মাছের ঘেরের পাড়ে মাচায় সারি সারি ঝুলে আছে হলুদ, কালো ও সবুজ ডোরাকাটা রঙের বাহারি তরমুজ। কৃষকরা এসব গাছের পরিচর্যা করছেন। আবার কেউ ফল তুলছেন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় তরমুজের বাম্পার ফলন হয়েছে। ব্যাপক চাহিদা থাকায় বাজারে দামও ভালো। ফলে কৃষকের মুখে ফুটেছে হাসি। এ দৃশ্য এখন খুলনার রূপসা পাড়ের।
এ বছর উপজেলার নতুনদিয়া, শিয়ালী, গোয়াড়া, সামন্তসেনা, পাথরঘাটা, তিলক, জাবুসা, বাধাল ও ভবানীপুর গ্রামের মাছের ঘেরের পাড়ে প্রায় ২৫ বিঘা জমিতে ইয়োলো হানি, ইয়োলো ড্রাগন, সুইট ক্রাঞ্চ, কারিশমা এসব হাইব্রিড জাতের অমৌসুমের তরমুজ চাষ হয়েছে।
রূপসা উপজেলার নতুনদিয়া গ্রামের চাষি লিটন শিকদার এ বছর অমৌসুমে মৎস্য ঘেরের পাড়ে ৪ বিঘা জমিতে তৃপ্তি ও ইয়োলো ড্রাগন জাতের তরমুজ চাষ করেছেন। এতে বীজ, মাদা তৈরি, সার, মাচা তৈরি, শ্রমিক ও কীটনাশক বাবদ তার খরচ হয়েছে প্রায় ১১ হাজার টাকা। বীজ বপণের ৬০ দিন পর থেকে তরমুজ সংগ্রহ শুরু করা হয়।
ইতোমধ্যে তিনি ২৪০ কেজি তরমুজ (প্রতি কেজি ৫০ টাকা দরে) পাইকারি ব্যবসায়ীদের কাছে ১২ হাজার টাকায় বিক্রি করেছেন। আরও প্রায় ৪০-৫০ হাজার টাকার তরমুজ বিক্রি করতে পারবেন বলে আশা প্রকাশ করেন।
একই উপজেলার সামন্তসেনা গ্রামের কৃষক সোহাগও এ বছর ঘেরের পাড়ে অমৌসুমে ১ বিঘা জমিতে কারিশমা জাতের তরমুজ চাষ করেছেন। তার খরচ হয়েছে প্রায় ৭ হাজার টাকা। তিনি এ পর্যন্ত ১১ হাজার টাকার তরমুজ বিক্রি করেছেন। আরও প্রায় ৩-৪ হাজার টাকার তরমুজ বিক্রি করতে পারবেন বলে জানান।
এদিকে উপজেলার জাবুসা গ্রামের চাষি আ. সালাম শেখও এ বছর ঘেরের পাড়ে ২০ শতক জমিতে বর্ষা মৌসুমে তৃপ্তি নামক হাইব্রিড জাতের তরমুজ চাষ করে এ পর্যন্ত ১০ হাজার টাকার তরমুজ বিক্রি করেছেন। এতে তার খরচ হয়েছে মাত্র ৫ হাজার টাকা। ঘেরের পাড়ের এ জমি থেকে আর প্রায় ২ থেকে ৩ হাজার টাকার তরমুজ বিক্রি করতে পারবেন বলে আশা প্রকাশ করেন।
সালাম, সোহাগ ও লিটন শিকদার ছাড়াও জাবুসা গ্রামের রবিউল ও মকছেদ, সামন্তসেনার বেল্লাল, পাথরঘাটার হরিদাস, দেব, শিয়ালী গ্রামের নিপুল ধর, সুজিত বৈরাগী, বাসুদেব, চন্দ্রকান্ত মালাকার, মনোজিৎ বিশ্বাস ও তনয় মল্লিক, নতুনদিয়ার প্রদীপ বৈরাগী, রনজিত শিকদার, উজ্জ্বল বৈরাগী, মহাদেব রায়, মন্টু অধিকারী ও গোয়াড়া গ্রামের বিবেচ্য হিরাসহ প্রায় অর্ধশতাধিক কৃষক এ বছর প্রথম অমৌসুমে মৎস্য ঘেরের পাড়ে হাইব্রিড জাতের তরমুজ চাষ করে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন।
রূপসা উপজেলার উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা হিমাদ্রী বিশ্বাস, মো: জেহাদুল ইসলাম শেখ, নিতীশ বালা ও সোহেল রানা এসব কৃষকদের পাশে থেকে তরমুজ চাষে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়ে চলেছেন।
এলাকার কৃষকরা বলেন, মৎস্য ঘেরের পাড়ে অমৌসুমে তরমুজ চাষ করে অনেক সুবিধা পাওয়া যায়। ঘেরের পাড়ের মাটি বেশ উর্বর। চাষকৃত তরমুজ গাছ চারদিক থেকেই সূর্যের আলো পায়। এতে গাছ দ্রুত বৃদ্ধি পায় ও ফলন ভালো হয়।
রূপসা উপজেলা কৃষি অফিসের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোঃ আবদুর রহমান বলেন, সাধারণত মৎস্য ঘেরের পাড় উঁচু হয়। তাই বৃষ্টির পানি দ্রুত সরে যায়। এ কারণে বর্ষকালে ঘেরের পাড়ে খুব সহজে তরমুজ চাষ করা যায়। এছাড়া ঘেরের পাড়ে পানির ওপর মাচা তৈরি করে তা তরমুজ গাছের লতা বাউনির জন্য ব্যবহার করা হয়। একারণে জায়গা কম লাগে। আবার ঘেরে অবাধ পানি সরবরাহ থাকায় গাছে পানি সেচ দিতে সুবিধা হয়। এ সময়ে তরমুজে পোকামাকড় ও রোগবালাইয়ের আক্রমণ কম হয়। তাছাড়া তরমুজ গাছের পরিচর্যা করতেও সুবিধা হয় এবং অধিক ফলন পাওয়া যায়। অন্য ফসলের তুলনায় কয়েকগুণ বেশি লাভ হওয়ায় মৎস্য ঘেরের পাড়ে তরমুজ চাষে ঝুঁকে পড়েছেন এখানকার কৃষকেরা। তাই প্রতি বছর রূপসা উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে ঘেরের পাড়ে অমৌসুমে তরমুজ চাষ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
রূপসা উপজেলা কৃষি অফিসার জনাব মো: ফরিদুজ্জামান বলেন, ঘেরের পাড়ে অমৌসুমে তরমুজ চাষ হওয়ায় ভালো দাম পেয়ে কৃষকরা আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন। তাই উপজেলায় প্রতি বছর অমৌসুমে তরমুজ চাষ বৃদ্ধি পাচ্ছে। উপজেলা কৃষি অফিস থেকে এসব কৃষকদের মাঝে বিনামূল্যে হাইব্রিড জাতের তরমুজ বীজ সরবরাহের পাশাপাশি উৎপাদন প্রযুক্তি সম্পর্কে পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করা হচ্ছে। এতে কৃষকদের মধ্যে ঘেরের পাড়ে অমৌসুমে তরমুজ চাষে আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে।
নয়া শতাব্দী/জেআই
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ