ঢাকা, শুক্রবার, ১০ জানুয়ারি ২০২৫, ২৬ পৌষ ১৪৩১, ৯ রজব ১৪৪৬

জীবন বাঁচাতে ‘মুচির কাজ’ করছেন অসহায় ববিতা

প্রকাশনার সময়: ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৬:২৬ | আপডেট: ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৯:২২

অভাব-অনটনের কারণে বাবার ইচ্ছায় অল্প বয়সেই বিয়ের পিঁড়িতে বসেন ববিতা রানী দাস। বিয়ের পর সংসারে আসে ফুটফুটে দুই সন্তান। স্বামীর নানান ধরনের অত্যাচারে ৮ বছর আগে সংসার ত্যাগ করে চলেন আসেন। পরে ঠাঁই হয় বাবার সংসারে।

জামালপুরের মাদারগঞ্জের কড়ইচূড়া ইউনিয়নের বড়ভাংবাড়ি গ্রামের বাসিন্দা ববিতার ভিটেমাটিসহ কোনো সহায়-সম্বল নেই। দুই সন্তানের মুখে দুমুঠো ভাত তুলে দিতে রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে চলছে তার জীবন সংগ্রাম।

দিনের পর দিন অনেক কষ্টে জীবন চললেও স্বামী পরিত্যক্তা এই নারীর ভাগ্যে জোটেনি কোনো সহায়তা। ঠাঁই হয়নি সরকারি কোনো আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরে। নিজে ও সন্তানদের মুখে দুমুঠো ভাতের জন্য বেছে নিয়েছেন বাবার শেখানো মুচির পেশা। ফুটপাতে বসে মানুষের জুতা সেলাইয়ের কাজ করেন তিনি।

এরই মধ্যে ববিতার শরীরে বাসা বেধেছে নানান রোগ। টাকার অভাবে হচ্ছে না চিকিৎসা। দুবেলা পেটে ভাত জুটানোই যেখানে দায়, সেখানে চিকিৎসা করাবেন কীভাবে! নিজের এলাকায় অনেক বিত্তবান ও রাজনৈতিক ব্যক্তি থাকলেও তার খোঁজ নেওয়ার মতো কেউ নেই। কিছুদিন আগে অসুস্থতা বাড়লে হাসপাতালে ১৫ দিন ভর্তি ছিলেন। কিন্তু কেউ তার খোঁজ নেয়নি।

নিজের দুর্দশার কথা তুলে ধরে ববিতা রানী বলেন, স্বামীর অত্যাচার ও খোঁজ না নেওয়ার ফলে সংসার ছাড়তে বাধ্য হয়েছি। পরে বাবার মৃত্যুর বাড়িতে ঠাঁই হয়। কয়েক বছর আগে বাবা মারা গেলে পেটের দায়ে বাধ্য হয়ে এ পেশায় এসেছি। অবুঝ দুই সন্তান নিয়ে খুবই অসহায় অবস্থায় আছি। ভাঙা ঘরে দুটি শিশু বাচ্চা নিয়ে থাকতে খুব কষ্ট হচ্ছে। এলাকার বিত্তবানরা একটু সহযোগিতা করলে অনেক উপকার হয়। বাবার বাড়িতে বোঝা হয়ে থাকতে চাই না।

তিনি আরও বলেন, নারী হয়ে ফুটপাতে বসে অন্যের জুতা মেরামত করি বলে অনেকে আমার কাছে আসেন না। তাই আমি কম টাকায় জুতা সেলাইয়ের কাজটি নিপুণভাবে করে দিই। রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে যা আয় হয়, তা দিয়ে ঠিকমতো সংসার চলে না।

সংগ্রামী এই নারী জানান, অনেক সময় অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটলেও তার ভাগ্যে আজও জোটেনি কোনো সরকারি সহায়তা।

স্থানীয় কীটনাশক ব্যবসায়ী সালাউদ্দিন শাহীন বলেন, সবক্ষেত্রে নারীদের অংশগ্রহণ থাকলেও মুচির কাজে তাদের খুব একটা দেখা যায় না। এক্ষেত্রে ব্যতিক্রমী ববিতা। তার কষ্টে আমাদের খারাপ লাগে।

মাদারগঞ্জ প্রাথমিক শিক্ষক ঐক্য পরিষদের সভাপতি ওমর ফারুক পলাশ বলেন, দেশের এই পর্যায়ে এসেও ববিতা রানী অভাবের তাড়নায় জুতা সেলাইয়ের কাজ করছেন। এটি বেদনাদায়ক বলে আমি মনে করি। রাষ্ট্রসহ সমাজের বিত্তবানরা ববিতার পাশে দাঁড়াবে এটাই প্রত্যাশা করি।

উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. তৌফিকুল ইসলাম খালেক বলেন, ববিতা রানীর বিষয়টি আমাদের জানা ছিল না। আপনাদের মাধ্যমে আমরা জানলাম। স্বামী পরিত্যক্তা ভাতাসহ ববিতা রানীর জন্য চিকিৎসা ও অন্যান্য আর্থিক সুবিধা প্রদান করা হবে।

নয়া শতাব্দী/এসএ

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ