উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অমান্য করে টাঙ্গাইলে চলছে ১০ থেকে ১২ হাজার ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা। এ কাজের বৈধতা দিয়েছে টাঙ্গাইল পৌরসভা। এর মাধ্যেম কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন মেয়র, অভিযোগ স্থানীয়দের।
অপ্রতুল সড়ক ব্যবস্থা আর বিপুল সংখ্যক ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা চলাচলে শহরে যেমন বেড়েছে যানজট, তেমনি দেখা দিয়েছে চরম বৈদ্যুতিক সমস্যা। এতে অসহনীয় হয়ে উঠেছে শহরবাসীর জীবন। ব্যাটারি চালিত এসব অটোরিকশার লাইন্সেস পৌরসভার দেওয়ার এখতিয়ার নেই। অবৈধ এসব অটোরিকশা বন্ধের দাবি জানিয়েছেন জেলাবাসী।
জানা যায়, টাঙ্গাইল পৌরসভার লাইসেন্সপ্রাপ্ত অটোরিকশার সংখ্যা রয়েছেন প্রায় ৫ হাজার। কিন্ত টাঙ্গাইল শহরে প্রায় ১০ থেকে ১২ হাজার ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা চলাচল করছে। এই সবগুলো অবৈধ। এই রিকশাগুলোর পেছনে টাঙানো হয়েছে টাঙ্গাইল পৌরসভার লাইসেন্স। কয়েক দফা লাইসেন্সের মেয়াদ বাড়িয়ে বর্তমানে টাঙ্গাইল পৌরসভার মেয়র এসএম সিরাজুল হক আলমগীরের স্বাক্ষরিত লাইসেন্সের মেয়াদ ২০২৪ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত দেওয়া হয়েছে। অবৈধ এসব রিকশার কারণে শহরের প্রধান প্রধান সড়কের বেবীস্ট্যান্ড, শান্তিকুঞ্জ মোড়, মেইন রোড, নিরালা মোড়, পার্কবাজার মোড়, ক্যাপসুল মার্কেট, পুরাতন বাসস্ট্যান্ড, সুপারী বাগান মোড়, কলেজ গেইটে এবং নতুন বাস টার্মিনাল এলাকায় রীতিমত লেগে থাকছে যানজট। যানজট নিরসনে মোড়ে মোড়ে ট্রাফিক পুলিশ দায়িত্ব পালন করলেও হিমশিম খাচ্ছেন তারা। এতে চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন রোগী, শিশু, বৃদ্ধ, মহিলাসহ নানা বয়সী যাত্রী আর সাধারণ মানুষ।
১৮৮৭ সালের ১ জুলাই স্থাপিত হয় টাঙ্গাইল পৌরসভা। বর্তমান আয়তন ২৯.৪৩ বর্গ কিলোমিটার। ১৮টি ওয়ার্ডের প্রথম শ্রেণির এই পৌরসভার মোট সড়ক সংখ্যা ৫৯০টি। ২০১১ সালের আদমশুমারী অনুযায়ী এ পৌরসভার জনসংখ্যা ৩ লাখ ৯৬ হাজার।
ব্যাটারি চালিত অটোরিকশার চালকরা বলেন, পৌরভার কাছ থেকে প্রতি ব্যাটারি চালিত রিকশার জন্য ১৫ থেকে ২১ হাজার টাকা দিয়ে লাইসেন্স কিনেছেন। আবার কোনো কোনো প্রভাবশালী ও ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে মাসিক চুক্তিতেও লাইসেন্স ভাড়া নিয়েছেন। আবার প্রতিদিন ২০ টাকা করে চাঁদা দিতে হয়।
ব্যাটারি চালিত রিকশার চালক খন্দকার শাহীন বলেন, রিকশার গ্যারেজের ম্যানেজারের কাছ থেকে মাসিক ৭০০ টাকার চুক্তিতে লাইসেন্স ভাড়া করেছি। লাইসেন্স করতে পৌরসভার কর্তৃপক্ষ ১৫ হাজার টাকা দাবি করেন। এতো টাকা দিয়ে লাইসেন্স করার সামর্থ্য নেই।
চালক আমিনুল ইসলাম বলেন, ঋণ করে আমি ২১ হাজার টাকা দিয়ে লাইসেন্স কিনেছি। প্রতি বছর লাইসেন্সের জন্য নবায়ন করতে হয়। আবার আমাদের ড্রাইভিং লাইসেন্স পেতে ২০০ টাকা দিতে হয়েছে। নবায়ন না করলে রিকশা চালাতে দেয় না। লাইসেন্স না নিলে রিকশার সিট খুলে নেওয়া হয়। এতে আমরা বাধ্য হয়েই লাইসেন্স করেছি।
সাইফুল ইসলাম নামে আরেকজন চালক বলেন, পৌরসভার লাইসেন্স না থাকার কারণে আমার রিকশার সিট খুলে নিয়েছিলো। পরে আমি বাধ্য হয়েই পৌরসভার কাছ থেকে লাইসেন্স করেছি। রাস্তার তুলনায় শহরের রিকশার সংখ্যা অনেক বেশি।
সাধারণ জনগণ ও যাত্রীরা বলেন, সড়কের ধারণ ক্ষমতার চেয়ে অধিক সংখ্যাক রিকশা ও অটোরিকশা চলাচল করছে। এর ফলে প্রতিদিনই শহরের বিভিন্ন স্থানে যানজটের সৃষ্টি হয়। এতে আমাদের প্রতিনিয়তই ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। অতিদ্রুতই তারা অবৈধ এসব যানবহন বন্ধের দাবি করেন।
শিক্ষার্থীরা বলেন, যানজটের কারণে অনেক সময় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নির্ধারিত সময়ে উপস্থিত হতে পারি না। এতে শিক্ষককের কাছ থেকে আমাদের বকা শুনতে হয়। আমরা যানজট মুক্ত শহর চায়।
সুশীল সমাজের প্রতিনিধি ও টাঙ্গাইল ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক হারুন অর রশিদ বলেন, শহরে যে পরিমাণে রিকশা ও অটোরিকশা থাকার প্রয়োজন তার চেয়ে ১শ থেকে দেড়শ গুনে বেশি চলাচল করছে। দ্রুত গতিতে ব্যাটারি চালিত রিকশা চলাচল করার কারণে প্রতিনিয়তই দুর্ঘটনা ঘটছে। দ্রুতই এসব অবৈধ রিকশা ও অটোরিকশা বন্ধের দাবি করছি।
টাঙ্গাইল পৌরসভার মেয়র এসএম সিরাজুল হক আলমগীর বলেন, বাড়তি টাকার বিমিনয়ে আমরা কোনো লাইসেন্সের অনুমোদন দেইনি। আমি ব্যাটারি চালিত কোনো রিকশার অনুমোদনও দেইনি। শুধু প্যাডেল চালিত রিকশার অনুমোদন দিয়েছি। যানজট নিরসনের জন্য একমুখী করার পরিকল্পনা করছি।
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক কায়ছারুল ইসলাম বলেন, ব্যাটারি চালিত অটোরিকশার লাইসেন্স দেওয়ার এখতিয়ার কারও নেই। কেউই ব্যাটারি চালিত রিকশার লাইসেন্স দিতে পারে না। শহরের অবৈধ ব্যাটারি চালিত রিকশার ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
নয়াশতাব্দী/টিএ
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ