ঢাকা, বুধবার, ১৩ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ কার্তিক ১৪৩১, ১০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

লাল শাপলার বিলে যেতে পথে পথে দুর্ভোগ

প্রকাশনার সময়: ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১৬:৪২

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমন্ডিত লাল শাপলার বিলে যেতে সময়, ভোগান্তি ও দুর্ভোগ বাড়িয়েছে ভাঙাচোরা আর খানাখন্দে ভরা সড়ক।

এরপরেও বরিশালের উজিরপুর উপজেলার সাতলা ও আগৈলঝাড়া উপজেলার বাগধা গ্রাম মিলিয়ে অবস্থিত সবুজের বুকে লাল এ শাপলার বিলে যেতে আগ্রহের কমতির শেষ নেই প্রকৃতি ভ্রমন প্রেমিদের।

পরিস্কার স্বচ্ছ পানিতে নৌকায় শাপলার বিলে ঘুরে বেড়ানোর সঙ্গে আশপাশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখতে প্রতিনিয়ত শত শত মহিলা পুরুষ ও শিশু দর্শনার্থীদের কাছে টানছে।

তবে সংস্কারের মাধ্যমে সড়কের ভোগান্তি লাঘবের পাশাপাশি বরিশাল থেকে উজিরপুরের সাতলা বাজার পর্যন্ত যাত্রীবাহী বাস চালুর দাবি স্থানীয় ও প্রকৃতি প্রেমীদের। তা নাহলে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এ শাপলার বিলকে ঘিরে পর্যটকবিমুখ হয়ে পড়ার শঙ্কা রয়েছে।

পরিবহন চালকরা বলছেন, বরিশাল শহরের কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল নথুল্লাবাদ থেকে সাতলা-বাগধারে এ শাপলার বিলে যেতে সবচেয়ে সহজ পথ উজিরপুর পৌরশহর হয়ে ধামুরা-হাবিবপুর-হারতা রুট ব্যবহার করতে হয়। এ পথে সাতলা থেকে প্রায় ৪৮ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে হয়। আর বাগধা হয়ে যেতে লাগে প্রায় ৫১ কিলোমিটার পথ। এছাড়া বরিশাল থেকে গৌরনদী ও আগৈলঝাড়ার পয়সারহাট হয়ে বাগধা যেতে পাড়ি দিতে হয় ৬১ কিলোমিটারের মতো পথ। সেই সঙ্গে সাতলা যেতে হয় পাড়ি দিতে হয় প্রায় ৬৫ কিলোমিটার পথ।

অন্যদিকে উজিরপুর হয়ে সাতলা পর্যন্ত যাত্রীবাহী বাসের সরাসরি রুট রয়েছে, সেক্ষেত্রে আগৈলঝাড়ার পয়সারহাট হয়ে বাগধা পর্যন্ত কোনো বাস চলাচলের রুট নেই। এসব কারণেই বরিশাল থেকে আগৈলঝাড়া হয়ে শাপলার বিলে যাওয়ার থেকে উজিরপুর পৌরশহর হয়ে যাওটাকে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন পর্যটকরা।

তবে চলতি বছরের ৯ মার্চ উজিরপুরের ধামুরায় একটি ব্রিজ দেবে যাওয়ার পর বরিশাল থেকে সাতলা রুটে বাস চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এছাড়া উজিরপুর পৌর এলাকার পর থেকে সাতলা পর্যন্ত ভাঙাচোরা আর খানাখন্দে ভরা সড়ক ভোগান্তি বাড়িয়েছে এ রুটে চলাচলকারীদের।

সাতলা-বাগধার শাপলার বিলে পর্যটকদের নিয়ে নৌকা চালিয়ে উপার্জন করা ফজুলল হক জানান, শুধু সড়কের বেহাল দশার কারণে পর্যটকদের অনীহা সৃষ্টি হচ্ছে।

যারা একবার এ বিলে এসে ঘুরে যান, তারা উজিরপুর উপজেলার ভেতর দিয়ে আর এখানে আসতে চান না। অপরদিকে সড়কের অবস্থা ভালো থাকলেও দূরত্বের কারণে বরিশালে থেকে গৌরনদী ও আগৈলঝাড়ার পয়সারহাট হয়ে বিলে আসতে চান না অনেকে।

পথের কষ্ট ‘ভুলিয়ে দিচ্ছে’ সৌন্দর্য

তবে যারা একবার বিল ও শাপলার সৌন্দর্যে মুগ্ধ হচ্ছেন, তারা পথের কষ্টকে নিমেশে ভুলে যাচ্ছেন বলে জানিয়ে অপর মাঝি মোক্তার বলেন, সড়কের কারণেই শাপলার বিলে পর্যটকদের আনাগোনা অন্য সময়ের থেকে কিছুটা কম।

আর যারাই উজিরপুরের ভেতর দিয়ে শাপলার বিলে আসছেন, তারাই সড়কের ভোগান্তির কথা তুলে ধরেন। তবে ঠিকই শাপলার বিলের সৌন্দর্যে সেসব ভুলে যান তারা।

পরিবার-পরিজন নিয়ে শাপলার বিলে ঘুরতে যাওয়া বরিশাল নগরের বাসিন্দা কামরুল হাসান বলেন, ‘প্রতি বছরই এমন সময়ে শাপলার বিলে ঘুরতে আসেন। তবে এবারে সড়কের বেহাল দশার কারণে বেশ কষ্ট পেতে হয়েছে। আর ধামুরার ব্রিজ দেবে যাওয়ার কারণে বাস চলাচল বন্ধ থাকায় ছোট যানবাহনে চেপে এ পর্যন্ত আসতে আরও বেশি ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে।

স্বামীর সঙ্গে শাপলার বিলে আসা নাদিয়া ইসলাম নামের এক পর্যটক বলেন, থ্রি-হুইলার বা ছোট যানবাহনে আসতে কতটা কষ্ট হতো তা জানি না। তবে ভাঙাচোরা সড়ক দিয়ে মোটরসাইকেলে আসতে বেশ বেগ পেতে হয়েছে।

পুরোটা পথ পড়ে যাওয়ার ভয় ছিল। তবে এখানকার ব্যবসায়ী ও মাঝিদের আন্তরিকতা আর বিলের মনোমুগ্ধকর পরিবেশ পথের সব কষ্টকে হার মানিয়ে দিয়েছে।

উজিরপুরের হাবিবপুর, হারতা ও শাতলা এলাকার ব্যবসায়ীদের দাবি, শুধু পর্যটন নয়, কৃষি ও মৎসনির্ভর এ অঞ্চলের অর্থনৈতিক উন্নয়নে যতো দ্রুত সম্ভব সড়কের সংস্কার করা হোক। যাতে যাত্রীসহ পণ্যবাহী যানবাহন নিরাপদে চলাচল করতে পারে।

শাপলার বিলে পর্যটকদের সুবিধার কথা বিবেচনায় রেখে গুরুত্বপূর্ণ ওই সড়কটি প্রায় ২৪ ফুট প্রশস্থ করার একটি প্রকল্প মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া আছে জানিয়ে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের (এলজিইডি) নির্বাহী প্রকৌশলী শরীফ মো. জামাল উদ্দিন জানান, বর্তমানে উজিরপুর-সাতলা সড়কের ৫ কিলোমিটার সংস্কারের জন্য টেন্ডার আহবান করা হয়েছে। এছাড়া বাকি খানাখন্দ নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় মেরামত করা হবে।

নয়া শতাব্দী/জেআই

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ