ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জে পিকনিকের নামে দুই দফায় হাউজি জুয়া খেলা ও অবৈধ র্যাফেল ড্র অনুষ্ঠিত হয়েছে। একটি ব্যবসায়ী সংগঠন পিকনিকের নামে এ আয়োজন করেছে।
শুক্রবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) সকালে ও বিকেলে উপজেলার সাগুনী শালবনে এটি অনুষ্ঠিত হয়। এ ঘটনায় সচেতন মহলের মাঝে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।
জানা যায়, পীরগঞ্জ বাজার দোকান মালিক ও কর্মচারী সমিতির যৌথ উদ্যোগে শুক্রবার উপজেলার সাগুনী রাবার ড্যাম ও শালবনে পিকনিকের আয়োজন করা হয়। পিকনিককে কেন্দ্র করে টাঙ্গন নদীর পশ্চিম পাড়ে পীরগঞ্জ-বোচাগঞ্জ পাকা সড়ক সংলগ্ন শালবনে বিশাল প্যান্ডেল করেন আয়োজকরা। সকাল থেকেই সেখানে চলে রান্নার কাজ। দুপুর থেকে খাওয়া-দাওয়ার পাশাপাশি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান চলতে থাকে প্যান্ডেলের উম্মুক্ত মঞ্চে। বিকেলে আনুষ্ঠিত হয় র্যাফেল ড্র (লটারি)। বিক্রি করা হয় প্রায় ৪ হাজার টিকিট। যার প্রথম পুরস্কার ছিল একটি মোটরসাইকেল। এছাড়াও রয়েছে আরও ২৯টি পুরস্কার। গোপনে বিক্রি হয় লটারির টিকিট।
এদিকে প্যান্ডেলের দক্ষিণে শালবনের ভেতরে হাউজি জুয়া খেলার জন্য আলাদা প্যান্ডেল করা হয়। সেখানে খোলা আকাশের নিচে চেয়ার পেতে সকাল ১১টা থেকে জুম্মার নামাজের আগ পর্যন্ত চালানো হয় এ খেলা। বিরতি দিয়ে জুম্মার নামাজের পর থেকে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত আবারও চলে খেলা। উম্মুক্ত মঞ্চে সাংস্কৃতি অনুষ্ঠান আর পেছনে বনের ভেতরে চালানো হয় হাউজি খেলা। এ পিকনিক উপলক্ষে শালবন এলাকায় প্রায় এক হাজারেরও বেশি মানুষের সমাগম ঘটে। যার বেশির ভাগই হাউজি খেলায় অংশ নেয়। প্রকাশ্যে এ খেলা চলাতে সচেতন মানুষের মাঝে বেশ ক্ষোভ বিরাজ করছে।
এক দোকানদার জানান, শুক্রবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত পুলিশের উপস্থিতিতে দিনভর জুয়া খেলা চলেছে। পুলিশের সামনে জুয়া খেলা দেখে হতভম্ব তিনি। প্রতিটি রাউন্ডে এক লাখেরও অধিক টাকার সিট বিক্রি করা হয়। বিজয়ীদের দেওয়া হয় সবমিলে ১০ হাজার টাকা। এভাবে ৫০ থেকে ৬০ রাউন্ড হাউজি খেলা হয়। আর র্যাফেল ড্র এর নামে লটারি বিক্রি করা হয়েছে প্রায় দুই লাখ টাকার।
সমাজকর্মী নাহিদ পারভিন রিপা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, পিকনিকের নামে এ ধরণের জুয়া খেলা তরুণ সমাজের ওপর ব্যাপক প্রভাব ফেলবে।
অভিনব কায়দায় চালানো এ হাউজি খেলা প্রসঙ্গে ঠাকুরগাঁও জজ কোর্টের আইনজীবী আবু সায়েম বলেন, হাউজি ও লটারি এক ধরণের জুয়া খেলা। ব্যবসায়ী সংগঠন পিকনিকের নামে শালবনে এ খেলার আয়োজন করাটা ঠিক করেননি। যুব সমাজের প্রতি এটার খারাপ প্রভাব পড়বে। তাছাড়া এটি আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ।
এ বিষয়ে ওই ব্যবসায়ী সংগঠনের সভাপতি হাবিবুর রহমান নান্নু বলেন, তিনি হাউজির বিষয়টি জানতেন না। বিপ্লব এটা করেছে। এটা করা ঠিক হয়নি। আগামীতে যেন না হয়, সেটা দেখবো।
পীরগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) খায়রুল আনাম বলেন, সাগুনী শালবনে ব্যবসায়ী সমিতি পিকনিক করেছে জানি। দুই দফায় হাউজি খেলা হয়েছে। এটা আমার জানা নাই এবং সেখানে থানার কোনো পুলিশ উপস্থিত ছিল না।
হাউজি খেলা প্রসঙ্গে উপজেলা নির্বাহী অফিসার রমিজ আলম বলেন, কারা কোথায় খেলেছেন, ঠিক জানি না। দেখি, কি করা যায়।
নয়াশতাব্দী/টিএ
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ