ঢাকা, শুক্রবার, ১০ জানুয়ারি ২০২৫, ২৬ পৌষ ১৪৩১, ৯ রজব ১৪৪৬

পরীক্ষার মধ্যেই চলছে ওরশের নামে অশ্লীল নৃত্য

প্রকাশনার সময়: ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৯:৩৬

সারাদেশে চলছে এসএসসি পরীক্ষা। এর মাঝেই ফরিদপুরের সালথায় শুরু হয়েছে হযরত শাহ সুফি মওলানা খাজা মদন হাজী আল কাদরি আল চিশতি (র:) এর ১৩৭ তম ওরশ শরীফ। তবে অতীতের সব রেকর্ড ভেঙ্গে এবছর ওরশে চলছে অশ্লীল নৃত্যের রমরমা ব্যবসা। পাশাপাশি থেমে থেমে চলে মাদক ও জুয়ার আসর।

শনিবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) থেকে শুরু হয়ে গভীর রাত পর্যন্ত চলছে তিনদিন ব্যাপী এই ওরস। এটি প্রতি বছর হাজী বাড়ির আঙ্গিনায় অনুষ্ঠিত হয়।

মেলায় খাদ্য সামগ্রি থেকে শুরু করে ঘর সাজানোর আসবাবপত্র, কসমেটিকসহ নানা রকম জিনিসপত্র পাওয়া যায়। তবে অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে মেলা কমিটি এবছর পুতুল নাচ বা ভূতের ঘরের শো নামে এক অশ্লীল নৃত্যের ব্যবস্থা করেছে। সেখানে ৫০/১০০ টাকা নিয়ে আধা ঘণ্টা থেকে ঘণ্টাব্যাপী শো চলে। বিভিন্ন শো এর ফাঁকে ফাঁকে যুবতীদের দিয়ে করানো হয় অশ্লীল নৃত্য। উচ্চ শব্দে গান বাজিয়ে চলে এই নৃত্য। যা দেখতে বাচ্চা থেকে বুড়ো সবাই ভিড় করে।

খোলামেলা পোশাক আর অশ্লীল অঙ্গভঙ্গির এই শো এবং উচ্চ শব্দে মেলার মাইক চালানোর কারণে এসএসসি পরিক্ষার্থীসহ স্থানীয় শিক্ষার্থীদের সমস্যা হচ্ছে। অনেকেই আবার গোপনে শো দেখতে ভিড় করছে। মেলার আশেপাশে থেমে থেমে চলে জুয়া ও মাদকের আসর। পুলিশ উপস্থিতিতে সাময়িক বন্ধ থাকলেও, চলে গেলে আবারও জমে ওঠে এই আসর।

স্থানীয় মুরব্বী আবুল বাসার মোল্যা জানান, অতীতে এই মেলায় এমন অশ্লীল কাজকর্ম করার সাহস কেউ করেনি। এই অশ্লীলতার জন্য হাজী বাড়ির ইতিহাস ঐতিহ্য নষ্ট হচ্ছে। উচ্চ শব্দে মাইক চালানোর কারণে শব্দ দূষন হচ্ছে। এই পুতুল নাচের কারণে আমাদের উঠতি বয়সের সন্তানেরা অশ্লীলতা ও ইভটিজিং এর মত নষ্টামির দিকে ধাবিত হবে। তাছাড়া জুয়া ও মাদকের কারণে যুবসমাজ নষ্ট হচ্ছে। আমি এসব অশ্লীলতাসহ ওরশকে ঘিরে সকল অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড বন্ধের আহবান জানাই।

হযরত শাহ সুফি মওলানা খাজা মদন হাজী আল কাদরি আল চিশতি (র:) এর বংশধর শাহ কামাল উদ্দিন বলেন, আমরা থানাসহ সব জায়গায় বলেছি, ওরশ উপলক্ষে কোনো অশ্লীল নৃত্য বা বেআইনি কাজ চলবে না। যদি কেউ মাদক বা জুয়ায় জড়িয়ে পড়ে, তাহলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মেলায় খাজনা বাবদ কিছু খরচ নেওয়া হয়। খরচ মিটিয়ে আমরা কিছু অর্থ নেই।

মাঝারদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আফছার মাতুব্বর বলেন, মেলার আশেপাশের স্থানীয় লোকজন বেশি ভাল না। তাই আমরা ঐ মেলায় যাই না। তবে মেলায় অনেক কিছুই হচ্ছে, আমি জানতে পেরেছি। আমি চাই সকল খারাপ কাজ বন্ধ হোক।

স্থানীয় ইউপি সদস্য উপজেলা কৃষকলীগ নেতা নুর আলম মাতুব্বর বলেন, মেলা ঘিরে জুয়া ও মাদকের ছড়াছড়ি। তাছাড়া টিন দিয়ে ঘিরে মেলায় যে অশ্লীল নৃত্য হয়, তা মেনে নেওয়া যায় না। মাননীয় ডিসি, এসপি, ইউএনও, ওসি ও স্থানীয় সাংবাদিক সমাজসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে এই বেআইনি কাজ বন্ধে এলাকাবাসির পক্ষ থেকে অনুরোধ জানাই।

মেলা আয়োজক কমিটির অন্যতম সদস্য রাজু আহমেদ উজ্জল বলেন, অশ্লীল নৃত্যের বিষয়ে আমি কিছু জানি না। তবে শুক্রবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) মেলার পাশে জুয়ার আসর বসলে আমি উঠিয়ে দেই। মেলায় অশ্লীল কাজসহ যেকোনো বেআইনি কাজের বিপক্ষে আমি আছি।

আয়োজক কমিটির আরেক সদস্য কবির মোল্যা বলেন, মেলায় কোন অশ্লীল নৃত্য হয় না। এমনি জাদু দেখানো হয়। যদি কেউ ভুল করে থাকে, তাহলে তা বন্ধ করা হবে। তারপরেও যদি চলে, তাহলে প্রশাসন ও আমাদের জানাবেন।

সালথা থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, খবর পাওয়া মাত্রই নৃত্য বন্ধ করা হয়েছে। মেলা প্রাঙ্গণে সালথা থানা পুলিশের টিম দায়িত্ব পালন করছে। যেকোনো বেআইনি কাজ বন্ধে আমরা বদ্ধ পরিকর।

সালথা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আনিছুর রহমান বালী বলেন, তাদেরকে জেলা প্রশাসক থেকে অনুমতি সাপেক্ষে মেলা আয়োজন করতে বলা হয়েছে। অনুমতি না থাকলে মেলা বন্ধ করে দেওয়া হবে। মেলায় অশ্লীল বা বেআইনী কোন কিছু হলে আয়োজনকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

নয়াশতাব্দী/টিএ

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ