চট্টগ্রামে চুরি ও ছিনতাই হওয়া মোবাইলগুলো ছিনতাইকারীদের কাছ থেকে কিনে আইএমইআই নম্বর বদলে দেওয়া চক্রের মূলহোতা মো. সরোয়ার হোসেন সুজনকে (৩১) গ্রেপ্তার করেছে ডিবি পুলিশ।
বৃহস্পতিবার (২৯ ফেব্রুয়ারি) এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বিষয়টি নিশ্চিত করেন চট্টগ্রাম মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম এন্ড অপস্) মো. মান্নান।
এর আগে বুধবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) রাতে নগরীর পাহাড়তলী থানার মৌসুমি আবাসিক এলাকায় বাসায় অভিযান চালিয়ে ওই যুবককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তার সুজনের বাড়ি নোয়াখালী জেলার সেনবাগ উপজেলায়। নগরীর অলঙ্কার মোড়ে অলঙ্কার শপিং কমপ্লেক্সে তার একটি নতুন-পুরনো মোবাইল কেনা-বেচা এবং মেরামতের দোকান আছে তার।
নগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ-কমিশনার (বন্দর-পশ্চিম) মোহাম্মদ আলী হোসেন জানিয়েছেন, ওই যুবকের সঙ্গে ইন্দোনেশিয়া ও পাকিস্তানের দুই নাগরিকের যোগাযোগের তথ্য মিলেছে, যারা আইটি এক্সপার্ট। কোনো মোবাইল সেটের আইএমইআই নম্বর পরিবর্তন করতে না পারলে বাংলাদেশি ওই যুবক তার বিদেশি বন্ধুদের সহযোগিতা নেন। তারা নিজেদের দেশে বসে স্বতন্ত্র সফটওয়্যার অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার করে সেটা পাল্টে দেন। দেশি-বিদেশি এ চক্রের এমন কারসাজির কারণে চট্টগ্রামে চুরি-ছিনতাই হওয়া অধিকাংশ মোবাইল সেট উদ্ধার করা সম্ভব হচ্ছে না বলে তিনি জানান।
মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম এন্ড অপস্) মো. মান্নান জানান, গ্রেপ্তার সরোয়ার আইএমইআই পরিবর্তনের জটিল কাজগুলো টিম ভিউয়ার সফটওয়্যারের মাধ্যমে পাকিস্তানি ও ইন্দোনেশিয়ান এক্সপার্ট দিয়ে করাতেন। নগরীর পাহাড়তলীর মৌসুমী আবাসিক এলাকার নিজ বাসায় অভিযান চালিয়ে আইএমইআই বদলে দেওয়ার মূল হোতা সরোয়ারকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার কাছে পাওয়া যায় ২টি ল্যাপটপ এবং ৫২টি বিভিন্ন ব্র্যান্ডের মোবাইল সেট।
জিজ্ঞাসাবাদে আসামি জানায়, আইএমইআই বদলের জন্য প্রায় ৫০ হাজার টাকা বিনিময়ে দুটি সফটওয়্যার ক্রয় করে তা ল্যাপটপে ইন্সটল করে। এরপর ওই সফটওয়্যার ব্যবহার করে ২ মিনিটেই আইএমইআই খুব সহজে বদল করে ফেলেন।
তিনি বলেন, সরোয়ার আইটি বিষয়ে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ার নিয়ে লেখাপড়া করেছেন। সে আগে একটি প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানে কাজ করতেন। সে ইন্টারনেটে বিভিন্ন ভিডিও দেখতে দেখতে বিদেশি নাগরিকের সাথে পরিচয় হয়। একপর্যায়ে এই বিদ্যাটা আয়ত্তে এনে সাড়ে তিনমাস ধরে নিজ বাসা থেকে এই কাজ করতেন। প্রতিদিন তিনি ৫/৬টি মোবাইল এভাবে আইএমইআই বদল করে থাকেন। নগরীর অলঙ্কার শপিং কমপ্লেক্সে নিজের দোকান ও অনলাইনে বিজ্ঞাপন দিয়ে বিক্রি করেন। মোবাইলগুলো চট্টগ্রাম শহরের বিভিন্ন এলাকা থেকে চুরি, ছিনতাই বা পকেটমারদের নিকট হতে কম দামে ক্রয় করে এভাবে মোবাইলের আইএমইআই বদলে প্রতিদিন মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিতেন।
এর মধ্যে অত্যধুনিক মোবাইলগুলোর আইএমইআই বদলের জটিল কাজগুলো পাকিস্তানি বা ইন্দোনেশিয়ান এক্সপার্টদের ডলার পে করার মাধ্যমে করতেন। মোবাইলের আইএমইআই পরিবর্তনের কাজ কারও কাছ থেকে নিলে প্রতি মোবাইলে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা পর্যন্ত নিতেন।
নয়াশতাব্দী/ডিএ
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ