পটুয়াখালীর দশমিনায় আদমপুরা খালের ওপর নিমার্ণাধীন সেতুর কাজের সময়সীমা শেষ হওয়ার পর এক বছর ধরে বন্ধ রয়েছে। দুই ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী এলাকায় এই সেতুর কাজ শুরুর সময় চলাচলের জন্য একটি কাঠের অস্থায়ী সেতু নির্মাণ করা হয়। সেই কাঠের সেতুও নড়বড়ে হয়ে গেছে। এদিকে, সেতুর কাজ শেষ না হওয়ায় পণ্যবাহী ছোটবড় যানবাহনগুলো দ্বিগুণ রাস্ত ঘুরে চলাচল করছে। এতে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে চার গ্রামের মানুষকে।
উপজেলা এলজিইডি সূত্রে জানায়, উপজেলার বহরমপুর ও বেতাগিসানকিপুর ইউনিয়নের সংযোগ সড়কটি ১০ কিলোমিটার। এই সড়কের সীমান্তবর্তী মোল্লাবাজার এলাকায় আদমপুরা খালের ওপর পুরোনো লোহার সেতুটি নড়বড়ে হয়ে পড়লে নতুন গার্ডার সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয় এলজিইডি। গ্রামীন অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প (২য় পর্যায়ে) আওয়ায় এই সেতু নির্মাণের কার্যাদেশ দেওয়া হয় ২০২২ সালের ১৫ মার্চ। ১০৫ফুট লম্বা ১৮ফুট প্রস্থের এই সেতু নির্মাণে ব্যয়ে চুক্তিমূল্য ছিল ৪ কোটি ১৭ লাখ ৫৬ হাজার টাকা। সেতু নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০২৩ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি।
স্থানীয়রা জানায়, একসময় বহরমপুর ইউনিয়নের বাসিন্দারা এই সেতু পেরিয়ে বেতাগী সানকিপুর হয়ে জেলা শহরে থেকে পণ্য নিয়ে আসা-যাওয়া করতো। এটি ছিল তাদের সহজ পথ। কিন্তু সেতু না থাকায় তাদের প্রায় দ্বিগুণ পথ ঘুরে চলাচল করতে হচ্ছে। এ ছাড়াও সেতু না থাকায় প্রতিদিন চার গ্রামের অন্তত এক হাজারেরও বেশি মানুষ চলাচলে দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, সেতু নির্মাণের জন্য খালের দুই পাশে দুটি পাকা পিলার নির্মাণ করা হয়েছে। সেখান দিয়ে রড বেরিয়ে আছে। সেতুটির পাশে অস্থায়ীভাবে নির্মিত কাঠের পাটাতনের সেতু দিয়ে স্থানীয়রা চলাচল করছে। সেতু দিয়ে কোনো ধরনের যানবাহন চলাচল করতে পারছে না। তবে মোটরসাইল নিয়ে সেতুর ওপর উঠলে বোঝা যায়, সেতুটি নড়বড়ে হয়ে গেছে। সেতুর কিছু কিছু স্থানে কাঠের পাটাতন ভেঙে রয়েছে। এদিকে সেতুস্থানের খালে পানি নেই। তাই মাঠ দিয়ে অনেকে হেঁটে পার হচ্ছেন।
সেতু এলাকার বাসিন্দা অ্যাডভোকেট এনামুল হক রতন বলেন, আগে এখানে লোহার সেতু ছিল। কিন্তু জরাজীর্ণ হয়ে পড়ায় তারা সেতু নির্মাণের দাবি জানায়। পরে সেতুর কাজ শুরু হওয়ায় এলাকাবাসী খুশি হয়েছিলেন। কিন্তু এক বছরেরও বেশি সময় ধরে সেতুর কোনো কাজ হয় না।
বহরমপুর ইউপি সদস্য গিয়াস উদ্দিন মৃধা বলেন, সেতুর পশ্চিমপাড়ে দক্ষিণ আদমপুর, পশ্চিম আদমপুর ও পূর্ব আদমপুর গ্রাম, আর পূর্বপাড়ে উত্তর আদমপুর গ্রাম। এই চার গ্রামের কৃষিকাজে আদমপুর খালের পানি ব্যবহার করা হতো। কিন্তু সেতু নির্মাণের সময় খালে বাঁধ দেওয়ায় বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতা ও শুকনো মৌসুমে পানি সংকটে পড়তে হচ্ছে।
সেতুর পূর্বপাড়ের বাসিন্দা মোর্শেদা বেগম জানান, আগে লোহার জরাজীর্ণ সেতু পার হয়ে তাদের চার গ্রামের ছাত্র-ছাত্রীরা দক্ষিণ আদমপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়েসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যাতায়াত করতো। এখন বিকল্প কাঠের সেতুটিও নড়বড়ে হয়ে গেছে। এতে শিক্ষার্থীসহ এলাকাবাসীদের চলাচলে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
এবিষয়ে বেতাগী সানকিপুর ইউনিয়ান পরিষদ চেয়ারম্যান মশিউর রহমান ঝন্টু বলেন, সেতু নির্মাণ শেষ না হওয়ায় সকল ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। এ ছাড়াও খালের দুই পাড়ের চার গ্রামের ফসলি খেতে শুস্ক মৌসুমে পানি সংকট ও বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে। সেতুর কাজ সঠিক সময়ে শেষ হলে চার গ্রামের মানুষের অনেক সুবিধা হতো। এতে পণ্যবাহী ছোট ছোট যানবাহনগুলো সহজেই চলাচল করতে পারতো।
এবিষয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের পক্ষে প্রতিনিধি ইকবাল মাহামুদ বলেন, এরমধ্যে সেতুর মূল কাজ শেষ করা হয়েছে। এখন সেতুর পাটাতন করতে হবে। শ্রমিক সংকটের কারণে সেতু নির্মাণ কাজ শেষ করতে দেরি হচ্ছে। দ্রুত সেতুর বাকি কাজ শেষ করা হবে। এজন্য ২০২৪ সালের ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত সময় নেওয়া হয়েছে।
এবিষয়ে এলজিইডির দশমিনা উপজেলা কার্যালয়ের প্রকৌশলী মো. মকবুল হোসেন বলেন, সেতু নির্মাণ কাজের ৭০ শতাংশ কাজ শেষ করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি কাজ বন্ধ রেখেছে। সেতু নির্মাণের জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজের সময় বাড়িয়ে নিয়েছে। তবে দ্রুত ঠিকাদার কাজ শেষ করবেন বলে তাদের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
নয়া শতাব্দী/এসআর
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ