মুন্সীগঞ্জে চালককে গলা কেটে হত্যার পর অটোরিকশা ছিনতাইয়ের ঘটনায় মামা-ভাগ্নেকে ফাঁসির আদেশ দিয়েছেন আদালত। একই সাথে তাদেরকে ২০ হাজার টাকা করে অর্থদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
বুধবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) দুপুর একটার দিকে অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ ২য় আদালতের বিচারক বেগম খালেদা ইয়াসমিন উর্মি এ রায় দেন।
দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- টঙ্গিবাড়ী উপজেলার নেত্রাবর্তী গ্রামের মৃত সায়েদ শেখের ছেলে ইলিয়াস শেখ (৩২) ও তার ভাগ্নে পাশের লৌহজং উপজেলর ছত্রিশ গ্রামের মীর হোসেন মুন্সীর ছেলে রাকিবুল ইসলাম রাকিব (২৩)।
জানা গেছে, নিহত সাহাবুদ্দিন ২০২০ সালের ২৪ মে সকাল ৮টার দিকে তার অটো নিয়ে বাড়ি থেকে বের হন। সকাল ৯টার দিকে টঙ্গিবাড়ী উপজেলার কুরমিরা হতে বালিগাঁও বাজারে তালের শাঁস নিয়ে যাওয়ার কথা বলে ভাড়া করে কুরমিড়া গ্রামে নিয়ে যায়। পরে নির্জন বাগানে নিয়ে আসামি ইলিয়াস প্রথমে গলায় গামছা পেঁচিয়ে ধরে এবং রাকিব নিহতের হাত পা ধরে রাখে। পরে তাকে ওই নির্জন বাগানের পাশের মৃত ভেবে নিচু জমিতে ফেলে দেয়। এই আসামিরা দেখে সাহাবুদ্দিন নড়াচড়া করছে। পরে ইলিয়াস গলায় দা দিয়ে দুটি কোপ দিয়ে তার শ্বাসনালী কেটে হত্যা করে। পরে তার অটো ও পকেটে থাকা মোবাইল নিয়ে পালিয়ে যায়। ইলিয়াস মোবাইলটি নিয়ে তার পরিচিত সালাম নামের এক ব্যক্তির কাছে বিক্রি করে দেয়। তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে সালামকে পুলিশ গ্রেফতার করলে তিনি এই মোবাইলটি ১ নম্বর আসামি ইলিয়াসের কাছ থেকে কিনেছে বলে জানায়। পুলিশ ইলিয়াসকে গ্রেফতার করলে মামলার মূল রহস্য উদঘাটন হয়।
এ ঘটনায় নিহতের বাবা আবুল সেখ বাদী হয়ে টঙ্গিবাড়ী থানায় অজ্ঞাতনামা আসামি করে একটি অভিযোগ দায়ের করেন। পরে মামলাটি অধিকতর তদন্তের জন্য মুন্সীগঞ্জ গোয়েন্দা পুলিশকে দেওয়া হলে গোয়েন্দা পুলিশ নিহতের মোবাইলের সূত্র ধরে সালাম নামের ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে। মোবাইলের সূত্র ধরে হত্যার রহস্য উদঘাটন করা হয়। নিহতের অটো কেনাবেচায় জড়িত থাকায় নিহতের বাবা আবুল সেখের মামলায় আরও ২ জনকে আসামি করে পুলিশ। তারা হলেন, মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার ডিঙ্গাভাঙ্গা গ্রামের হাজী ইব্রাহিম মাদবরের ছেলে রাকিব মাদবর রাকিব (৩২) ও টঙ্গিবাড়ী উপজেলার চাপ গ্রামের মৃত মতিন শেখের ছেলে ও কবির হোসেনের কাছে বিক্রি করে দেয়। আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় তাদের বেখসুর খালাস দেন আদালত।
মামলার বাদী সাহাবুদ্দিন শেখ বলেন, আমি রিকশা চালিয়ে সংসার চালাই। আমার ৪ ছেলে মেয়ের মধ্যে সাহাবুদ্দিন তৃতীয় ছেলে ছিল। এই ছেলেটাই আমাকে আয় রোজগার করে দিতো । আমার সেই ছেলেটারে ওরা মেরে ফেলল। আদালত যে রায় দিয়েছে আমি তাতে খুশি। রায় দ্রুত দেখে যেতে চাই।
নিহতের মা শাহানাজ বেগম বলেন, আমার ছেলেটাকে ওরা মেরে ফেলল। কি দোষ করেছিল আমার ছেলে। আমার ছেলেকে ওরা খুব কষ্ট দিয়ে মারছে। আমি ওদের ফাঁসি দ্রুত দেখে যেতে চাই।
নিহতের বোন খাদিজা বলেন, আমার ভাইটাকে ওরা খুব কষ্ট দিয়ে মারছে। এ রায়ে আমরা খুশি হয়েছি। আমরা দ্রুত ওদের ফাসিঁ চাই।
রাষ্ট্র পক্ষের অতিরিক্ত পিপি সিরাজুল ইসলাম পল্টু বলেন, এই মামলায় মোট ১৮ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য দিয়েছেন। সাক্ষ্য প্রমাণের ভিত্তিতে সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় আদালত ২ জনের ফাঁসির আদেশ দিয়েছে। রায়ে আমরা রাষ্ট্রপক্ষ সন্তুষ্টি প্রকাশ করছি।
নয়া শতাব্দী/এসএ
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ