সিরাজগঞ্জের তাড়াশের চলনবিল অঞ্চলে দিন দিন বাড়ছে ভুট্টা চাষ। দাম ভালো এবং চাষাবাদে ঝামেলাও কম হওয়ায় ভুট্টা চাষে আগ্রহী হচ্ছেন কৃষকরা। এ বছর ভুট্টার বাম্পার ফলনের সম্ভাবনাও দেখছেন চাষিরা।
ভুট্টা চাষ ও বিনা চাষ এই দুই পদ্ধতিতেই আবাদ হয়ে থাকে। খরচ অল্প এবং অন্য ফসলের চেয়ে লাভ বেশি হওয়ায় বোরো আবাদের পাশাপাশি অনেক জমিতে এবার ভুট্টা চাষ করছেন বিলাঞ্চলের কৃষকেরা। তাড়াশ উপজেলা ৮টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভা নিয়ে গঠিত হলেও সকল ইউনিয়নে সমানভাবে ভুট্টার চাষ হয় না। বেলে দোআঁশ ও দোআঁশ মাটি ও বন্যামুক্ত উঁচু ও মাঝারি উঁচু জমি ভুট্টা চাষের জন্য উপযোগী। আর এই ধরনের জমি চর অঞ্চলেই বেশি। হাইব্রিড জাতের ফলন বেশি হওয়ায় দেশে মোট আবাদের ৯৫ ভাগেই হাইব্রিড জাতের ভুট্টা চাষ হয়।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, প্রতি বছরই বাড়ছে ভুট্টা চাষ। তাড়াশ উপজেলার ৮টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভা নিয়ে গঠিত। চলতি মৌসুমে ভুট্টা চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১৩৯৩ হেক্টর। এর মধ্যে চাষ পদ্ধতিতে ৬১৬ হেক্টর ও বিনা চাষে ৭৭৭ হেক্টর। যা গত বছরের চেয়ে প্রায় ১৫০ হেক্টর বেশি। এ অঞ্চলে সাধারণত বেশি চাষ হয়, বারি-৫, বারি-৬, বারি-৭, বারি মিষ্টি ভুট্টা-১, বারি বেবি কর্ণ-১ জাতের ভুট্টা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, তাড়াশ উপজেলার তালম ইউনিয়ন, বারুহাস ইউনিয়ন, সগুনা ইউনিয়ন, মাগুড়া বিনোদ ইউনিয়ন, নওগাঁ ইউনিয়ন ও তাড়াশ সদর ইউনিয়নে ভুট্টার আবাদ বেশি হয়েছে। যেসব জমিতে চাষ ছাড়াই ভুট্টা চাষ করা হয়েছে, সেসব জমির ভুট্টা গাছে কাঁদি এসেছে। অন্যদিকে যেসব জমিতে চাষ করে ভুট্টা লাগানো হয়েছে, সেসব জমির ভুট্টা গাছে কাঁদি আসার সময় হয়েছে। ভুট্টা আবাদে তুলনামূলক খরচ কম ও লাভ বেশি হওয়ায় কৃষকদের মাঝে ভুট্টা চাষে আগ্রহ বাড়ছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকা এবং প্রাকৃতিক কোনো দুর্যোগ দেখা না দিলে বাম্পার ফলনের আশা করছেন কৃষকেরা।
সগুনা ইউনিয়নের দিঘী গ্রামের কৃষক হাফিজ উদ্দিন মোল্লা জানান, এ বছর তিনি ৫ বিঘা জমিতে ভুট্টা চাষ করেছেন। প্রতি বিঘা জমিতে ২০ হাজার টাকার মতো খরচ হয়েছে এবং বিঘাতে ৪০ মণের মতো ফলন হবে বলে আশা করছেন। বাজার দর ভালো থাকলে ভালোই লাভ হবে বলে তার প্রত্যাশা।
নাদোসৈয়দপুর মধ্যপাড়ার কৃষক মো. আনশব আলী বলেন, মাটিতে জোঁ থাকা অবস্থায় ৩ থেকে ৪টি আড়াআড়ি চাষ ও মই দিয়ে মাটি ঝুরঝুরে করে নিতে হয়। জমি সমান করে, সেচ ও পানি নিষ্কাশনের জন্য জমির চার পাশে নালা করতে হয়। জমির দুই পাশে রশি বা সুতা বেঁধে কোঁদাল বা ছোট হাত লাঙলের সাহায্যে এক থেকে দুই ইঞ্চি পরিমাণ মাটি গভীর করে এ লাইন করতে হয়। লাইন থেকে লাইনের দূরত্ব হবে ৩০ ইঞ্চি। ওই লাইনের মধ্যে ৮ থেকে ১০ ইঞ্চি পরপর একটি করে ভুট্টা বীজ দিয়ে লাইনট ভরাট করতে হবে। জমিতে পরিমিত রস না থাকলে বীজ বোনার পর হালকা সেচ দিতে হয়। প্রথম সেচ দিতে হয় চারা গাছের পাতা ৩ থেকে ৫টি হলে। তবে খেয়াল রাখতে হবে, সেচ কিংবা বৃষ্টির পানি গাছের গোছায় যেন ১০ থেকে ১২ ঘণ্টা জমে না থাকে। বিশেষ করে ভুট্টার ফুল ফোটা ও দানা বাঁধার সময় জমিতে পানি জমে থাকা চলবে না।
তাড়াশ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আব্দুলাহ আল মামুন জানান, এবছর ভুট্টার আবাদ লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৫০ হেক্টর বেশি হয়েছে। রোগ-বালাই দমনে কৃষি বিভাগের লোকজন সার্বক্ষণিক কৃষকদের পরামর্শ দিয়ে আসছেন। আবহাওয়া অনুকুলে থাকলে এবারও বাম্পার ফলন হবে বলে আশা করছি।
নয়া শতাব্দী/এসআর
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ