ঢাকা, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

স্ত্রীসহ কারাগারে ‘ইয়াবা সম্রাট’ শাহজাহান 

প্রকাশনার সময়: ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৪:১৭

কক্সবাজার শহরের আলোচিত ইয়াবা সম্রাট শাহজাহান আনসারী ও তার স্ত্রী জিগারুন্নেছা জিনিয়াকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা মামলার শুনানি শেষে জামিন না মঞ্জুর করে কক্সবাজারের সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতের বিচারক মো. শাহীন উদ্দিন তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

মঙ্গলবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে দীর্ঘ শুনানি শেষে এ নির্দেশ দেন আদালত।

কক্সবাজার দুর্নীতি দমন কমিশনের পিপি এডভোকেট আবদুর রহিম জানান, দুদকের মামলা নাম্বার ২ এবং ৩ এর আসামি শাহজাহান আনচারী এবং তার স্ত্রী জিগারুন্নেছা জিনিয়াকে জামিন না মঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছে স্পেশাল জজ মো. শাহীন উদ্দিনের আদালত।

জানা যায়, গত বছরের ২০ ডিসেম্বর তাদের বিরুদ্ধে দুদক আইনে এজাহার দায়েরের জন্য কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ এবং মামলার পর এজাহারকারী কর্মকর্তা বাদে অন্য কর্মকর্তাকে তদন্তকারী কর্মকর্তা নিয়োগ দিয়ে এজাহারের কপি, তদন্তকারী ও তদারককারী কর্মকর্তা নিয়োগের পত্র পাঠানোর জন্য কক্সবাজার কার্যালয়ের উপ-পরিচালককে নির্দেশ দেয় কমিশন। পরে সে অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক। শাহজাহান ও তার স্ত্রী জিগারুন্নেছার বিরুদ্ধে পৃথক দুটি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে শাহজাহানকে উভয় মামলায় আসামি করা হলেও স্ত্রীকে একটিতে অভিযুক্ত করা হয়েছে।

এজাহারে বলা হয়েছে, দুদকের অনুসন্ধানকালে সংগৃহীত নথিপত্র পর্যালোচনা করে দেখা গেছে- শাহজাহানের মোট সম্পদ ৩ কোটি ৪২ লাখ ৩৮ হাজার ১৫৭ টাকা। এর মধ্যে জ্ঞাত আয়ের সঙ্গে অসংগতিপূর্ণ সম্পদের পরিমাণ ২ কোটি ৯৪ লাখ ১২ হাজার ৪৮০ টাকা। পাশাপাশি স্ত্রী জিগারুন্নেছার মোট সম্পদ ৮৮ লাখ ১০ হাজার ৮৯০ টাকা। এর মধ্যে জ্ঞাত আয়ের সঙ্গে অসংগতিপূর্ণ সম্পদ ৮৫ লাখ ১৫ হাজার ৬২৫ টাকার।

অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, জাতির কাছে ক্ষমা চেয়ে ২০১৯ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি আত্মসমর্পণ করেছিলেন ইয়াবা সম্রাট শাহজাহান আনসারী। কালের আবর্তে পরিস্থিতি বদলে গেলেও ফের জামিনে বের হয়ে আসে এই ইয়াবা গডফাদার। বন্দুকযুদ্ধে নিহত দেশের শীর্ষ ইয়াবা মাফিয়া হাজী সাইফুলের ডানহাত খ্যাত শাহজাহান আনসারীর আগেরকার সমস্ত ইয়াবা কারবারিদের সাথে যোগাযোগ করে নতুন করে নব উদ্যোমে সারাদেশে পাচার করে যাচ্ছে কোটি কোটি টাকার ইয়াবা। এমনকি সর্বশেষ পাওয়া তথ্য মতে, নিজেকে ব্যবসায়ী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে জোরপূর্বক হোটেল দখল নেওয়ার অভিযোগও উঠে তার বিরুদ্ধে।

ফুটবলার ও পরিবহন কর্মচারী হিসেবে ২০০৮ সাল পর্যন্ত জীবিকা নির্বাহ করে আসলেও ২০০৯ সালের মাঝামাঝি সময়ে তার ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের নিয়ে গড়ে তুলেন মাদক পাচারকারী এক সিন্ডিকেট। এরপর থেকে তাকে পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। কয়েক জনের এই সিন্ডিকেটে অন্যতম ছিলেন শাহাজাহান আনসারী। প্রধান নিয়ন্ত্রক হিসেবে কাজ করতেন বন্দুকযুদ্ধে নিহত হওয়া দেশের শীর্ষ ইয়াবা মাফিয়া হাজী সাইফুল করিম। সহযোগী ছিলেন তার ছোট ভাই আবু সুফিয়ান আনসারী। সিন্ডিকেটে ছিল- সাবেক পুলিশ সদস্য, আইনজীবি, স্থানীয় গ্রাম ডাক্তার ও বিকাশ দোকানদারসহ আরও অনেকে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন জানায়, মাদক কারবারিদের পুরনো অভ্যাস কখনো বদলাবে না। ইয়াবা বেচাকেনা অনেক লাভজনক। রাতারাতি বড়লোক হওয়া যায়। আত্মসমর্পণকারীদের বেশিরভাগই পুরনো কারবারে জড়িয়ে পড়ছে। তার ভাষ্যমতে, শাহজাহান আনসারীকে শেল্টার দিচ্ছে জেলা আ.লীগের প্রভাবশালী এক নেতা।

তারা আরও জানায়, তার মতো আত্মসমর্পণকারীরা ইয়াবা কারবারের পাশাপাশি অস্ত্রের ব্যবসাও করত। তারা অস্ত্র নিয়ে চলাফেরাও করে। এলাকার সাধারণ লোকজন ভয়ে তার সঙ্গে কথা বলে না।

২০১৯ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি টেকনাফ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের হাতে আত্মসমর্পণ করেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত ও আত্মস্বীকৃত ১০২ ইয়াবা কারবারি। তাদের মধ্যে অন্যতম শাহজাহান আনসারী। এর পরই শাহজাহান ও তার পারিবারিক সম্পদের অনুসন্ধান শুরু করে দুদক।

নয়াশতাব্দী/টিএ

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ