ঢাকা, বুধবার, ৩ জুলাই ২০২৪, ১৯ আষাঢ় ১৪৩১, ২৬ জিলহজ ১৪৪৫

চট্টগ্রামে হাত বাড়ালেই মাদক

প্রকাশনার সময়: ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৭:০৭

চট্টগ্রাম নগরীর ১৬টি থানায় মাদকের গডফাদারসহ ৩৫৯ মাদক কারবারির তালিকা তৈরি করেছে চট্টগ্রাম মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর (ডিএনসি)। পাঠানো হয়েছে সব আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ঢাকা প্রধান কার্যালয়ে। যদিও ডিএনসির পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অন্যান্য ইউনিটও পৃথকভাবে তালিকা করে থাকে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, এ তালিকার সঙ্গে অন্যান্য ইউনিটের তালিকা সমন্বয় করে মাদকবিরোধী অভিযান চলমান থাকবে। পুলিশ, র‍্যাব, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অভিযানে প্রতিদিনই কোথাও না কোথাও উদ্ধার হচ্ছে ইয়াবা, ফেনসিডিল, হেরোইনসহ নানা ধরনের মাদকদ্রব্য। এসব অভিযানে ধরা পড়ছে ছোটখাটো কিছু মাদক কারবারি। কিন্তু ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে মাদক ব্যবসার মূল গডফাদাররা।

ডিএনসি সূত্র জানায়, চলমান মাদকবিরোধী অভিযানে গতি বাড়াতে ননামুখী তৎপরতা চালানো হচ্ছে। কৌশল অবলম্বন ও বারবার নিজেদের অবস্থান পরিবর্তন করায় মাদক কারবারিদের গ্রেপ্তারে বেগ পেতে হচ্ছে। নগরীর ১৬ থানার পাড়া-মহল্লায় মাদক ব্যবসা সচল রেখেছে তারা। এদের মধ্যে বেশির ভাগই পাইকার। আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কম নজরদারি থাকায় নৌ ও রেলপথকে চট্টগ্রাম মাদক পরিবহনের প্রধান রুটে পরিণত হয়েছে। নতুন নতুন কৌশলে চট্টগ্রামে মাদক ঢুকছে। ফলে কোনোভাবেই কমানো যাচ্ছে না মাদকের বিস্তার।

চট্টগ্রাম মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, নগরীর সবচেয়ে বড় মাদকের আখড়া হিসেবে এক নম্বরে আছে টেক্সটাইলের চন্দ্রনগর কলাবাগান। চট্টগ্রামের বায়েজীদ বোস্তামী থানাধীন টেক্সাটাইল চন্দ্রনগর কলাবাগান যেন মাদকের সাম্রাজ্য। নাসিমা, শরিফ, জনি, নয়ন, খলিল, দুলাল, রাশেদ ও নবী বায়েজীদ বোস্তামী থানাধীন টেক্সাটাইল চন্দ্রনগর, কলাবাগান এলাকায় তারা গডফাদার হিসেবে পরিচিত। তাদের হাতেই মাদক সাম্রাজ্যেও একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ। এদের সবার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে।

এরপরই রয়েছে বরিশাল কলোনির নিয়ন্ত্রক মো. ইউসুফ। সিআরবি চৌদ্দ জামতলা বস্তির মাদক ব্যবসার প্রধান নিয়ন্ত্রক আলো আক্তার প্রকাশ খালাম্মা। এ খালাম্মা নিয়ন্ত্রণে রয়েছে চট্টগ্রাম রেলওয়ে সিআরবি, টাইগারপাস, কদমতলী রেলগেট, বিআরটিসি, পুরাতন স্টেশন, নতুন স্টেশন, নিউমার্কেট, জুবিলী রোড, কাজীর দেউড়ি, ওয়াসার মোড়, লালখান বাজার, রেলওয়ে চৌদ্দ জামতলা বস্তি, বয়লার কলোনি, বিআরটিসি এলাকা, এনায়েত বাজার ও গোয়ালপাড়া, রেলওয়ে তুলাতুলী বস্তি, বাটালী রোড, চৈতন্য গলি। আলো প্রকাশ খালাম্মার শুধু মাদক ব্যবসা নয়,এসব এলাকার ছিনতাইকারীদের প্রধান মূল হোতাও।

চট্টগ্রাম রেলওয়ে সিআরবি আশপাশের এলাকায় খালাম্মার মাদক বিক্রি নিয়ন্ত্রণ করে আলতাফ ও বাবু। এনায়েত বাজার, গোয়ালপাড়া ও তুলাতুলীর মাদক বিক্রি নিয়ন্ত্রণ করে মামুন তার বিশাল অর্ধশতাধিক মহিলা ও পুরুষ বাহিনী দিয়ে। আলোর এ বিশাল বাহিনীর নিয়ন্ত্রণ করে আলোর বড় বোন আয়শা ও পালিত পিতা সালেহ আহমেদ, রোকেয়া প্রকাশ মমি।

এরপরই রয়েছে হালিশহর বড়পোল এলাকার করিম ওরফে ডাইল করিম, বি-ব্লক খাল পাড় নাদিম, বাইট্টা কামাল গলিচিপা পাড়া, রহমান ব্লিক শাহজান বেকারির পাশে, শাহিন শাপলা আবাসিক এলাকা, জিকু এব্লক হালিশহর, মাইজপাড়ার মারুফ ওরফে মাক্স শামীমের শ্যালক, আব্দুর পাড়ার মাক্স শামীম। পাহাড়তলী থানা এলাকার সংলগ্ন মাদক কারবারি নিয়ন্ত্রণ করে চধু চৌধুরী রোড, সরাইপাড়া, সাগরিকা, কলেজ রোডসহ গডফাদার আবু সালেক তালুকদার ওরফে ডাকু রুবেলের নেতৃত্বে রমরমা ইয়াবার বানিজ্য চলছে। পাহাড়তলীর শিল্পী বৌদী রেম্পু গার্মেন্টসের পাশে, সবিতা বৌদী জেলে পাড়া, সদরঘাট ধোপার মাঠ বস্তির মাইজ্জ্যামিয়া, শরিফ, সিমেট্রি রোড এলাকার আরমান, বাকালিয়া কালামিয়া বাজারের আলী জহুর, বাকলিয়ার আমজাদ, সেলু, বাবু, রেয়াজুদ্দিন বাজারের জাহিদ, আকবরশাহ থানার সিডিএ ১ নম্বর রোড এলাকার মো. আলমগীর, মো. খোরশেদ ও বাবলু, সদরঘাট থানার আইস ফ্যাক্টরি রোডের মরিচা পাড়া এলাকার মো. ফারুক রানা, মো. চাঁন মিয়া, শরিফ, খাতুনগঞ্জ ওসমানিয়া লেনের মো. দিদার, বাকলিয়া থানার রাজাখালী এলাকার রাবেয়া বশরী বকুলী, আজগর, মনির হোসেন, কেহেরমান, খুলশী থানা এলাকার জুয়েল এবং শাহজাহান, পাহাড়তলী থানা এলাকার নূরজাহান, ডবলমুরিং এলাকার পিচ্চি আলো, শরিফ এবং বন্দও থানা এলাকার ইকবাল। চট্টগ্রাম মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, চট্টগ্রামের ৫০টি স্পটে মাদকের কেনাবেচা হয় বলে চট্টগ্রাম নগরীর অন্তত ৫০টি স্পটে মাদকের বেচাকেনা হয়।

এর মধ্যে রয়েছে বায়েজীদ বোস্তামী থানাধীন চন্দ্রনগর কলাবাগান, কোতোয়ালি থানার বরিশাল কলোনি, পুরাতন রেলস্টেশন, রেলওয়ে চৌদ্দ জামতলা বস্তি, ব্রয়লার কলোনি, বিআরটিসি এলাকা, মনোহরখালী, ফিশারিঘাট, নজু মিয়া লেন, মিরিন্ডা লেন, লালদীঘি, ঘাটফরহাদবেগ, পোস্ট অফিস গলি ও এনায়েত বাজার গোয়ালপাড়া, খুলশী থানার বাটালি হিল, মতিঝর্ণা, টাইগারপাস বস্তি, ট্যাঙ্কির পাহাড়, শহীদনগর লেন ও বিহারি কলোনি।

বায়েজীদ থানার আরফিন নগর বিশ্ব কবরস্থানসংলগ্ন, শেরশাহ কলোনী, ঝর্ণা কলোনি, রৌফাবাদ রেলওয়ে কলোনি, মুক্তি যোদ্ধা কলোনি, জামতলা ডেবার পাড়, কলাবাগান, আরেফিন নগর, ভাঙা বাজার ও আমিন জুটমিল। চান্দগাঁও থানার মেসতা চৌধুরী ঘাটা। রাহাত্তারপুল এজাহার মিয়ার বাড়ি, কালুরঘাট পুলিশ ফাঁড়ির পেছনে এবং কাপ্তাই রাস্তার মাথা, বাকলিয়া থানার চর চাক্তাই, তক্তারপুল, ভাইল বেপারির গলি, রাহাত্তারপুল, মাস্টারপুল, বালুরমাঠ, বৈদ্যারটেক, রাজাখালী, পুলিশ বিট, বউবাজার ও তুলাতুলী পয়েন্ট। চকবাজার থানার ধুনিরপুল, চাঁন মিয়া মুন্সী লেন, কার্পাসগোলা ব্রিজ ও চক সুপার মার্কেট এলাকা।

পাঁচলাইশ থানার খতিবের হাট, ষোলশহর রেলস্টেশন, হামজারবাগ রেলওয়ে গেট, আমীন কলোনি ও চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ এলাকা। সদরঘাট থানার মাদারবাড়ি রেলগেট এলাকা, রেল বিট পানির টাঙ্কি ও শাহজান হোটেল।

নয়া শতাব্দী/এসএ

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ