বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাড. জয়নুল আবেদীন বলেছেন, গত ৭ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচন ছিল ডামি নির্বাচন। এই নির্বাচন সারা বাংলাদেশের মানুষ, সারা বিশ্বের মানুষ প্রত্যাখান করেছে। অত্যাচারী সরকার পৃথিবীর কোনো দেশেই টিকে থাকতে পারে নাই। এই সরকার যেহেতু অত্যাচারী হয়ে গিয়েছে এবং গত নির্বাচনে এক তরফাভাবে নির্বাচন করেছে আমরা মনে করি এই সরকারও বেশি দিন টিকতে পারবে না। এ সরকারকে উৎখাত করতে শীঘ্রই কঠিন কর্মসূচি আসছে। বিগত দিনে যে কর্মসূচি ছিল তার থেকে আরও কঠিন ও তীব্র কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।

সোমবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে নাশকতা ও ভাঙচুর মামলার গ্রেফতার হয়ে কাশিমপুর কারাগারে মৃত্যুবরণ করা কাওরাইদ ইউনিয়ন বিএনপির ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান খান হিরার বাড়ি ধামলাই গ্রামে এসে স্বজনদের সান্ত্বনা দিতে গিয়ে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।

জয়নুল আবেদীন বলেন, আমাদের নেতা তারেক রহমান কয়েক হাজার মাইল দূরে আছেন। সেখান থেকেও আপনাদের খবর নিয়েছেন। কোন জেলায় কে মারা গিয়েছেন। গাজীপুরে যে দুজন মারা গিয়েছেন সেটাও তার কাছে খবর আছে। এ ছাড়াও দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া বর্তমানে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছেন- সেই খোঁজ খবরও তিনি রাখছেন। সরকারের কাস্টডিতে যখন কোন লোক মারা যায় তখন সে দায়িত্ব হলো সরকারের। জেলখানায় যদি কেউ মারা যান সেই দায়িত্ব হলো সরকারের এবং জেল কর্তৃপক্ষের। তারা সেই দায়িত্ব পালন করতে ব্যর্থ হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, মার্কিন প্রতিনিধি এসে বিএনপির মহাসচির মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরীকে ডেকে নিয়ে অনেক ধরনের কথা বলেছেন। যা আমার পক্ষে এসব বিষয়ে বলা ঠিক হবে না। শুধু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রই নয়, পশ্চিমা দেশের যারা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে তারা সকলে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন দেখতে চেয়েছিল। কিন্ত সেই রকম নির্বাচন বাংলাদেশে হয়নি। যেহেতু বাংলাদেশে সেই রকম নির্বাচন হয়নি। বাংলাদেশের মানুষও দেখেছে যে ৯৫ ভাগ লোক ভোট দিতে যায়নি। কাজেই এই নির্বাচন পৃথিবীর কারো কাছেই গ্রহণযোগ্য নয়, বাংলাদেশের মানুষের কাছে তো মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়। কাজেই কর্মসূচি আসবে এবং বিগত দিনে যে কর্মসূচি ছিল তার থেকে তীব্র কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।

এরআগে, তিনি কারাগারে মৃত্যুবরণ করা আসাদুজ্জামান খান হিরার কবর জিয়ারত করেন। তিনি বিএনপি নেতা আসাদুজ্জামান হিরার মা হালিমা সুলতানা, স্ত্রী রাজিয়া সুলতানা, তিন ছেলে মেহেদি হাসান অনিক, জুনায়েদ হাসান অভি, রেদোয়ান হাসান রিজভীসহ পরিবারের অন্যান্য স্বজনদের সাথে কথা বলেন, সান্ত্বনা দেন এবং পাশে থাকার বিষয়ে আশ্বস্ত করেন।

এসময় উপস্থিত ছিলেন, কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ-স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক অধ্যাপক ডা. রফিকুল ইসলাম বাচ্চু, গাজীপুর জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শাহ রিয়াজুল হান্নান, কেন্দ্রীয় বিএনপির সদস্য ওমর ফারুক সাফিন, উপজেলা বিএনপির সভাপতি শাহজাহান ফকির ও সাধারণ সম্পাদক মো. আক্তারুল আলম মাস্টার, জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি মো. শফিকুল ইসলাম, শ্রীপুর পৌর বিএনপির পৌর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মারুফ শেখ, সাধারণ সম্পাদক বিল্লাল হোসেন বেপারী, শ্রীপুর উপজেলা বিএনপির যুগ্ম-সম্পাদক মশিউর রহমান টিটু, বিএনপি নেতা মোক্তারুল করিম শামীম মোড়ল, গাজীপুর জেলা কৃষকদলের আহ্বায়ক এসএম আবুল কালাম আজাদসহ বিএনপির অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।

উল্লেখ্য, গত বছরের ২৮ অক্টোবর ঢাকায় বিএনপির মহাসমাবেশে গিয়েছিলেন হিরা খান। সমাবেশ থেকে ফেরার সময় সন্ধ্যায় শ্রীপুর রেলস্টেশন এলাকা থেকে আটক করে থানা পুলিশ। পরে শ্রীপুর থানার নাশকতা ও ভাঙচুর মামলার আসামি হিসেবে আদালতে উপস্থাপন করা হলে আদালত তাকে জেলহাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন। তারপর থেকে আদালতে একাধিকবার জামিন চেয়েও পাননি তিনি। ওই বছরের ১ ডিসেম্বর (শুক্রবার) কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি থাকাবস্থায় বুকে ব্যথা অনুভব করলে তাকে গাজীপুরের শহিদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে তাকে মৃত ঘোষণা করেন কর্তব্যরত চিকিৎসক।

নয়াশতাব্দী/এসএ