সংবাদ প্রকাশের জেরে দৈনিক কালবেলার মহেশখালী উপজেলা প্রতিনিধি রকিয়ত উল্লাহকে মোবাইলে হুমকির পর ডেকে নিয়ে গিয়ে একটি কক্ষে আটকে এলোপাতাড়ি মারধর ও হাত-পা কেটে প্রাণনাশের হুমকি দিয়েছেন মশিউর রহমান (৩৯) নামের এক ব্যক্তি।
অভিযুক্ত মশিউর রহমান মাতারবাড়ি কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পে ‘সুমিতোমো’ নামের একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানে সিকিউরিটি অফিসারের দায়িত্বে আছেন বলে জানা গেছে।
গত ১৮ ফেব্রুয়ারি রাতে মাতারবাড়ি সাইরার ডেইল কর্মচারী কোয়ার্টার ও কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পের টেকলিন অফিসে ডেকে নিয়ে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে মারধরের পর প্রাণ নাশের ওই হুমকি দেন মেজর পরিচয় দেওয়া ওই ব্যক্তি।
এ ঘটনার পর জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে মঙ্গলবার (২০ ফেব্রুয়ারি) সকালে মহেশখালী থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন সাংবাদিক রকিয়ত উল্লাহ।
জানা গেছে, গত ১৫ ফেব্রুয়ারি উপজেলার মাতারবাড়িতে স্থানীয় কিছু জমি মালিকের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী টাকা না দেওয়ার ঘটনায় সংবাদ প্রকাশ করেন রকিয়ত। সংবাদ প্রকাশের পর তার ব্যক্তিগত মোবাইলে (০১৭১৭-০৭৪৪১৭) এই নম্বর থেকে কল করে সেনাবাহিনীর মেজর পরিচয়ে একের পর এক হুমকি ও গালিগালাজ করতে থাকেন এক ব্যক্তি। পরবর্তীতে বিষয়টি ভুল বোঝাবুঝি দাবি করেন তিনি। এমতাবস্থায় নুর হোসেন সোহেল নামক ব্যক্তির মাধ্যমে বিষয়টি সমাধান করার কথা বলে সাংবাদিক রকিয়ত উল্লাহকে তাদের কর্মচারীদের কোয়ার্টারে নিয়ে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজের এক পর্যায়ে এলোপাতাড়ি মারধর শুরু করেন।
এতেও ক্ষান্ত না হয়ে কয়েক ঘণ্টা আটকে রেখে রকিয়তের হাত-পা কেটে সাগরে ভাসিয়া দেওয়ার হুমকি দেন ওই ব্যক্তি। এসময় তিনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ দেশের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সঙ্গে তার সখ্যতা রয়েছে দাবি করে পত্রিকা বন্ধ করে দেওয়ার উপর্যুপরি হুমকি দেন।
এ ঘটনায় নিজের নিরাপত্তা চেয়ে এবং হুমকিদাতাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন সাংবাদিক রকিয়ত।
এর আগে, গত ১৫ ফেব্রুয়ারি স্থানীয় দৈনিক দৈনন্দিন পত্রিকায় ‘চুক্তির মেয়াদ শেষ, জমিতে নির্মিত অবকাঠামো লুটপাট করতে মরিয়া রানা সিন্ডিকেট’ শিরোনাম সংবাদ প্রকাশিত হয়। জমির মালিকের সঙ্গে চুক্তি নবায়ন না করে আইএইচআই কোম্পানি তাদের নির্মিত অবকাঠামোসহ নানা জিনিসপত্র টেকলিন কোম্পানিকে হস্তান্তর করে দেয়। কিন্তু টেকলিন কোম্পানির সেফটি অফিসার রানা ক্ষতিগ্রস্ত জমির মালিকদের ক্ষতিপূরণ না দিয়ে এরইমধ্যে অবকাঠামোগুলো ভেঙে ফেলে মালামাল লুটপাট করতে তোড়জোড় চালিয়ে যাচ্ছেন বলে সংবাদে তুলে ধরা হয়।
তবে সংবাদে উল্লেখিত কোম্পানিগুলোর কোনো দায়িত্বপ্রাপ্ত না হয়েও মশিউর রহমান নামের ওই ব্যক্তি ভাড়াটিয়া স্টাইলে হুমকি দিয়ে নিজেকে ক্ষমতাধর হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চেষ্টা করেন।
এ বিষয়ে মহেশখালী উপজেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি মো. ইউনুস বলেন, সংবাদ প্রকাশে কোনো অসংগতি থাকলে অভিযুক্তদের দেশের প্রচলিত আইনে ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ রয়েছে। কিন্তু সংবাদ প্রকাশের পর কোনো ব্যক্তি ওই সংবাদকর্মীকে হেনস্থা বা আটকে রাখার কোনো সুযোগ নেই। এটা সম্পূর্ণ আইন বিরোধী।
একইসঙ্গে সুমিতোমো কোম্পানির একজন সিকিউরিটি অফিসার কর্তৃক সাংবাদিককে হুমকি ও আটকে রাখার ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়ে তিনি বলেন, ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তাকে অপসারণ করার দাবী জানাচ্ছি। অন্যথায় কঠোর আন্দোলন করা হবে।
অভিযযোগের বিষয়ে জানতে সুমিতোমো কোম্পানির সিকিউরিটি অফিসার মশিউর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে, তিনি ফোন রিসিভ না করায় তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
মাতারবাড়ি কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্প সুমিতোমো কোম্পানির ইঞ্জিনিয়ার কাজী মহসিন বলেন, এ ঘটনার বিষয়ে আমি জানিনা। আপনাদের কাছ থেকে শুনলাম। কোনো সিকিউরিটি অফিসারের জন্য আইনগত ব্যবস্থা না নিয়ে ব্যক্তিগতভাবে কাউকে হেনস্থা বা লাঞ্ছিত করার সুযোগ নেই। ঘটনার বিষয়টি যাচাই-বাছাই করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলাপ করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মাতারবাড়ি কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পের পরিচালক আবুল কালাম আজাদ বলেন, সুমতোমো কোম্পানির সিকিউরিটি অফিসার মশিউরের সঙ্গে কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পের কোনো সম্পর্ক নেই। কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পের অধীনে অনেক কোম্পানি সাপ্লাই বা বিভিন্ন কাজ করে। হয়তো তাদের কোনো কর্মচারী হতে পারে সে। তার দায়ভার আমরা নেবো না।
তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ারও পরামর্শ দেন তিনি।
মহেশখালী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সুকান্ত চক্রবর্তী বলেন, সাংবাদিককে হুমকি ও লাঞ্ছিত করার ঘটনায় একটি সাধারণ ডায়েরি পেয়েছি। বিষয়টি তদন্ত করে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
নয়া শতাব্দী/এনএস
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ