ঢাকা, রোববার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৭ আশ্বিন ১৪৩১, ১৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

সিলেট নগরে ৯০ ভাগ জলাধার ভরাট

প্রকাশনার সময়: ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০৫:৪৩ | আপডেট: ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১৩:৪৮

লালদিঘি, মাছুদিঘি, চারাদিঘি, সাগর দিঘি, রামের দিঘিসহ হরেক দিঘির নামে সিলেটের অধিকাংশ জায়গার নামকরণ। এসব নাম সব বয়সের মানুষের মুখস্থ। এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যাতায়াতের জন্য রিকশাচালককে বলতে বলতেই ভালো করে স্মরণ থাকে নামগুলো।

কিন্তু দিঘি কোথায়? কিংবা কোনোকালে কি দিঘি ছিল? এমন প্রশ্ন সবার। অবশ্য এখনো কিছু দিঘি টিকে আছে। এরই মাঝে নগর সম্প্রসারণের কারণে ভরাটের শঙ্কায় রয়েছে আরো অগণন পুকুর-দিঘি। তবে সিলেট সিটি করপোরেশনের (সিসিক) মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বারবার পুকুর-দিঘি রক্ষায় উদ্যোগ নেয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও দীর্ঘ দিনেও সিসিকের পক্ষ থেকে এখনো পূর্ণাঙ্গ কোনো তালিকাও হয়নি। বরং গত বছরের শেষের দিকে ১৮নং ওয়ার্ডের সোনারপাড়া এলাকায় একটি পুকুর নিজেরাই ভরাট করে সিসিক। আর এভাবেই নগরে কমেছে জলাধার। সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান বলেন, আমি ১৯৮৮ সালের একটি জরিপের ফলাফলে দেখেছিলাম সিলেট নগরের ২২ শতাংশ জলাধার আছে। কিন্তু এ সংখ্যা এখন কমে হয়েছে মাত্র ১০ শতাংশ। সে হিসেবে ৩২ বছরে আরও ১০ শতাংশ জলাধার কমেছে। এদিকে বেলা সিলেটের এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, সিলেট সিটি করপোরেশনের মোট জলাভূমির পরিমাণ ১৩৫৬.৩০ একর বা ৫৪৮.৮ হেক্টর। এর মধ্যে পুকুর, দিঘি, খাল অন্তর্ভুক্ত। সংখ্যার দিক থেকে কেউ কেউ বলছেন শতাধিক পুকুর ছিল। সিলেট সিটি করপোরেশনের তথ্যমতে পুকুর-দিঘি ২৮টি, বেলার তথ্য অনুযায়ী এর সংখ্যা ৩৬টি। আর মাহবুব সিদ্দিকী রচিত বাংলাদেশের বিলুপ্ত ‘দীঘি-পুষ্করিণী-জলাশয়’ বইয়ে ৬০টি পুকুর-দিঘির নাম পাওয়া যায়। তবে এখনো টিকে আছে কয়েকটি দিঘি-ছড়া ও পুকুর।

যেগুলো আপৎকালে সিলেট নগরীর মানুষের একমাত্র ভরসা হিসেবে কাজে লাগে। যার প্রমাণ পাওয়া যায় গেল বছরের নভেম্বর মাসে সিলেটের কুমারগাঁও বিদ্যুৎকেন্দ্রে আশুন লাগার পর। সে সময় প্রায় ৫৩ ঘণ্টা বিদ্যুৎবিহীন নগরে মানুষের একমাত্র ভরসা হয়ে উঠেছিল টিকে থাকা কয়েকটি পুকুর। কিন্তু রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে সেগুলো সময়ে সময়ে ভরাট হচ্ছে। আবার কোনোটি হয়েছে ময়লার ভাগাড়। আর এসব এলাকায় অধিকাংশ বাড়িতেই এখনো আছে বেশ কয়েকটি দিঘি। কিন্তু নগর সম্প্রসারণের কারণে জায়গার দাম বেড়ে যাওয়ায় এগুলো ভরাটের শঙ্কা প্রকাশ করে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) সিলেটের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল করিম কিম বলেন, নগরের সম্প্রসারিত অংশে অগণন পুকুর-দিঘি আছে। যার সংখ্যা কম হলেও দুই শতাধিক হবে। কিন্তু এখন নগরে অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় মানুষ অধিক লোভে সেগুলো ভরাট করে ফেলবে। যা আমরা অতীতে দেখেছি। তাই এখনই এগুলোর একটি তালিকা করা উচিত।

অপরদিকে জলাধার রক্ষা আইন অনুযায়ী যেসব জলাধার বিলীন হয়েছে সেগুলো পুনরায় খনন করার বিধান থাকলেও সিসিকের পক্ষ থেকে কোনো উদ্যোগ নেই জানিয়ে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) সিলেটের সমন্বয়ক শাহ সাহিদা আখতার নয়া শতাব্দীকে বলেন, গত বছরের ২৯ নভেম্বর বেলার পক্ষ থেকে একটি সেমিনার হয়েছিল। তখন মেয়র আমাদের আশ্বাস দিয়েছিলেন দিঘি-পুকুরের তালিকা করতে একটি কমিটি করা হবে। এর পর আমরা বারবার চিঠি দিয়েও কাজ হয়নি। তাছাড়া মেয়র বারবার আশ্বাস দিলেও এখনো কোনো পুকুর বা দিঘি খননের উদ্যোগ নেননি। এভাবে চলতে থাকলে সকল জলাধার হারিয়ে যাবে।

নয়া শতাব্দী/এমআর

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ