সাভারের আশুলিয়ায় দি ল্যাব এইড হাসপাতালে ফের ভুল চিকিৎসায় মিজানুর রহমান নামে এক রোগীর মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এর আগেও এই হাসপাতালটির বিরুদ্ধে ভুল অপারেশনে রোগীর মৃত্যুর অভিযোগ রয়েছে। প্রতিবারই একটি প্রভাবশালী মহল ভুক্তভোগীদের সাথে আপোষ মীমাংসা করিয়ে দেন বলে একাধিক সূত্র জানা গেছে।
সোমবার (১২ ফেব্রুয়ারি) সকালে উপজেলার জামগড়া ছয়তলা বাসস্ট্যান্ড এলাকায় দি-ল্যাব এইড হাসপাতালে ওই রোগীর মৃত্যু হয়।
মৃত মিজানুর রহমান মাদারীপুরের কালকিনি থানা সূর্যমণি গ্রামের মৃত-লুৎফর ব্যাপারীর ছেলে। তিনি আশুলিয়ার জামগড়া এলাকায় পরিবারসহ ভাড়া বাসায় থেকে হোটেল ব্যবসা করতেন বলে জানা গেছে।
মিজানুরের পরিবার জানায়, পিত্তথলিতে পাথর অপসারণে অস্ত্রোপচারের জন্য রোববার দুপুর আড়াইটার দিকে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। রাত সোয়া ৮টার দিকে হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. সাকিফ রহমান তার অস্ত্রোপচার করেন। তবে এরপর থেকেই বমি শুরু হয় রোগীর। সকালের দিকে ব্যথা বৃদ্ধি পাওয়ায় নার্স ডাকলে একটি ইনজেকশন দেওয়া হয়। এরপরও ব্যথা না কমায় আরও দুটি ইনজেকশন দেওয়া হয়। তার পরপরই মুখ ও নাকে ফেনা বের হয়ে তিনি নিস্তেজ হয়ে পড়েন। তখন নার্সরা এসে দ্রুত তাকে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দিয়ে অন্য হাসপাতালে নিতে বলে। তখন নবীনগর গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র হাসপাতালে নিলে সেখানকার চিকিৎসকরা জানান তিনি আগেই মারা গেছেন।
মৃত মিজানুরের ছোট ভাই রিপন হোসেন বলেন, পিত্তথলির অপারেশন করার জন্য তাকে দি-ল্যাব এইড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। রাতে অপারেশন করার পর সারারাত বমি করছে। এজন্য নার্স ডাকা হয়েছে। নার্স প্রথম ইনজেকশন দেওয়ার পর তার চেহারা সবুজ হয়ে গেছে। আরও ব্যথা বাড়ছে। এরপর আরও একজন আসছে। তিনি ডাক্তার ও না, নার্সও না। কিছুই না। ওই ব্যক্তি আরও দুটি ইনজেকশন দিয়েছে। ওই ইনজেকশন দেওয়ার পরে নাক-মুখ দিয়ে ফেনা বের হয়ে সে মারা যায়। মারা যাওয়ার পরে যারা মহিলা নার্স ছিল তারা মরদেহ তাড়াতাড়ি বের করে দিয়ে বলে, অন্য মেডিকেলে নিয়ে যান। অন্য মেডিকেলে নিয়ে গেছি তো তারা বলছে এ তো মৃত।
এ বিষয়ে কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. সাকিফ রহমানের সঙ্গে কথা বলতে গেলে হাসপাতালে তাকে পাওয়া যায়নি। তার মোবাইল ফোন নম্বরে কল দিলেও তিনি ফোন ধরেননি।
দি-ল্যাব এইড হাসপাতালের পরিচালক লোকমান হোসেন বলেন, আমার এখানে কালকে এক রোগী অপারেশন হয়েছে। আজ সকালে রোগীর অবস্থা খারাপ হয়েছে। পরে তাকে ঢাকা মেডিকেলে পাঠানো হয়। শ্বাসকষ্ট বেড়ে গিয়েছিল। তবে চিকিৎসায় ভুলের অভিযোগের বিষয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
এর আগে, ২০২২ সালের ২৭ এপ্রিল এই হাসপাতালে জরায়ুর অপারেশন করান ৪৫ বছর বয়সী রহিমা আক্তার। তবে চিকিৎসক তার মূত্রথলি কেটে অন্যত্র লাগিয়ে দেন। এরপর তাকে ঢাকা মেডিকেলে হস্তান্তর করা হয়। সেখানে গিয়ে স্বজনরা ভুল চিকিৎসার বিষয়টি জানতে পারেন। ৩৫ দিন রোগেভুগে মারা যান সেই রোগী।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ সায়েমুল হুদা বলেন, বিষয়টি আমি শুনেছি। তবে কোনো অভিযোগ পাইনি। বিষয়টি দেখা হচ্ছে।
নয়া শতাব্দী/এসএ
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ