টাঙ্গাইলের বাসাইলের সাবেক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মনজুর হোসেনের নামে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত। মঙ্গলবার (২০ ফেব্রুয়ারি) অতিরিক্ত চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক মাহমুদুল মোহসীন এ আদেশ দেন।
জানা যায়, ২০২২ সালের ২১ জুন ভুক্তভোগী কলেজছাত্রী বাদী হয়ে ধর্ষণের অভিযোগ এনে সাবেক ইউএনও মনজুর হোসেনের নামে আদালতে মামলা দায়ের করেন। আদালত এ মামলায় পুলিশ ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্তের নির্দেশ দেন। পরে পুলিশ ২০২২ সালের ২৯ ডিসেম্বর মনজুর হোসেনের বিরুদ্ধে ৩৯৩ ধারা প্রমাণিত হয়েছে মর্মে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করেন।
এর আগে, গত মাসের ১৭ তারিখ তিনি আদালতে অনুপস্থিত ছিলেন। মঙ্গলবার (২০ ফেব্রুয়ারি) আদালত বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করেন। এ সময়ও তিনি অনুপস্থিত থাকায় আদালত তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন।
ভুক্তভোগী কলেজছাত্রী জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়েও লিখিত অভিযোগ করেন।
লিখিত অভিযোগে তিনি বলেন, ২০২১ সালে বাসাইলের ইউএনও মনজুর হোসেনের সঙ্গে তার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে পরিচয় হয়। বিয়ের কথা বলে ইউএনও তার সরকারি বাসভবনে ডেকে নিয়ে শারীরিক সম্পর্ক করেন। পারিবারিকভাবে তার (ছাত্রীর) বিয়ে অন্য জায়গায় ঠিক হলে, তিনি (ছাত্রী) বিয়ের জন্য ইউএনওকে বলতে থাকেন। ইউএনও বিয়ের কথা বলে তাকে বাড়ি থেকে চলে আসতে বলেন এবং টাঙ্গাইল শহরের পাওয়ার হাউসের কাছে একটি বাসা ভাড়া নেন। সেই বাসায় তারা দুই মাস থাকেন।
কলেজছাত্রী আরও বলেন, গত বছরের ২৪ সেপ্টেম্বর রাতে বেনাপোল হয়ে তাকে (ছাত্রীকে) নিয়ে ইউএনও ভারতের কলকাতায় যান। সেখান থেকে উড়োজাহাজে করে হায়দরাবাদে যান। সেখানে তারা দুইজন চিকিৎসা নেন। পাসপোর্ট দেখে তিনি জানতে পারেন মনজুর হোসেন বিবাহিত। সেখানে থাকার সময় তার মোবাইল থেকে দুজনের ভিডিও ও কথোপকথন মুছে ফেলেন ইউএনও। ভারতে ১২ দিন অবস্থানের পর ৫ অক্টোবর তারা দেশে ফিরে আসেন। তারপর থেকে ইউএনও তাকে এড়িয়ে চলতে থাকেন।
অভিযোগের প্রেক্ষিতে মন্ত্রণালয় বিষয়টি জেলা প্রশাসনকে তদন্তের নিদের্শ দেন। পরে জেলা প্রশাসন গত বছরের ৭ এপ্রিল ওই কলেজছাত্রী, সাবেক ইউএনও মনজুর হোসেন, তার গাড়িচালক বুলবুল মোল্লাসহ ছয়জনের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে প্রতিবেদনটি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠান।
এ বিষয়ে বাদী পক্ষের আইনজীবী শফিকুল ইসলাম রিপন বলেন, আদালত মঙ্গলবার এ মামলার বাদীর সাক্ষ্য গ্রহণ করেন। ওই সময় বিবাদী মনজুর হোসেন আদালতে অনুপস্থিত থাকায়, তার নামে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়।
ভুক্তোভুগী কলেজছাত্রী ২০২২ সালের ২১ জুন সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট টাঙ্গাইল সদর আমলী আদালতে মামলা দায়ের করেন। ২০২১ সালের নভেম্বর মাসে ইউএনও মনজুর হোসেনকে বাসাইল থেকে ঢাকায় বদলি করা হয়। সর্বশেষ তিনি নদী রক্ষা কমিশনের উপ-পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
কলেজছাত্রীর অভিযোগের বিষয়টি গণমাধ্যমে আসলে এবং মন্ত্রিপরিষদের তদন্তে তার দোষ প্রমাণিত হওয়ায়, তাকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়।
নয়াশতাব্দী/টিএ
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ