ঢাকা, শুক্রবার, ১০ জানুয়ারি ২০২৫, ২৬ পৌষ ১৪৩১, ৯ রজব ১৪৪৬

আলোচিত শ্রমিক নেতা হত্যা, আট মাস পর অভিযোগপত্র জমা 

প্রকাশনার সময়: ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৮:৩২

গাজীপুরের টঙ্গীতে আলোচিত শ্রমিক নেতা শহিদুল ইসলাম হত্যা মামলার অভিযোগপত্র আট মাস পর জমা দিয়েছে পুলিশ।

শনিবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) রাত ৮টার দিকে ১৪জনকে আসামি করে অনলাইনে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়।

অভিযোগপত্রে রয়েছেন- প্রিন্স জ্যাকার্ড সোয়েটার লিমিটেডের প্রশাসনিক ব্যবস্থাপক (এডমিন ম্যানেজার) এবং স্থানীয় এক প্রভাবশালী আমির হোসেন। এই দুইজনের ইশারাতেই শহিদুলকে হত্যা করা হয়েছে বলে পুলিশ অভিযোগপত্রে উল্লেখ করেছেন।

গাজীপুর শিল্প পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এডিশনাল এসপি) ও মামলার তদন্ত কমিটির প্রধান ইমরান আহম্মেদ অভিযোগপত্র জমা দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা ১৪ আসামিরা হলেন- মাজাহারুল ইসলাম (৩৫), আকাশ আহম্মেদ ওরফে বাবুল (৪৩), রাসেল মন্ডল (৩৫), রাইতুল ইসলাম ওরফে রাতুল (১৯), সোহেল রানা (২৩), জুলহাস আলী (২৩), সোহেল হাসান সোহাগ (২৬), শাহীনুল ইসলাম (২১), শাকিল মোল্লা (২৩), আমির হোসেন (৪০), হালিম মিয়া (৪২), রফিকুল ইসলাম (৪৬), জুয়েল মিয়া (২২) ও আবু সালেহ (৩৯)।

গত বছরের ২৫ জুন টঙ্গীর সাতাইশ বাগানবাড়ী এলাকায় ‘প্রিন্স জ্যাকার্ড সোয়েটার লিমিটেড’ কারখানায় শ্রমিকদের পাওনা টাকা আদায়ে কাজ করতে গিয়ে নিহত হন শহিদুল ইসলাম। তিনি বাংলাদেশ গার্মেন্টস অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল শ্রমিক ফেডারেশনের গাজীপুর জেলা শাখার সভাপতি ছিলেন।

এ ঘটনায় ২৬ জুন টঙ্গী পশ্চিম থানায় ছয়জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত সাতজনের বিরুদ্ধে সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সভাপতি কল্পনা আক্তার মামলা করেন। প্রাথমিক অবস্থায় মামলার তদন্ত করছিল টঙ্গী পশ্চিম থানা-পুলিশ। পরবর্তী সময়ে ৬ জুলাই মামলার তদন্তভার পায় জেলা শিল্প পুলিশ।

আসামি আমির হোসেন টঙ্গীর সাতাইশ এলাকার প্রভাবশালী। তার বিক্রি করা জমিতেই গড়ে উঠেছে প্রিন্স জ্যাকার্ড সোয়েটার কারখানা। সেই হিসেবে আমির হোসেন ওই কারখানায় ঝুট ব্যবসা করতেন।

অভিযোগ পত্রে বলা হয়, গত বছরের মে ও জুন মাসের বেতন এবং ঈদ বোনাসকে কেন্দ্র করে ২৫ জুন দুপুর থেকে প্রিন্স জ্যাকার্ড কারখানায় শ্রমিক অসন্তোষ দেখা দেয়। খবর পেয়ে ওইদিন বিকেলে শ্রমিকদের বেতন আদায় করে দিতে কারখানায় যান শহিদুল, মোস্তফা, আক্কাছ ও শরিফ। বেতন ভাতার বিষয়ে কথা বলে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে কারখানা থেকে বের হন শহিদুলসহ তার তিন সহযোগী। এ সময় স্থানীয় প্রভাবশালী আমির হোসেন ও কারখানার প্রশাসনিক ব্যবস্থাপক (এডমিন ম্যানেজার) আবু সালেহর ইশারায় মাজাহারুলরা শহিদুলকে হামলা করে মারধর করেন। পরে স্থানীয় একটি হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে শহিদুলের মৃত্যু হয়।

অভিযোগ পত্র ও মামলার তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শ্রমিক নেতা শহিদুল ইসলাম বিভিন্ন কারখানার শ্রমিকদের বেতনের সমস্যা নিয়ে কাজ করতেন। তার সঙ্গে কাজ করতেন মোস্তফা, আক্কাছ ও শরিফসহ আরো তিন শ্রমিক নেতা। বিভিন্ন কারখানায় কমিটি দেওয়াকে কেন্দ্র করে তাদের সঙ্গে শ্রমিক নেতা মাহাজারুল ও রাসেল মন্ডলদের বিরোধ হয়। শহিদুলের নেতৃত্বে তার সহযোগীরা কাজ করতেন। গাজীপুর মহানগরীর গাছা থানা এবং মাজাহারুলের নেতৃত্বে তার সহযোগীরা কাজ করতেন টঙ্গীর সাতাইশ এলাকার বিভিন্ন কারখানায়। ঘটনার দিন ২৫ জুন শহিদুল ও তার সহেযাগীরা হঠাৎ করেই বেতন ভাতার সমস্যা সমাধান করতে টঙ্গীর সাতাইশের প্রিন্স জ্যাকার্ড কারখানায় ঢুকে পড়েন। বিষয়টি ভালোভাবে নেননি মাজাহারুল ও তার লোকজন।

মামলার বাদী কল্পনা আক্তার বলেন, প্রশাসনিক ব্যবস্থাপক (অ্যাডমিন ম্যানেজার) জড়িত থাকলে কারখানার মালিক জড়িত থাকে না কীভাবে! আসামি আমির হোসেন ও হালিম মিয়া প্রভাবশালী জমি ব্যবসায়ী কামরুলের লোক। কামরুলের নির্দেশেই তারা কাজ করত। কিন্তু অভিযোগপত্রে কামরুল বা কারখানার মালিকের নাম নেই। আমরা এ বিষয়ে আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলে পরবর্তী ব্যবস্থা নেবো।

শহীদুলের স্ত্রী জানায়, তার স্বামী শহীদুল কারখানায় গিয়েছিল শ্রমিকদের দাবি ও পাওনা আদায়ে মালিকপক্ষের লোকজনের সাথে কথা বলার জন্য। সেখানে শহীদুলের কোনো শত্রু নেই। কারখানা মালিকের একজন লোক রয়েছে, যার নাম হানিফ। তিনি নিজে ঘটনাস্থলে থেকে তার স্বামী শহীদুলকে হত্যা করিয়েছে। পরে পুলিশ হালিম নামে একজন বয়ষ্ক ব্যাক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে। তাহলে যেই হানিফ আমার স্বামীকে হত্যা করিয়েছে, সেই হানিফ কোথায় গেল? আমার কাছে এ প্রশ্নগুলো শুধু ঘুরপাক খায়।

তিনি বলেন, আমি জীবনে আর আমার স্বামী পাবো না, আমার বাচ্চারা আর তাদের বাবা পাবে না। আমার স্বামীকে কারা মারছে, কেন মারছে, কার ইন্ধনে মারছে? আমার স্বামীকে ইন্ধন ছাড়া মারেনি। আমি চাই সঠিক তদন্ত হোক। নামের সাথে মিল তৈরী করে প্রকৃত আসামিকে যেন লুকানোর চেষ্টা করা না হয়।

নিহত শহীদুল ইসলামের ছেলে উচ্চ মাধ্যমিক প্রথম বর্ষের ছাত্র সাদিকুল ইসলাম অপূর্ব জানান, তার বাবার প্রকৃত হত্যাকারীরা যেন আইনের ফাঁক-ফোকর থেকে বেরিয়ে যেতে না পারে। তারা যেন সুষ্ঠু বিচারের মাধ্যমে আইনের দ্বারা দন্ডিত হয়।

মামলার তদন্ত কমিটির সভাপতি ও গাজীপুর শিল্প পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এডিশনাল এসপি) ইমরান আহম্মেদ বলেন, মামলাটি বিভিন্ন কারণে গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর ছিল। তদন্ত ও সাক্ষ্য প্রমাণে স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী আমির হোসেন ও কারখানার কর্মকর্তা আবু সালেহর নাম উঠে এসেছে। মূলত তাদের ইশারা-ইঙ্গিতেই অন্য আসামিরা শহিদুলের ওপর হামলা চালিয়েছে। সবকিছু পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে যাচাই-বাছাই করেই অভিযোগপত্র দায়ের করেছি।

নয়াশতাব্দী/টিএ

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ