ঢাকা, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ভালোবাসার এক অনন্য দৃষ্টান্ত নীলকান্ত-গীতা দম্পতি

প্রকাশনার সময়: ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:৩৪

শারীরিক গঠনে উচ্চতা কম হওয়ায় প্রতিবেশী, আত্মীয়-স্বজন, এমনকি পরিবারের কাছে হতে হয় নানা কটাক্ষের শিকার। পড়াশোনা করে বড় হওয়ার স্বপ্নে বিভোর থাকলেও তা সম্ভব হয়নি। তবে পড়াশোনা বা চাকরি করে সফল না হলেও, ভালোবেসে সফল হয়েছেন দুজনে।

একজন যেন আরেকজনের পরিপূরক। হাজারো অভাবে ছেড়ে দেননি একে অন্যের হাত। নীলকান্ত-গীতা দম্পতি, ভালোবাসার এমন জুটি এখন এলাকায় ভালোবাসার এক অনন্য দৃষ্টান্ত।

ভালোবেসে একসাথে দীর্ঘ সময় ধরে পথ চললেও, ঠুনকো কারণ কিংবা মতের অমিল ঘটলেই একজন আরেক জনকে ছেড়ে চলে যায়। বর্তমানে সামান্য কারণে বিচ্ছেদ হয় স্বামী-স্ত্রীর মাঝে। ভালোবাসার সংসার এখন আর তেমন মজবুত নয়। তবে হাজারো মতের অমিল, মানুষের কটাক্ষ, সমাজের হেয় চোখে তাকানোসহ কোনোকিছুই ফাটল ধরাতে পারেনি নীলকান্ত-গীতা দম্পতির সুখের সংসারে। সবকিছু উপেক্ষা করে ভালোবেসে একসঙ্গে অতিক্রম করছেন দুই যুগেরও বেশি সময়।

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার নারগুন ইউনিয়নের জোতপাড়া গ্রামের বাসিন্দা নীলকান্ত ও গীতা রানী। কয়েক মাসের প্রেমের পর ১৯৯৮ সালে পারিবারিকভাবে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন তারা। সাংসারিক জীবনে এক মেয়ে সন্তানের অভিভাবক। দুজনের উচ্চতা প্রায় ৩ ফুট। এতো কম উচ্চতা ও খর্বকায় হওয়ায় দুজনকেই শুনতে হয়েছে সমাজের মানুষের নানান কটু কথা। কিন্তু সেসব কথাকে পাত্তা না দিয়ে একে অপরকে ভালোবেসে একসাথে পার করে দিয়েছেন দুই যুগেরও বেশি সময়।

স্থানীয় স্কুল শিক্ষক কমল রায় বলেন, তারা শুধু দেখতেই খাটো। এটাই তাদের একটা অপূর্ণতা। সবার জীবনেই একটা না একটা সমস্যা থাকে। তাদের জীবনেও এরকমটা ছিল। তবে তাদের যে মিল মহব্বত, এটা অনেক বেশি। আমরা তাদের মাঝে কখনো বড় কোনো সমস্যা দেখিনি। তারা সবসময় হাসিখুশি থাকার চেষ্টা করে। তাদের মতো স্বামী-স্ত্রী প্রতিটা সংসারে হওয়া উচিত।

গীতা রানী বলেন, সংসার মানে সমস্যা, ঝগড়া ও নানা ঝুট ঝামেলা। অনেক সময়ে এসব বাড়লেও কখনো চিন্তাও করি নাই তাকে ছেড়ে যাবো। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত একসাথে থাকার দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ আমরা।

নীলকান্ত বর্মণ বলেন, সৃষ্টিকর্তা আমাকে এভাবেই পৃথিবীতে বাঁচাতে চেয়েছেন। তিনি আমাকে ভালো রেখেছেন। মানুষের কটু কথা শুনেও আমি পড়াশোনা চালিয়ে গেছি। তবে সমস্যার কারণে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেওয়া হয়নি। তারপরে কাজ করে সংসার চালাই। একটা মেয়ে আমাদের। তাকে পড়াশোনা করিয়ে বিয়ে দিয়েছি।

বাবার দেওয়া ভিটেমাটি ছাড়া আর কিছু নেই বলে আক্ষেপ জানিয়ে তিনি বলেন, শুধু যে ঘরে আমরা থাকি, সেটাই সম্বল। বাবা-মায়ের ঘরটা মায়ের নামে। কিছুদিন আগে বাবা মারা গেছেন। মা আমার নামে জমিটা দিতে চান। তবে সেটা আমার নামে করে নেওয়ার মতো কোনো খরচ আমার নেই। কয়েক মাস আগে একটা দোকানে থাকতাম। সেটা বাদ দিয়ে এখন দিনমজুরি করি। ঘরটাও আমার প্রায় ভাঙা। টাকার অভাবে সংস্কার করতে পারছি না। তারপরেও আমার স্ত্রী সঙ্গ দিয়ে আসছেন। কখনো তিনি আমাকে হতাশ করেননি। সবসময় আমাকে সার্পোট দিয়ে থাকেন। এটা আমার জীবনের বড় প্রাপ্তি।

এসময় ঘর সংস্কারের জন্য তাকে সহযোগিতা করার জন্যও আবেদন জানান অসহায় নীলকান্ত বর্মণ।

এ বিষয়ে সদর উপজেলার নারগুন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সেরেকুল ইসলাম বলেন, তারা দুজনে একই উচ্চতার। তাদের মধ্যে ভালোবাসার মধুর সম্পর্ক খুব কাছ থেকে দেখেছি। তারা সুন্দর করে জীবনযাপন করছেন। তাদের ভালোবাসার কথা এখন সবার মুখে মুখে। ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে সবসময় তাদের পাশে থাকার চেষ্টা করা হয় বলেও জানান এই ইউপি চেয়ারম্যান।

নয়াশতাব্দী/এনএস

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ