ঢাকা, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
বোরো ফসল রক্ষা বাঁধ

বৃষ্টিতে বাঁধে ফাটল, নির্মাণ কাজে অনিয়মের অভিযোগ

প্রকাশনার সময়: ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৬:০৫

সুনামগঞ্জে দুই-তিন দিন থেমে থেমে বৃষ্টি হওয়ায় জেলার বিভিন্ন হাওড়ের ফসল রক্ষা বাঁধে ফাটল ধরেছে। এছাড়া বৃষ্টির ফলে বাঁধের কোথাও কোথাও মাটি দেবে গেছে। বাঁধের কাজ নীতিমালা অনুযায়ী না করার কারণেই সামান্য বৃষ্টিতে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন কৃষক ও ‘হাওড় বাঁচাও’ আন্দোলনের নেতারা।

‘হাওড় বাঁচাও’ আন্দোলনের নেতারা বলছেন, অধিকাংশ বাঁধে এখনও মাটি ফেলার কাজ শেষ হয়নি, নীতিমালা অনুযায়ী সময়সীমা রয়েছে মাত্র ২ দিন। এই দুই দিনে শতভাগ কাজ শেষ কোনোভাবে সম্ভব নয়। আর সময়মতো বাঁধের নির্মাণ কাজ শেষ না করার কারণে আগাম পাহাড়ি ঢল নামলে সুনামগঞ্জের বোরো ফসল হুমকির মধ্যে পড়বে।

জেলার জগন্নাথপুর উপজেলার নলুয়ার হাওড়ের দাসনওয়াগাঁও থেকে হালেয়া প্রকল্পের কিছু কিছু অংশে ফাটল ধরেছে। এছাড়া, শান্তিগঞ্জ উপজেলার দেখার হাওড় ও বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার খরচার হাওড়ের ৮টি বাঁধে ফাটল দেখা দিয়েছে। এদিকে তাহিরপুর উপজেলার ২টি বাঁধে ফাটল ধরার খবর পাওয়া গেছে। তবে এসব বাঁধ পুনরায় মেরামত শুরু করেছেন পিআইসিরা। অল্প বৃষ্টিতে বাঁধে ফাটল ধরায় উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন স্থানীয় কৃষকরা।

আগাম বন্যা বা পাহাড়ি ঢলের হাত থেকে সুনামগঞ্জের ফসল রক্ষার জন্য সরকারিভাবে হাওড়ে নির্মাণ করা হয় ফসলরক্ষা বাঁধ। এবার সুনামগঞ্জের ১২টি উপজেলার বিভিন্ন হাওড়ে ফসল রক্ষার জন্য ৭৩৪টি প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি (পিআইসি) গঠন করা হয়েছে। যার মধ্যে ৭৩৪টি অংশে ৫৯১ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণ ও সংস্কারের জন্য ১২৫ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে সরকার। নীতিমালা অনুযায়ী এসব বাঁধের নির্মাণ কাজ ২৮ ফেব্রুয়ারি মধ্যে আবশ্যিকভাবে শেষ করার কথা। তবে, এখন পর্যন্ত অধিকাংশ বাঁধের নির্মাণ কাজ বাকি রয়েছে।

বাঁধের কাজের মান ভালো না হওয়ার অভিযোগ করে খরচার হাওরের কৃষক সাজ্জাদ হোসেন বলেন, খরচার হাওড়ে বাঁধের যে কাজ করা হয়েছে তা পাহাড়ি ঢল আসলে টিকবে না। দুই দিনের বৃষ্টিতেই বাঁধের অবস্থা কাহিল। জানি না এবার কোন বিপদে পড়ি আমরা।

তাহিরপুর উপজেলার মহালিয়া হাওড়ের কৃষক ফজলুল হক বলেন, সময়সীমা শেষ পর্যায়ে কিন্তু কাজ শেষের কোনো খবর নাই, বৃষ্টি শুরু হয়েছে, দ্রুত কাজ শেষ না করলে বাঁধ মজবুত হবে না। এতে ফসলহানি হওয়ার ঝুঁকি থাকবে।

সদর উপজেলার কৃষক সাইদুর আলম বলেন, বৃষ্টি আমাদের মনে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। বাঁধের কাজ শেষ হওয়ার আর মাত্র চার দিন বাকি আছে। এর মধ্যেই অল্প বৃষ্টিতে বাঁধে ফাটল দেখা দিয়েছে। বন্যা হলে এই দুর্বল বাঁধ ভেঙে আমাদের সব ধান ভাসিয়ে নিয়ে যাবে। বাঁধের ওপর কোনো বিশ্বাস নেই। আমরা সবকিছু এখন আল্লাহর ওপর ছেড়ে দিয়েছি।

জগন্নাথপুর উপজেলার নলুয়ার হাওড়ের কৃষক সুলেমান হোসেন বলেন, আমরা সাধারণ কৃষক। আমাদের কথা রেকর্ড কইরা নিলে কী কেউ শুনবো। এবার কতো টাকা হাওলাত করে হাওড়ে ধান চাষ করছি। এখন যদি বাঁধের সঠিক কাজের অভাবে হাওড় ডুবে টাকা ফিরত দিবো কিভাবে, সারাবছর খাবো কিভাবে। বাঁধের কাজে গাফিলতি বন্ধ না হলে কৃষক বাঁচা কঠিন হয়ে যাবে। আমি সরকারের কাছে অনুরোধ জানাই যাতে বাঁধের কাজ সঠিকভাবে শেষ হয়।’

হাওড় বাঁচাও আন্দোলন-এর কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সালেহিন চৌধুরী শুভ বলেন, ‘বাঁধের কাজ শুরু থেকেই আমরা অনিয়ম দেখতে পাচ্ছি। বারবার কর্তৃপক্ষকে জানিয়েও আসছি। কিন্তু অবস্থার পরিবর্তন হয়নি। আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে ফসল রক্ষা বাঁধের কাজ শেষ করার কথা। হাওড়ের অধিকাংশ বাঁধের কাজ এখনও সম্পন্ন হয়নি। সরকারের নীতিমালা অনুযায়ী অধিকাংশ বাঁধের কাজ হয়নি। অগ্রগতিও সন্তোষজনক নয়। সম্প্রতি অল্প বৃষ্টিতে অনেকগুলো বাঁধে ফাটল দেখা দেওয়ায় আমরা চিন্তিত। অধিকাংশ বাঁধেই দায়সারাভাবে কাজ করা হয়েছে।

সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী-১ মামুন হাওলাদার বলেন, বৃষ্টি হওয়ার কারণে বাঁধে রেইন কাট হয়েছে। ফাটল দেখা দেয়নি কোথাও, বাঁধ টেকসই আছে। কিছু কিছু জায়গায় বৃষ্টির পানি প্রবাহিত হওয়ার কারণে রেইন কাট হয়েছে। আমাদের পিআইসিদের নির্দেশনা দেওয়া আছে। বৃষ্টি না থাকায় তারা ইতোমধ্যে বাঁধের রিপিয়ারিং কাজ শুরু করেছেন।

নয়া শতাব্দী/এসএ

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ