কক্সবাজারে বাতি চুরির ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই কস্তুরাঘাট-খুরুশকুল সংযোগ সেতুর বৈদ্যুতিক তারসহ বিভিন্ন মালামাল লুট করে নিয়ে গেছে দুবৃর্ত্তরা।
জানা যায়, সেতুটির সিকিউরিটি গার্ডদেরকে মারধর করে প্রায় ৫০ লাখ টাকার বৈদ্যুতিক তার নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ভেঙে ফেলা হয়েছে রেলিং স্লাবও। উদ্বোধনের পর থেকে দৃষ্টিনন্দন সেতুটিতে একের পর এক মালামাল চুরির ঘটনা ঘটছে। যা পথচারীদের মধ্যে ছিনতাই আতঙ্ক বিরাজ করছে। সেতুর ওপর বাতিগুলো জ্বলছে না। এতে সেতু এলাকা অরক্ষিত হয়ে পড়েছে। পুরো এলাকা অন্ধকার থাকায় পথচারীদের মধ্যে ছিনতাই আতঙ্ক বিরাজ করছে।
কক্সবাজার শহর থেকে মাত্র তিন মিনিটের দূরত্বে নির্মিত হয়েছে দৃষ্টিনন্দন খুরুশকুল সেতু। বাঁকখালী নদীর ওপর নির্মিত এই সেতুকে ঘিরে অর্থনীতিতে সম্ভাবনা দেখছেন সংশ্লিষ্টরা। কিন্তু সেই স্বপ্ন বিলীন হতে চলেছে। সেতুটি শুধুমাত্র দুই পাড়ের মানুষের সংযোগই ঘটায়নি। নতুন করে সংযোগ স্থাপন করেছে খুরুশকুলের অর্থনীতিতেও।
বাঁকখালী নদীর উপর নির্মিত খুরুশকুল সেতুর বৈদ্যুতিক লাইনের তামার তার কয়েক দফায় চুরি হয়ে গেছে। সর্বশেষ ১২ ফেব্রুয়ারি মধ্যরাতে ল্যাম্প পোস্টের নিচের বিদ্যুৎ লাইনের ওপরের ঢাকনা ভেঙে তামার তার কেটে নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। বাঁধা দিতে গিয়ে মারধরের শিকার হন তিন প্রহরী। তাদেরকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে তারগুলো নিয়েছে বলে দাবি করেছেন নিরাপত্তা প্রহরীরা। এতে করে সেতু নিরাপত্তায় প্রহরীরাও নিরাপত্তাহীন হয়ে পড়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
এদিকে, গত মঙ্গলবার বিকেলে চুরি হওয়া বিদ্যুতের আংশিক তার উদ্ধার করেছে স্থানীয়রা। সেতুর পার্শ্ববর্তী একটি মাছের খামারের পুকুরে ফেলে রাখা তারগুলো উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় কক্সবাজার সদর মডেল থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দা মো. ইমরান বলেন, খুরুশকুল সেতু দিয়ে প্রতিদিন দুই পাড়ের হাজার হাজার মানুষ আসা যাওয়া করেন। কিন্তু সন্ধ্যা নামলেই এখন লোকজন সেতু দিয়ে যাতায়াত করতে ভয় পাচ্ছেন। বৈদ্যুতিক তার চুরি হওয়ার পর সেতুর দুই পাশে লাগানো একটি বাতি জ্বলছে। গত সপ্তাহ ধরে চলছে এ অবস্থা। ফলে পুরো সেতু জুড়েই অন্ধকার বিরাজ করে। ঘটছে নানা ধরনের দুর্ঘটনা। গাড়িগুলো হেডলাইট জ্বালিয়ে চলাচল করলেও অন্ধকারে বেশ বিড়ম্বনায় পড়তে হয় পথচারীদের। অন্ধকারে প্রতিদিনই চুরি, ছিনতাইসহ ছোটখাট নানা অপরাধ ঘটছে।
নিরাপত্তাকর্মী কাইছার ইসলাম বলেন, উদ্বোধনের পর সেতুটি সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। এরপর থেকে সেতুর দুই পাশের বাতি চুরি হয়ে যায়। বাকি বাতিগুলো চুরি হওয়ার আশঙ্কায় ছিলাম। এবার তারগুলো নিয়ে গেছে দুবৃর্ত্তরা।
সেতু নির্মাণে নিয়োজিত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মীর আকতার হোসেন লিমিটেডের প্রজেক্ট ম্যানেজার আহম্মদ শিহাব জামান জানিয়েছেন, সেতুটি স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরকে অনেক আগে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে।
কক্সবাজার এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মামুন খান জানান, বেসামরিক বিমান পরিবহণ ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে খুরুশকুল সেতুটি কাজ বাস্তবায়ন করেছে এলজিইডি। বেসামরিক বিমান পরিবহণ মন্ত্রণালয় থেকে সেতুটি এলজিইডিকে হস্তান্তরের জন্য চিঠি দেয়া হয়েছে।
মামুন খান জানান, তার চুরির ঘটনাটি দুঃখজনক। অন্ধকার সেতুর কারণে পথচারীদের মধ্যে ছিনতাই আতঙ্ক বাড়ে। সেতুটির সুরক্ষায় সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করার পাশাপাশি স্থানীয় বাসিন্দাদেরও ভূমিকা রাখতে হবে।
২৫৯ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ৫৯৬ মিটার দৈর্ঘ্যের দৃষ্টিনন্দন এই সেতু গত বছরের নভেম্বরে উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী কক্সবাজার সফরে রেললাইনসহ ১৪টি প্রকল্পের উদ্বোধন করেছেন। তার মধ্যে কস্তুরাঘাট-খুরুশকুল সংযোগ সেতু অন্যতম। কক্সবাজার শহর থেকে নদীর উত্তর পাড়ে খুরুশকুলের আশ্রয়ণ প্রকল্পে যাতায়াতের জন্য বাঁকখালী নদীর ওপর সেতুটি নির্মাণ করা হয়েছে।
নয়াশতাব্দী/টিএ
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ