মাসব্যাপী ২৮তম ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার সাপ্তাহিক ছুটির শেষ শুক্রবারে ক্রেতা-দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভিড় দেখা গেছে। অন্যান্য দিনের তুলনায় শুক্রবার সকাল থেকে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রাজধানীসহ নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, নরসিংদীসহ আশপাশের বিভিন্ন জেলা থেকে লোকজন মেলায় আসতে দেখা গেছে। এতে শেষ সময়ে বেচাকেনা অনেকটা বেশি হওয়ায় খুশি মেলার ব্যবসায়ী ও দোকানদাররা।
শুক্রবার সরেজমিনে মেলা ঘুরে দেখা গেছে, মেলার ২৭তম দিন সাপ্তাহিক ছুটির শেষ শুক্রবার অন্যান্য দিনের তুলনায় লোকসমাগম অনেক বেশি। সকাল থেকে রাত ৭টা পর্যন্ত মেলায় প্রায় ৭৫ হাজার ক্রেতা দর্শনার্থী প্রবেশ করেছেন। মেলায় পুরুষের চেয়ে নারী ক্রেতা দর্শনার্থীর সংখ্যা বেশি।
এবারে মেলায় গৃহস্থালী সামগ্রী, বেডসিট, ভারতীয় চাদর, জুতা, অ্যালুমিনিয়াম, প্লাস্টিক, প্রসাধনী সামগ্রী, বিদেশি কার্পেট, হাতের তৈরি বিভিন্ন পণ্য, সুট ব্লেজার, ক্রোকারিজ, জুয়েলারি, ফার্নিচারের দোকানসহ সব স্টল ও প্যাভিলিয়নে ক্রেতার ভিড় দেখা গেছে। ব্যবসায়ীরা শেষের দিকে মেলায় আগত ক্রেতা-দর্শনার্থীদের আকৃষ্ট করতে ১০ থেকে ৫৩ শতাংশ ছাড় দিতে দেখা গেছে। সেই সুযোগে মেলায় আসা লোকজন কিছু না কিছু কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। তবে শেষ মুহুর্তে বাকি কয়েকদিন বেচাকেনা বাড়বে বলে দাবি ব্যবসায়ীদের। এতে অন্যান্য দিনের চেয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন মেলার দোকানদাররা।
কুমিল্লা থেকে আসা দর্শনার্থী আবু জাফর বলেন, মেলায় প্রবেশের প্রধান সড়কে কিছুটা যানজটের কারণে অনেকটা ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে। তবে মেলার পরিবেশ অনেক ভালো।
ডেমরা থেকে আসা দর্শনার্থী মামুন বলেন, রাজধানীতে যখন মেলা হতো, তখন ছোট পরিসরে হতো। গাদাগাদী করে মেলায় ঘুরা লাগতো। তবে পূর্বাচলে স্থায়ী ভৈন্যুতে মেলা বসায় ঘুরাফেরা ও কেনাকাটা করতে অনেক স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছি।
টঙ্গী থেকে আসা পারভেজ ভূইয়া বলেন, মেলায় পণ্য সামগ্রীর দাম বাহির থেকে কিছুটা বেশি। তবে বাকি পরিবেশ ভালো।
এদিকে, মেলা শুরুর প্রথম শুক্রবার রাজধানীতে প্রবেশের প্রধান সড়ক শেখ হাসিনা সরনীতে ম্যারাধন দৌড়। টানা শৈত্যবাহ, দুই দফা বিশ্ব ইজতেমা এবং রাজধানীতে বই মেলা শুরুর কারণে অন্যান্য বছরের তুলনায় সাপ্তাহিক কর্মদিবসে তেমন লোকসমাগম ও আশানুরুপ বেচাকেনা না হওয়ায় দুই দফায় বাণিজ্য মেলা ব্যবসায়ী সমিতি ও মেলার গেইট ইজারা কর্তৃপক্ষ মেলা নির্ধারিত সময় থেকে আরও ৫ দিন সময় বাড়ানোর জন্য কর্তৃপক্ষের বরাবর লিখিতভাবে আবেদন করেছিল। তবে আগামী ২৯ ফেব্রুয়ারি পূর্বাচল বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ- চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সাবিউশন সেন্টারে অনুষ্ঠিত হবে আন্তর্জাতিক ফার্মাসিউটিক্যাল মেলা, এ ছাড়া চট্রগ্রামে শুরু হয়ে গেছে দ্বিতীয় বৃহত্তম আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা। তাই মেলার সময় বাড়ানো যাবে না বলে জানিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো।
বাণিজ্য মেলা গেইট ইজারা ছালাউদ্দিন ভূইয় জানান, মেলা নির্দিষ্ট সময়ের না বসায় অন্যান্য বছরের মত জমে উঠেনি। তা ছাড়া মেলা শুরুর প্রথম শুক্রবার জাতীয় ম্যারাথন দৌড়। টানা শৈত্য প্রবাহ, বিশ্ব ইজতেমা, বই মেলা শুরু হওয়ায় চাহিদা অনুযায়ী কেমন লোকসমাগম হচ্ছে না। হয়নি তেমন বেচাকেনা। তাই সকল বিষয় বিবেচনা করে ব্যবসায়ীদের পক্ষে মেলার সময় আরও ৫ দিন বাড়ানোর জন্য প্রধানমন্ত্রী, বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব ও রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর ভাইস চেয়ারম্যান কাছে লিখিত আবেদন করেছিলো। সেই আবেদন প্রত্যাখান হওয়ায় অনেকটা হতাশ তারা। তবে শেষ সময়ে লোকসমাগম ভালো হলে লোকসান কিছুটা কম হবে।
রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) সচিব বিবেক চন্দ্র সরকার বলেন, শেষ মুহূর্তে অন্যান্য বছরের তুলনায় মেলায় আশানুরুপ লোক সমাগম ঘটছে। দুই একদিনের মধ্যে বিভিন্ন দেশ থেকে গত বছরের চেয়ে বেশি রফতানি আদেশ আসবে বলে তিনি আশাবাদী।
নয়া শতাব্দী/এসআর
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ