ত্রীর হাতে দেওয়ার।
তবে, টাকাগুলো একাউন্টে জমা হওয়ার পর থেকে নানা টালবাহানা শুরু করেন। দীর্ঘ এক মাস পর একটি তারিখ দিয়ে নির্ধারিত সময়ের আগে ‘অপহরণ নাটক’ সাজিয়ে ওই টাকাসহ লাপাত্তা হয়ে যান সাইরাজ আফতাব সবুজ নামের ওই যুবক।
সবুজ এর আগেও পরিবারের নানা সমস্যার কথা বলে ওই প্রবাসীর কাছ থেকে নেন আরও দুই লাখ ১৭ হাজার টাকা।
এভাবেই প্রতারণার শিকার হয়েছেন বলে জানিয়েছেন কক্সবাজার সদরের খরুলিয়া কোনারপাড়া এলাকার মো. সাইফুল ইসলাম নামের ওই দুবাই প্রবাসী। প্রতিকার চেয়ে কক্সবাজার সদর থানায় লিখিত অভিযোগও দিয়েছেন তিনি।
অভিযুক্ত সাইরাজ আফতাব সবুজ একই এলাকার ইয়াবা কারবারি নাছির উদ্দিনের ছেলে।
প্রবাসী সাইফুল ইসলাম জানান, ২০০২ সাল থেকে তিনি দুবাইয়ে ব্যবসা করছেন। তার কোনো ছেলে সন্তান না থাকায়, কয়েক বছর ধরে প্রতিবেশী ও নিকটাত্মীয় সবুজের একাউন্টে টাকা পাঠান পরিবারের জন্য। খরচ কমাতে একসঙ্গে টাকা পাঠান তার প্রবাসী তিন ভাগিনাসহ দোকানের কয়েকজন কর্মচারীও। এছাড়া দেশে ফিরলে ওই টাকা ফেরত দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে প্রবাসীর কাছ থেকে ঋণ নেন ২ লাখ ১৭ হাজার টাকা।
সাইফুল সম্প্রতি দেশে ফেরার কথা জানিয়ে গত ৩ জানুয়ারি সবুজের ডাচ বাংলা কক্সবাজার শাখার একাউন্টে (৭০১৭৩২০৮০৪৩৪৪) টাকা পাঠান ২ লাখ ৪৯ হাজার টাকা। প্রবাসী দেশে আসার খবর পেয়ে আগের টাকা ফেরত ও সম্প্রতি পাঠানো টাকা হাতিয়ে নিতে নানা ছক আঁকতে থাকেন অভিযুক্ত সাইরাজ আফতাব সবুজ। দাবি করেন, তার ব্যক্তিগত একাউন্টটি নানা জটিলতায় পড়েছে। এভাবেই এক মাস অতিবাহিত করার পর তিনি ফোন করে জানান, তাকে অপহরণ করা হয়েছে।
সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘সবুজকে নিজের ছেলের মতো বিশ্বাস করেছিলাম। যখন যা চেয়েছে তাই দিয়েছি। তার পরিবারের সমস্যার কথা বলে এর আগে আমার কাছ থেকে ২ লাখ ১৭ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছে সে। সর্বশেষ তার একাউন্টে ২ লাখ ৪৯ হাজার টাকা পাঠালে দীর্ঘদিন গড়িমসি করতে থাকে। এক মাস পর ফেব্রুয়ারির ৮ তারিখ হঠাৎ একটি অপরহণ নাটক করেন সবুজ। গল্প সাজান ব্যাংক থেকে টাকা নিয়ে বাড়ি ফেরার পথে দিনেদুপুরে ডাকাত দল তাকে অপহরণ করে। টাকাগুলো ছিনিয়ে তাকে গভীর রাতে টেকনাফ-কক্সবাজার সড়কের চাইল্যাতলী এলাকায় রাস্তার পাশে ফেলে রেখে যায়। অথচ এই সড়কেই রয়েছে র্যাবের কার্যালয়।’
কাল্পনিক কাহিনী শুনে তাকে পুলিশের দ্বারস্থ হতে পরামর্শ দিলে, সে উল্টো আমাকে ‘হুন্ডির টাকা’ বলে ভয় দেখায় অভিযোগ করে দুবাই প্রবাসী আরও বলেন, ‘অথচ এগুলো আমার রেমিটেন্সের টাকা। তার ব্যাংক একাউন্টে পাঠিয়েছি। পরে ব্যাংকে খবর নিয়ে জানতে পারলাম টাকাগুলো পাঠানোর পর ৪ দিনের মধ্যে বিভিন্নভাবে তুলে নেয় সবুজ। সে যেদিন টাকা উত্তোলনের কথা দাবি করেছে; সেইদিন কোনো টাকাই তোলেনি! এক মাস নানা টালবাহানা করে নাটক সাজানোর পর থেকে লাপাত্তা হয়ে যায় সবুজ। বর্তমানে তার কাছে ৪ লাখ ৬৬ হাজার টাকা পাবো। প্রথমে টাকা ফেরত দেবে বলে প্রতিশ্রুতি দিলেও, এখন আমার পরিবারকে নানা ধরনের হুমকি দিচ্ছে।
ঘাম ঝরানো টাকা ফেরত পেতে নিরুপায় হয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহীনির দ্বারস্থ হয়েছেন জানিয়ে সাইফুল ইসলাম আরও বলেন, টাকা পাঠানোর পর থেকে আজ দেবো, কাল দেবো- বলে আশ্বাস দেয় সবুজ। সেদিন নাটক সাজান, ওইদিনই টাকা দিয়ে দেওয়ার কথা ছিল। অপহরণ নাটক সাজানোর কয়েকদিন পর থেকে আর কোনো খোঁজখবর নেই প্রতারক সবুজের। অথচ ওই আড়াই লাখ টাকার মধ্যে আমার আত্মীয়-স্বজনের টাকাও রয়েছে। এখন তাদের চাপে দিশেহারা হয়ে পড়েছি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সবুজের বাবা নাছির উদ্দিন একজন ইয়াবা কারবারি। ২০১৮ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর বিপুল ইয়াবাসহ চট্টগ্রামের চান্দগাঁও থানায় আটক হয়ে দীর্ঘদিন কারাভোগ করেছেন।
কাউছার, নাছির, ইরফান নামের স্থানীয় কয়েকজন যুবক জানান, তাদের বৈধ কোনো আয় নেই। অথচ চলাফেরা করেন রাজার হালে। এখন বুঝতে পেরেছি, প্রবাসীর সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেই এভাবে চলছেন। অপহরণের ঘটনা শুনেই প্রথমে সন্দেহ করেছিলাম। পরে ঘটনাটি জানাজানি হলে তার অভিনয়ের বিষয়টি উঠে আসে। টাকা ফেরত দেওয়ার ভয়ে এখন লাপাত্তা সবুজ।
এ বিষয়ে জানতে সবুজের মোবাইলে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তার নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়।
তবে সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) রকিবুজ্জামান বলেন, ঘটনা তদন্ত করা হচ্ছে। সত্যতা পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
নয়াশতাব্দী/এনএস
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ