পটুয়াখালী পৌর নিউমার্কেটে ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরের শেষ দিকে মেয়র মহিউদ্দিন ও তার বন্ধু বর্তমান জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমান শহরের পৌর নিউমার্কেট বাজারে কিচেন মার্কেট করার ঘোষণা দেন। এরপরে পৌরসভার পক্ষ থেকে নিউমার্কেটের ব্যবসায়ীদের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান স্থানান্তর করার জন্য দফায় দফায় বৈঠক করা হয়। তবে স্থান দ্রুত পরিবর্তন করাটা ব্যবসায়ীদের জন্য সহজ ছিল না। তবে নিউমার্কেটের ব্যবসায়ীদের সাথে পৌর কর্তৃপক্ষের আলোচনার একমাস শেষ হতে না হতেই হঠাৎ করেই ২০২১ সালের ৬ অক্টোবর ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে ছাই হয়ে যায় নিউমার্কেটের মুদিমনোহরি, কসমেটিক, চালের আড়ৎসহ প্রায় শতাধিক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। ভস্মীভূত হয়ে যায় অনেক পরিবারে স্বপ্ন। অনেকেই হারিয়ে ফেলেন তাদের শেষ সম্বলটুকু।
এই ঘটনার কিছুদিন পরেই সেই স্থানে নির্মাণ কাজ শুরু হয় বহুতল ভবনের। আধুনিক মার্কেটের নামে মানুষের ভাঙ্গা স্বপ্ন দিয়ে গড়ে ওঠা সেই চারতলা মার্কেটের অল্প কিছু নির্মাণ কাজ শেষ করেই শুরু হয় স্টল বরাদ্দের কাজ। পাঁচ হাজার টাকার অফেরৎযোগ্য মূল্যে ছাড়া হয় ফর্ম। এই ফর্ম থেকে লটারির মাধ্যমে নির্ধারিত হবে স্টল। তবে অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের মার্কেটের প্রথম সারির স্টল দেয়া হবে লটারি ব্যতীত তৎকালীন এমন কথা দেন পৌর মেয়র।
তবে মার্কেটের অনেকগুলো স্টল ভৌতিকভাবে বরাদ্দ পায় বর্তমান মেয়র মহিউদ্দিন আহমেদের আত্মীয়-স্বজনরা। যার মধ্যে রয়েছে তার আপন বড় ভাইয়ের ছেলে আদনান শাহরিয়ার আবিদ, মেয়রের চাচাতো ভাই পটুয়াখালী সদর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও কমলাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. মনির হোসেন মৃধার স্ত্রী লিমা রহমানসহ আরো অনেকে।
এ বিষয়ে জানতে মেয়রের চাচাতো ভাইয়ের স্ত্রীর নামের বরাদ্দকৃত পৌর নিউমার্কেটের কিচেন মার্কেটের নিচ তলার ১০৪ নম্বর তুলনা স্টোর্স নামের স্টলের প্রোপাইটরের ফোন নম্বরে যোগাযোগ করলে ফোনটি রিসিভ করেন লিমা রহমানের স্বামী কমলাপুর ইউপি চেয়ারম্যান মনির। এসময় স্টলের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি সাংবাদিকদের বাজে ভাষায় গালমন্দ শুরু করেন। এছাড়াও তিনি সাংবাদিকদের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দেয়ার হুমকি দেন। এসময় তিনি অনলাইন ভিত্তিক গণমাধ্যম বাংলা ইনসাইডার ও জাতীয় দৈনিক ঢাকার সাংবাদিক রাকিবুল ইসলাম তনুকে বলেন, ‘মোবাইলে কিসের বক্তব্য দিমু আপনি আসেন। ব্লাকমেইল করতাছেন? সামনাসামনি আসেন। এ ব্যাডা আমি মনির চেয়ারম্যান, তুই আমার সামনে আয়। তুই আমারে লইয়া বহুত কাউর করতেছো। আমিও তোমারে লইয়া কাউর করমু।’
এছাড়াও বিডি২৪ লাইভ ও প্রতিদিনের কাগজ পত্রিকার আরেক গণমাধ্যম কর্মী স্বপ্নীল দাসকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। তিনি সাংবাদিক স্বপ্নীলকে বলেন, ‘এই সাক্ষাৎকার নেয়ার দরকার কি আপনের? ভুয়া সাংবাদিকতা বাদ দেন এসব। সামনা সামনি হন। এসব মোবাইল ঠোবাইল বাদ দেন। আমি মনির চেয়ারম্যান, আমার সামনা সামনি আন মেয়া। আপনে চে**র বা** মেয়া। সামনা সামনি আন। ফাইজলামি চো*, ওইহানে বইয়া স্বপ্নীল চো*’
গণমাধ্যম কর্মীদের গালাগালি করার কারণ জানতে মনিঈরের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি এই বিষয়ে আপনাদের কাছে জবাবদিহি কেন করবো। আপনাদের চাকরি করি না আমি। আমি ওর (সাংবাদিক তনুর) নামে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করমু’
স্টল বরাদ্দের বিষয়ে তুলনা স্টোরের প্রোপাইটার মনির চেয়ারম্যানের স্ত্রী লিমার বক্তব্যের জন্য তার সাথে যোগাযোগ করেন সাংবাদিক নয়ন মৃধা। আবারো ফোনটি রিসিভ করেন ইউপি চেয়ারম্যান মনির হোসেন। এসময় তিনি বলেন, ‘এখন পটুয়াখালী পৌরসভা নির্বাচন চলে। এই মুহূর্তে স্টল নিয়ে এতো কথা বলছেন কেন!’
এবিষয়ে তুলনা স্টোরের প্রোপাইটার লিমা রহমান জানান, চরপাড়া আমার ঘর ভাঙ্গা হয়েছে আর সে কারণেই নিউমার্কেটের কিচেন মার্কেটে স্টল পাই।
মূলত এই লিমা রহমান পটুয়াখালীর চরপাড়ায় সরকারি জমি দখল করে ঘর উঠিয়ে ভাড়া দিতেন। নদী দখল মুক্ত করার অভিযানে ভেঙে ফেলা হয় সেই ঘর। তবে সেই ঘরের ক্ষতিপূরণ হিসেবে তিনি কিচেন মার্কেটে স্টল বরাদ্দ পেলেও ওই একই সরকারি জায়গাতে ঝুঁপরি ঘরে থাকা ছিন্নমূল ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের মাথা গোঁজার কোন ব্যবস্থাই করেননি পৌর মেয়র মহিউদ্দিন।
আত্মীয়দের নামে একাধিক স্টল বরাদ্দের বিষয়ে পৌর মেয়র মহিউদ্দিন আহমেদ জানান, পটুয়াখালী পৌরসভা উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় নিউমার্কেটের কিচেন মার্কেট নির্মাণ করা হয়েছে। তবে এখনও শেষ হয়নি। ভাইয়ের ছেলে আবিদের নামে কোনো স্টল বরাদ্ধ নেই। তাছাড়া আবিদ মানসিক প্রতিবন্ধী তার কথা কতটুকু কাউন্টাবল? পাল্টা প্রশ্ন করেন তিনি। এছাড়া কাউন্সিলর ও যুবলীগ সভাপতির স্ত্রীর ও তার চাচাত ভাইয়ের স্ত্রীর নামে বরাদ্দকৃত স্টলের ব্যাপারে তিনি কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি।
নয়া শতাব্দী/এসএ
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ