আধুনিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির যুগেও দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে ঘরবাড়ি কালবৈশাখী ঝড়বৃষ্টি ও তুফান থেকে রক্ষা করতে হিরালির ঝাড়ফুঁকের উপর নির্ভর করে চলছে গ্রামীণ জীবন।
হিরালিরা তন্ত্রমন্ত্র ও শিঙ্গায় ফুঁ দিয়ে ঝড়-তুফান ও বৃষ্টির দেবতাদের হাত থেকে কাঁচা ঘরবাড়ি রক্ষা করতে পারে।
এই বিশ্বাস ও আস্থায় গ্রামের লোকজন মাঘ-ফাল্গুন মাসেই হিরালিদের কাছে ছুটে যেতেন। সামনে কালবৈশাখী
ঝড়বৃষ্টির দিন। তাই আগেই ঝড়বৃষ্টির দেবতাদের সন্তুষ্ট করে হিরালিদের ঝাড়ফুঁকে নিজেদের ঘর বন্ধ করে
রাখে।হিরালিরা কাঁধে একটি শিঙা আর হাতে লোহার একটি কাঠি। শুধু তাই নয়! মাথায় লম্বা চুল, পরনে রয়েছে লাল
জামা-কাপড়। ঘরের চালায় কাঠি দিয়ে নাড়া দিচ্ছেন আর মন্ত্র পড়ছেন। তারপর শিঙায় ফুঁ দিচ্ছেন। এই বাসস্থানে
আর ঝড়-তুফান লাগবে না৷ মানুষের এমন অন্ধ বিশ্বাসকে পুঁজি করেই গ্রামে গ্রামে ঘুরে বেড়াচ্ছেন হিরালিরা।কিশোরগঞ্জের হোসেনপুরে এমনই এক হিরালির দেখা মিললো ধুলজুরি গ্রামে। তার নাম দিলীপ দেবনাথ। বাড়ি
ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলায়। গত কয়েকদিন যাবৎ তিনি হোসেনপুর উপজেলায় বসবাস করছেন।
গ্রামে ঘুরে ঘরে মন্ত্রপাঠ করছেন। গ্রামবাসীও তার এসব মন্ত্রপাঠকে বিশ্বাস করে চাল, ডাল, টাকা
দিচ্ছেন। চাল, ডাল, টাকা নিয়েই চলছে হিরালির জীবন।জানা যায়, মাঘ-ফাল্গুন মাস এলেই ডাক পড়ে হিরালির। হাওরে অসময়ে ঝড়বৃষ্টি ও প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের হাত
থেকে ফসল রক্ষা করার জন্য ‘হিরালি’ নামে লোকপ্রথার প্রচলন ছিল। হাওরের কৃষকেরা এসব তন্ত্রসাধকদের
আমন্ত্রণ জানিয়ে নিয়ে আসতো। এই তন্ত্রসাধকেরাই ‘হিরাল’ ও ‘হিরালি’ নামেও পরিচিত। তারা এসে মন্ত্রপাঠ
করে ঝড়বৃষ্টি থামানোর জন্য চেষ্টা করতেন। লোকায়ত বিশ্বাস থেকে আগেকার মানুষজন এমন প্রথা পালন
করতেন। অবশ্য ধীরে ধীরে এ প্রথার বিলোপ ঘটলেও কিছু কিছু এলাকায় এখনও এ বিশ্বাস রয়েছে।সাধারণত গ্রামাঞ্চলের বেশিরভাগ ঘর বাশেঁর খুঁটি, টিন আর কাঠ দিয়ে প্রস্তুত করা হয়। এতে ঝড়-তুফানে এসব বাড়িঘর ভেঙে যাওয়ার সম্ভবনা থাকে। হিরালি দড়িতে মন্ত্র পড়ে সে দড়ি ঘরের চালায় বাঁধলে, সে ঘরে ঝড়-তুফানে লাগবে না। এমন বিশ্বাস নিয়ে হিরালির কাছে আসা মহিলা রুবিয়া জানান, জন্মের পর থেকেই দেখছি হিরালি এসে শিঙায় ফুঁ দেয় আর দড়ি পড়ে দিলে ঘরে ঝড়-তুফান লাগে না। এজন্যই দড়ি নিয়ে এসেছি।
এ ব্যাপারে ধর্মীয় আলোচক হাফেজ মাওলানা মাহমুদুল হাসান জানান, এটি সম্পূর্ণ একটি ভুল ধারণা। ঝড়বৃষ্টি দেওয়ার মালিক আল্লাহ। ক্ষয়ক্ষতি থেকে রক্ষা করার মালিকও আল্লাহ।
নয়াশতাব্দী/টিএ
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ