ঢাকা, শনিবার, ৫ অক্টোবর ২০২৪, ২০ আশ্বিন ১৪৩১, ১ রবিউস সানি ১৪৪৬

ধার করা যন্ত্রে শেষ মুহূর্তে অপারেশন, বাঁচলো মা-শিশুর প্রাণ

প্রকাশনার সময়: ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৩:০৭
কলাপাড়া হাসপাতালের মানবিক চিকিৎসক জুনায়েদ হোসেন লেলিন। ছবি- সাইফুল ইসলাম

১৮ বছরের তরুণী তাইফা। ভালোবেসে বিয়ে করে বাবার বাড়ি ছেড়ে স্বামীর ঘরে চলে আসেন ২ বছর আগে। স্বল্প উপার্জনক্ষম প্রিয় মানুষের বন্ধনে হাসিখুশিতেই চলছিল তার সুখের সংসার। তবে সন্তানসম্ভবা হলে আর্থিক সঙ্কটে উন্নত চিকিৎসার অভাবে অনেক অসুস্থ হয়ে পড়েন এই গৃহবধূ। নিত্য খেটে খাওয়া স্বামীরবাড়ির লোকজনের পক্ষে তার চিকিৎসা ব্যয় বহন করাও ছিল অসম্ভব।

শেষ মুহূর্তে তাকে মুমূর্ষু অবস্থায় স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হলে, অসহায় দম্পতির পাশে দাঁড়ান একজন মানবিক চিকিৎসক। নিবিড় পর্যবেক্ষণে রেখে নিজ খরচে সকল পরীক্ষা-নিরীক্ষাসহ ওষুধ কিনে দিয়ে অস্ত্রপাচার (সিজার) সম্পন্ন করেন তিনি।

বলছিলাম, ৫০ শয্যা বিশিষ্ট পটুয়াখালীর কলাপাড়া হাসপাতালের চিকিৎসক জুনায়েদ হোসেন লেলিনের কথা। তিনি দ্রুত সময়ের মধ্যে সন্তানসম্ভবার জন্য সাহায্যের হাত বাড়িয়ে মানবিক দৃষ্টান্ত রেখে সাধারণের প্রশংসায় ভাসছেন।

আর প্রথম সন্তানকে সুস্থ অবস্থায় কোলে নিতে পেরে আনন্দের অশ্রু ঝরাচ্ছেন সদ্য প্রসূতি তাইফা। তিনি উপজেলার বালীয়াতলী ইউপির তুলাতলী গ্রামের ট্রলিচালক রিপন হাওলাদারের স্ত্রী।

দুদিন আগে (১৯ ফেব্রুয়ারি) সন্তান প্রসবের অতিরিক্ত ৯ দিন পেরিয়ে গেলে, শরীরে পানি সঙ্কট নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন এই গৃহবধূ। এসময় বন্ধ হয়ে যায় গর্ভে থাকা সন্তানের নড়াচড়াও। ঠিক সেই সময়ে চিকিৎসক লেলিন মানবিক যুবক মিন্টুর সহযোগীতায় জরুরি রক্ত সংগ্রহ করার পাশাপাশি নিজ খরচে চিকিৎসা সেবা দেন।

তাইফার ননদ শিরিনা আক্তার জানান, আমার ভাবি খুব অসুস্থ ছিল। ডাক্তার স্যার সবটা নিজের টাকায় করেছেন। অপারেশন বিল, টেস্ট, ওষুধ- সবকিছুই তার পক্ষ থেকে পেয়েছি। আমরা বুঝি নাই যে, উনি এতো ভালো মানুষ।

এ বিষয়ে মানবিক চিকিৎসক জুনায়েদ হোসেন লেলিনে জানান, হঠাৎ করেই মিন্টু আমাকে জানান, খুবই অসুস্থ একজন গর্ভবতী অর্থাভাবে উন্নত চিকিৎসা পাচ্ছেন না। এমনকি পেটের বাচ্চার পালস অনেকটা কমে গেছে। গিয়েও দেখলাম তাই। ডেলিভারি ডেট অনেকদিন ওভার হয়েছে। ফলে দ্রুতই সিজার প্রয়োজন ছিল। কিন্তু ওই মুহূর্তে হাসাপাতালে জীবানুনাশক অটোক্লেভ মেশিন না থাকায়, গভীর রাতে বিপদে পড়ে যাই। পরে স্থানীয় একটি ক্লিনিক থেকে যন্ত্রপাতি সংগ্রহ করি। তবে রোগীর কন্ডিশন মোটেই ভালো ছিল না। হয়তো একটু দেরি হলে মা, বাচ্চা দুজনেই মারা যেতে পারতো। তবে ঝুঁকি থাকলেও উপরওয়ালার ইচ্ছায় সফল অপারেশন করেছি। এখন মা, বাচ্চা দুজনই সুস্থ আছে।

‘টাকা নেই, সেই কারণে চিকিৎসা হচ্ছে না- এমন কেউ থাকলে তিনি যেন আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। কেউ লজ্জা পেলে গোপনে যোগাযোগ করলেও আমি নিজ খরচে তার চিকিৎসা ব্যয় বহন করবো’ বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন এই মানবিক চিকিৎসক।

নয়াশতাব্দী/এনএস

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ