ঢাকা, বুধবার, ৮ জানুয়ারি ২০২৫, ২৪ পৌষ ১৪৩১, ৭ রজব ১৪৪৬

মেডিকেলে চান্স পেলেন জমজ তিন ভাই

প্রকাশনার সময়: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৮:৪৬

ধুনট উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রামের তিন জমজ ভাই ভর্তি পরীক্ষায় মেডিকেল কলেজে চান্স পেয়েছেন। তিন জমজ ভাইয়ের মধ্যে মো. মাফিউল হাসান গত বছর ঢাকার সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ এবং এবছর মো. সাফিউল হাসান দিনাজপুর মেডিকেলে ও মো. রাফিউল হাসান নোয়াখালী মেডিকেল কলেজে চান্স পেয়েছেন।

জমজ এই তিন সহোদর ধুনট উপজেলার বথুয়াবাড়ী গ্রামের স্কুল শিক্ষক গোলাম মোস্তফার ছেলে। মা আর্জিনা বেগমসহ বর্তমানে তাদের ৬ সদস্যের পরিবার। মায়ের পাশাপাশি তাদের আরও একটি ভাই ও বোন রয়েছে। এই তিন সহোদরের বয়স যখন ৫ তখনই মারা গেছেন স্কুল শিক্ষক বাবা গোলাম মোস্তফা।

ধুনট সরকারি নইম উদ্দিন পাইলট মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক তফিজ উদ্দিন জানান, মঙ্গলবার তিন ভাই এক সঙ্গে স্কুলে আসে। শিক্ষকদের কাছে দোয়া নিতে এসেছিল। তারা মেডিকেলে চান্স পাওয়ায় শিক্ষকরা খুশি। এটা স্কুলের জন্য গৌরবের বিষয়।

তিন শিক্ষার্থীর মা আর্জিনা বেগম জানান, ২০০৯ সালে ওদের বাবা গোলাম মোস্তফা হার্ট এটাকে মারা যায়। তখন ওদের বয়স ৫ বছর। বাবার স্নেহ মমতা পায়নি ওরা। বাবা মারা যাওয়ার পর তিন সন্তানকে পড়ালেখা করানো নিয়ে বিপাকে পড়েন তিনি। তিনি আরও বলেন, নিজে কষ্ট করে জমি বিক্রি করে সন্তানদের পড়ালেখা করিয়েছেন। প্রায় ৫ বিঘা জমি ছিল। বাবার বাড়ির জমিও বিক্রি করে ওদের মানুষ করার জন্য চেষ্টা করেছেন। অবশিষ্ট যা আছে, তাও বিক্রি করে ওদের চিকিৎসক বানাবেন, যাতে তাদের মত গরীব মানুষদের সেবা করতে পারে।

মাফিউল হাসান জানান, তিন জমজ ভাই বগুড়ায় মেসে একই সঙ্গে থেকে সরকারি শাহ সুলতান কলেজে পড়েছি। মা কষ্ট করে এবং জমি বিক্রি করে পড়ালেখা খরচ যোগান দিয়েছেন। কখনোই আমাদের কষ্ট দেননি। গ্রামের মধ্যে আমরাই প্রথম মেডিকেলে চান্স পেয়েছি। এজন্য গ্রামের মানুষের ভালবাসা পাচ্ছি।

শাফিউল হাসান জানান, আজ বাবা থাকলে কত খুশী হতেন। বাবাকে হারিয়েছি শিশুকালে। এখন মাই বাবার অভাব পূরণ করছেন। মানুষের সেবা করার জন্য চিকিৎসক হতে পারি, এই দোয়া চাই সবার কাছে।

রাফিউল হাসান জানান, অসুস্থ্য অবস্থায় বাবা মারা যায়। যখন বুঝতে পারলাম বাবার সেই কথা তখন থেকেই তিন ভাই প্রতিজ্ঞা করি ডাক্তারি পড়বো এবং মানবতার কাছে গরীব মানুষের চিকিৎসা সেবায় নিজেদের নিয়োজিত হবো।

মেডিকেলে পড়ার সুযোগ পাওয়া তিন ভাইয়ের চাচা ও ধুনট সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক গোলাম ফারুক বলেন, ওদের বাবা তো ২০০৯ সালে মারা যান। তিনি ছিলেন হাইস্কুলের শিক্ষক। ওদের মা এই সংসারের হাল ধরেছেন। ওদের মা অনেক কষ্ট করে সন্তানদের পড়ালেখা করিয়েছে। অর্থনৈতিক সমস্যা ছিল। কিন্তু পড়ালেখা চালিয়ে গেছে। আমরাও তাদের উৎসাহিত করেছি।

নয়া শতাব্দী/আরজে

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ