মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে জান্তা ও বিদ্রোহীদের মধ্যে চলমান সংঘাতের জেরে আবারও বিস্ফোরণের শব্দে কেঁপে উঠছে বাংলাদেশ সীমান্ত। তিন দিন বিরতির পর শুক্রবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) দুপুর থেকে আবারও শোনা যাচ্ছে বিস্ফোরণের শব্দ।
এর মধ্যে শুক্রবার বেলা ১১টা থেকে ১২টা পর্যন্ত টেকনাফের হোয়াইক্যং সীমান্তের নাফনদীর ওপারে টানা এক ঘণ্টা গোলাগুলির শব্দ শোনা যায়। অন্যদিকে বিকেল ৫টার দিকে পরপর তিনটি মর্টার শেলের বিস্ফোরণে বিকট শব্দে কেঁপে ওঠে টেকনাফের সাবরাং ইউনিয়নের শাহপরীর দ্বীপ।
সীমান্তের সংশ্লিষ্ট জনপ্রতিনিধি ও স্থায়ী বাসিন্দারা এসব তথ্য জানিয়েছেন।
হোয়াইক্যং ইউনিয়ন পরিষদের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মোহাম্মদ আলম বলেন, শুক্রবার জুমার নামাজের আগ পর্যন্ত থেমে থেমে খারাংখালী সীমান্তে গোলাগুলি শব্দ পাওয়া গেছে। ফলে সীমান্তের কাছাকাছি চিংড়ির খামারে থাকা লোকজন ভয়ে পালিয়ে এসেছেন। তবে আগের তুলনায় গোলার শব্দ অনেকটা কমে গেছে।
চিংড়ি ঘের মালিক শাহীন শাহজাহান বলেন, নাফনদীর ওপারে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী নবী হোসেনের গ্রুপের লোকজন সেখানে আত্মগোপনে রয়েছে। ধারণা করার হচ্ছে, শুক্রবার সকালে মিয়ানমারের ওপার থেকে যে গোলাগুলির শব্দ পাওয়া গেছে, সেগুলো তাদের মধ্যকার ঘটনা হতে পারে।
হোয়াইক্যং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুর আহমেদ আনোয়ারী বলেন, টানা কয়েকদিন শান্ত ছিল সীমান্ত। শুক্রবার দুপুরে খারাংখালী সীমান্তে নাফ নদীর ওপারে গোলাগুলি ও বিস্ফোরণের বিকট শব্দ শুনেছেন স্থানীয় লোকজন। তারা বিষয়টি আমাকে জানালে আমিও ইউএনও সাহেবকে অবহিত করেছি।
সাবরাং ইউনিয়ন পরিষদের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আব্দুস সালাম বলেন, সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারের রাখাইন থেকে গত টানা তিন দিন ধরে কোনো ধরনের গোলাগুলি ও বিস্ফোরণের শব্দ আর শোনা যায়নি। শুক্রবার বিকেল ৫টার দিকে নাফনদীর পূর্ব পাশের মিয়ানমারের মংড়ু শহরে নলবন্ন্যা গ্রামে পর পর তিনটি মর্টারশেলের বিকট শব্দে কেঁপে ওঠে শাহপরীর দ্বীপ। তবে এখনো সীমান্তবাসীদের আতঙ্ক পুরোপুরি কাটেনি।
শাহপরীর দ্বীপ মিস্ত্রীপাড়ার ব্যবসায়ী মোহাম্মদ আমিন বলেন, গত সোমবার সন্ধ্যার পর থেকে শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত মিয়ানমারের গোলাগুলি ও ভারী অস্ত্রের বিকট শব্দের আওয়াজ শোনা যায়নি। এতে কয়েকদিনের অশান্ত পরিবেশ ও ভয়ভীতি অনেকটাই কেটে গেছিলো। এরইমধ্যে এদিন বিকেল ৫টার দিকে একের পর এক বিকট শব্দে কেঁপে ওঠে শাহপরীর দ্বীপ। এতে করে সীমান্তে বসবাসকারী মানুষগুলো আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়ে।
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আদনান চৌধুরী বলেন, গত সোমবার সন্ধ্যার পর থেকে শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত সীমান্ত পরিস্থিতি স্বাভাবিক ছিল। এসময়ে বিস্ফোরণ ও গোলাগুলির শব্দ পাওয়া যায়নি। তবে দুপুর গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে হোয়াইক্যং ও বিকেলে শাহপরীর দ্বীপ সীমান্তে বিকট শব্দ শোনা গেছে।
মিয়ানমারের অভ্যন্তরে সংঘাতময় পরিস্থিতির কারণে বিজিবি, কোস্টগার্ড ও পুলিশের টহল বাড়ানো হয়েছে জানিয়ে ইউএনও আরও বলেন, এই পরিস্থিতিতে সীমান্তে বসবাসরত মানুষকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
নয়াশতাব্দী/এনএস
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ