ঢাকা, শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

৬ বছর ধরে শিকলবন্দি মিলনের জীবন, নিরুপায় পরিবার

প্রকাশনার সময়: ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৩:৪০
দীর্ঘ ছয় বছর ধরে শিকলবন্দি ঠাকুরগাঁওয়ের মিলন হক। ছবি- রবিউল এহ্সান রিপন

দীর্ঘ ছয় বছর ধরে শিকলবন্দি জীবন যাপন করছেন ঠাকুরগাঁওয়ের মিলন হক। পায়ে শিকল আর ছোট ছাউনির ভেতরে পুরো দুনিয়ার স্বাদ পেতে হয় তাকে।

কথা ছিলো, পড়াশোনা করে চাকরি করে সংসারের হাল ধরবেন। কিন্তু ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস! প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গন্ডিই পেরোতে পারেননি মিলন। জীবনের ৩০টি বছর পার হলেও জীবনের কোনো মানে খুঁজে পাননি তিনি।

অপরিচিত জনের সঙ্গে আচরণ স্বাভাবিক হলেও, নিজের পরিবারের লোকদের সঙ্গে অস্বাভাবিক আচরণ করেন মিলন। অনেক সময় নানাভাবে বিড়ম্বনায় ফেলেন স্থানীয়দের। পরিবারে উপার্জনক্ষম কেউ না থাকায়, হচ্ছে না উন্নত চিকিৎসাও।

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার রুহিয়া ইউনিয়নের পূর্ব কুজিশহরে মফিজ উদ্দীন ও শাহেদা বেগম দম্পত্তির সন্তান মিলন হক। নয় বছর বয়সে গলায় টিউমার ধরা পড়ে মিলনের। চিকিৎসা নেওয়ার পর কিছুদিন সুস্থ থাকলেও, আবার শুরু হয় অসুস্থতা। ধীরে ধীরে বাড়তে শুরু করে এ অসুস্থতা।

এখন শিকলে বেঁধে না রাখলে, নানাভাবে মানুষকে হেনস্থায় ফেলেন মিলন। একদিকে স্বামীর অসুস্থতা, অন্যদিকে ছেলের শিকলবন্দি জীবন নিয়ে দুশ্চিন্তায় সময় পার করেন বৃদ্ধা শাহেদা বেগম। নিজের অসুস্থতা থাকা সত্ত্বেও বাধ্য হয়ে অন্যের বাড়িতে কাজ করেই জীবিকা নির্বাহ করছেন তিনি।

স্বামী ব্রেন স্ট্রোক করে প্যারালাইসড, ছেলের শেকলে বাঁধা জীবন। স্বামী-সন্তানের মুখের খাবার জোগাড় করবেন, নাকি চিকিৎসা করাবেন- এই দোটানার মাঝেই চলছে শাহেদা বেগমের জীবন। মানুষের বাসায় কাজ করে দু-মুঠো খাবারের ব্যবস্থাই ঠিকমতো করতে পারছেন না, তার ওপর চিকিৎসা! তাই তো স্বামী-সন্তানের এমন খারাপ অবস্থা দেখতে হচ্ছে তাকে। এখন সন্তানের চিকিৎসার জন্য মানুষের দুয়ারে দুয়ারে ঘুরছেন তিনি।

প্রতিবেশী আজহারুল ইসলাম বলেন, তাদের পরিবারটা চলতে পারছেনা। বাবা ব্রেন স্ট্রোক করে পড়ে আছে। ছেলেটাও শিকলে বন্দি। আমরা মাঝেমধ্যে টুকটাক সহযোগীতা করি। কিন্তু মিলনের প্রয়োজন উন্নত চিকিৎসা। তা না হলে পরিবারটির জন্য সামনে আরও কঠিন অবস্থা হয়ে দাঁড়াবে।

মিলনের মা শাহেদা বেগম বলেন, ভিটেমাটি ছাড়া আর কিছু নেই আমাদের। মিলনের বাপ অসুস্থ হয়ে বিছানায় পড়ে আছে। সুস্থ থাকলে উনি কাজে যেতে পারতেন। আমি একদিন গেলে আবার অসুস্থ হয়ে পড়ি। এখন মিলনের চিকিৎসা না হলে আমাদের পরিবারটা কিভাবে চলবে। যা ছিল সব শেষ হয়ে গেছে। এখন আমাদের পাশে কেউ না দাঁড়ালে আমাদের অস্তিত্ব থাকবে না।

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বেলায়েত হোসেন বলেন, বিষয়টি অবগত হলাম। এমন হলে আসলেই অনেক দুঃখজনক। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সার্বিক সহযোগিতা করা হবে।

নয়া শতাব্দী/এনএস

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ