গত ইরি-বোরো মৌসুমের আগেও ইরি প্রজেক্টে ১৮-২০ বিঘা জমিতে ধান চাষ করতেন। মাত্র এক বছরের ব্যবধানে সেই প্রজেক্টে ধানখেতের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫-৭ বিঘায়। উর্বর এ জমিগুলো মাটি খেকোদের কবলে পড়ে ডোবা-নালায় পরিণত হয়েছে। চলতি মৌসুমেও বাকি জমিগুলো থেকে রাতের আঁধারে চলছে মাটি কাটার মহোৎসব।
শুক্রবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলার জামির্ত্তা ইউনিয়নের হাতনী-দাইড়াপাড়া চকে আবেগাপ্লুত হয়ে কথাগুলো বললেন রফিকুল ফকির ফকির (৬০) নামের এক কৃষক। তার সাথে আরেক কৃষক বৃদ্ধ হামিদ আলীও মাটি ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে জমি রক্ষার দাবি জানালেন। কৃষি জমি থেকে অব্যাহতভাবে মাটি কাটায় হামিদ আলীর স্ত্রীও ক্ষোভ প্রকাশ করলেন স্থানীয় প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি ও সাংবাদিকদের ওপর।
সরেজমিনে হাতনী-দাইড়াপাড়া ও জামির্ত্তা চকে ফসলি জমির মালিকদের সাথে কথা বলে পাওয়া যায় মাটি কাটার চাঞ্চল্যকর তথ্য। ওই চকের মধ্যে টিএইচবি, জিএইচবি, ডিএমসি ও এএমসি নামের ৪টি ইটভাটা চালু রয়েছে। আর এই ইটভাটাকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে মাটি বিক্রির শক্তিশালী নেটওয়ার্ক। সংঘবদ্ধ ১২-১৮ জনের একটি চক্র এই মাটি ব্যবসার সাথে জড়িত বলে ভুক্তভোগী জমির মধ্যে- মৃত জসীম মেম্বারের ছেলে দানেজ, মৃত করম আলীর ছেলে ফজল, আব্দুল লতিফের ছেলে আয়নাল ও স্থানীয় আব্দুস ছালাম মাটি কাটার নেতৃত্ব দিচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
তবে ইটভাটার মালিকরা জানিয়েছেন, তাদের কেউ ফসলি জমি থেকে মাটি কাটার সাথে জড়িত নয়। কেউ ভাটায় মাটি বিক্রি করতে আসলে তারা সে মাটি কিনে নেন। মাটির বিক্রির সাথে জড়িত দানেজ বলেন, গত বছর মাটির ব্যবসা করেছি। এ বছর অন্যরা করছে।
এদিকে, গত বছর বিএডিসির খনন করা হাতনী-দাইড়া পাড়া চক হয়ে ডিগ্রীর চরে ধলেশ্বরী নদী পর্যন্ত প্রবাহিত খালটি বন্ধ করে দেয়া হয়েছে মাটি বহনের ট্রাক চলাচলের জন্য। স্থানীয় বাসিন্দা সিংগাইর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আবুল বাশার বলেন, সরকারি খাল ভরাট করে রাতের আধারে ফসলি জমি থেকে মাটি কাটার বিষয়টি আমি প্রশাসনকে বার বার জানিয়েছি কিন্তু কোনোভাবেই থামছে না ফসলি জমি থেকে মাটি কাটা।
কৃষক ছবেদ আলী অভিযোগ করে বলেন, রামচন্দ্রপুর গ্রামের ইবারত, দাইড়াপাড়ার সুলতান, আবুল হোসেন ও আছর খা মাটি বিক্রয় করে। আর ব্যবসায়ীরা সেই মাটি কেটে নেয়ায় পাশের ফসলি জমিগুলো এখন ভাঙনের মুখে। তিনি আরও বলেন, আমি গরিব বলে হাসান মাতবর তার জমিটি আমাকে চাষাবাদ করার জন্য দেয়। ওই জমি সংলগ্ন ইবারতের জমি থেকে মাটি কেটে নেয়ায় তার চাষাবাদের জমিটিও ভেঙে পড়েছে। ফলে পরিবার নিয়ে পথে বসার আশঙ্কা করছেন তিনি ।
এ প্রসঙ্গে জামির্ত্তা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আবুল হোসেন মোল্লা বলেন, গাড়ি চলাচলের ব্যাপারে খাল ভরাট করে মাটি পরিবহনের জন্য আমি কোনো অনুমতি দেইনি। শুনেছি ইউএনও স্যারের কাছে খালের মধ্যে চুঙ্গী দিয়ে মাটি ফেলে গাড়ি চলাচল জন্য অনুমতির আবেদন করেছে। অনুমতি পাওয়ার আগেই তারা মাটি ফেলে সরকারি খালটি ভরাট করেছে। একাধিক বার নোটিশ করেও ফসলি জমি থেকে মাটি কাটা বন্ধ করতে পারছেন না বলেও তিনি জানান।
ইউনিয়ন সহাকরী (ভূমি) কর্মকর্তা মো. আব্দুল কুদ্দুস বলেন, খাল ভরাট করার ক্ষমতা কেউ রাখে না। মাটি কাটার বিষয়ে কেউ অভিযোগ করেনি।
সিংগাইর উপজেলা নির্বাহী অফিসার পলাশ কুমার বসু বলেন, খবর শুনে পুলিশসহ স্থানীয় নায়েব সাহেবকে ঘটনাস্থলে পাঠিয়েছি। মাটি কাটা বন্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
নয়া শতাব্দী/এসএ
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ