ঢাকা, রোববার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৭ পৌষ ১৪৩১, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বেও যৌতুকবিহীন বিয়ে

প্রকাশনার সময়: ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ২১:২১

বিশ্ব ইজতেমার মূল আকর্ষণ যৌতুকবিহীন বিয়ে এবারের ইজতেমার প্রথম পর্বের মতো দ্বিতীয় পর্বেও অনুষ্ঠিত হয়েছে। কনের সম্মতিতে ও তার অনুপস্থিতিতে দ্বিতীয় পর্বের দ্বিতীয় দিনে শনিবার বাদ আসর বয়ানের পর ইজতেমা ময়দানে বিয়ের এ কার্যক্রম অনুষ্ঠিত হয়। এপর্বে ৭ জোড়া বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হয়। অন্যান্যবার যা ছিল শতাধিক। বর এবং বর-কনে উভয়পক্ষের অভিভাবকদের উপস্থিতিতে ও সাক্ষীতে তাদের বিয়ে পড়ানো হয়।

শনিবার (১০ ফেব্রুয়ারি) বিয়ে পড়ান তাবলিগ জামাতের শীর্ষ মুরব্বি মাওলানা সাদ কান্ধলভীর বড় ছেলে মাওলানা ইউসুফ বিন সাদ কান্ধলভী। বিয়ে পড়ানো শেষে নব দম্পতিদের জন্য দোয়া করেন উপস্থিত লাখ লাখ মুসল্লি।

তাবলীগের শীর্ষ মুরুব্বি মাওলানা জোবায়ের ও মাওলানা সা’দ কান্ধলভী অনুসারীদের মতবিরোধের কারণে ২০১৬ সাল হতে ২০১৯ সাল পর্যন্ত ইজতেমা ময়দানে যৌতুকবিহীন বিয়ে অনুষ্ঠিত হয়নি। তবে বর ও কনে পক্ষের সম্মতিতে তাদের সংশ্লিষ্ট এলাকার মসজিদে যৌতুকবিহীন বিয়ে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছিল।

তাবলিগের রেওয়াজ অনুযায়ী ইজতেমার দ্বিতীয় দিন বাদ আসর ইজতেমা ময়দানে বসে যৌতুকবিহীন বিয়ের আসর। কনের সম্মতিতে ও তার অনুপস্থিতিতে বর এবং কনে পক্ষের লোকজনের উপস্থিতিতে ওই বিয়ে অনুষ্ঠিত হয়। বিয়েতে মোহরানা ধার্য করা হয় ‘মোহর ফাতেমী’র নিয়মানুযায়ী। এ নিয়ম অনুযায়ী মোহরানার পরিমাণ ধরা হয় দেড়শ’ তোলা রূপা বা তার সমমূল্য অর্থ। বিয়ের পর নব-দম্পতিদের সুখ-সমৃদ্ধিময় জীবন কামনা করে আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের দরবারে মোনাজাতের মাধ্যমে দোয়া করা হয়। এসময় মঞ্চের আশপাশের মুসল্লিদের মাঝে খোরমা খেজুর ও মিষ্টি বিতরণ করা হয়।

ইজতেমা শেষে বরেরা বাড়ি ফিরে বাসরঘর করবেন বলে বিয়ের অনুষ্ঠানে উপস্থিত নয়া বরেরা জানিয়েছেন। তারা জানান, বিয়ের অনুষ্ঠানটি খুবই ভালো লেগেছে আমাদের। বিয়ের সাথে সাথে বউ কাছে পাইনি ঠিক কিন্তু শ্বশুরদের তাৎক্ষণিক খোরমা খেজুরের আদর আপ্যায়ন খুবই ভালো লেগেছে। নয়া বরেরা দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়ে বলছেন, আপনাদের দোয়ায় আমাদের দাম্পত্য জীবন আরও সুখ ও শান্তিময় হবে ইনশাআল্লাহ।

শেষদিনে যারা বয়ান করবেন : এবারের বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বের শেষদিন রবিবার (১১ ফেব্রুয়ারি) ফজরের পর বয়ান করবেন ভারতের মুফতি মাকসুদ। তার বয়ান বাংলায় তরজমা করবেন মাওলানা আব্দুল্লাহ। তার বয়ানের পর হেদায়েতের কথা বলে বয়ান করবেন মাওলানা সাদ কান্ধলভীর বড় ছেলে মাওলানা ইউসুফ বিন সাদ কান্ধলভী।

এসময় তার বয়ান বাংলায় তরজমা করবেন মাওলানা মনির বিন ইউসুফ। বয়ান শেষে আখেরী মোনাজাত পরিচালনা করবেন মাওলানা ইউসুফ বিন সাদ।

বিদেশি মুসুল্লি : বিশ্ব ইজতেমার এ পর্বের মিডিয়া সমন্বয়কারী মোহাম্মদ সায়েম জানিয়েছেন, শনিবার দুপুর পর্যন্ত বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্বে বিশ্বের ৬২টি দেশের প্রায় ৮ হাজার জন বিদেশি মুসল্লি অংশ নেন। তাছাড়া এপর্বে দেশের ৬৪টি জেলার কয়েক লাখ মুসল্লিরা ইজতেমায় অংশ নিয়েছেন। ভিআইপিরা মোনাজাতে অংশ নেবেন।

বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বের আখেরি মোনাজাতে মন্ত্রী পরিষদের একাধিক সদস্য, সংসদ সদস্য বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ, বিভিন্ন সরকারি বেসরকারিসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও বিভাগের কর্মকর্তাগণ অংশ নেবেন।

আরও এক মুসল্লির মৃত্যু : টঙ্গীতে এবারের বিশ্ব ইজতেমায় আসা আরও এক মুসল্লি শনিবার মারা গেছেন। তার নাম মোনতাজ উদ্দিন (৭৮)। তিনি ঢাকার বংশাল থানার বাবুবাজার এলাকার মৃত নিজাম উদ্দিনের ছেলে। তিনি ইজতেমা ময়দানের ১১ নম্বর খিত্তার ৫৬০৭ নম্বর খুঁটিতে অবস্থানকালে বার্ধক্যজনিত কারণে শনিবার সকাল পৌনে ৭টার দিকে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাকে হাসপাতালে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। এ নিয়ে এবারের ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বে মোট ৬ জন মুসুল্লি মারা গেছেন। শনিবার সকাল পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে তারা মারা যান।

মোনাজাতের দিন চলবে শ্যাটল বাস ও বিশেষ ট্রেন: গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মো. মাহবুবুর রহমান জানান, প্রথম পর্বের মতো দ্বিতীয় পর্বেও রোববার আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে এবারের বিশ্ব ইজতেমা। শনিবার তিনি ইজতেমার শীর্ষ মুরুব্বিদের বরাত দিয়ে জানান, দ্বিতীয় পর্বের আখেরি মোনাজাত সকাল ১০টা থেকে সাড়ে ১০ টার মধ্যে অনুষ্ঠিত হয়ে যাবে। এখন পর্যন্ত আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভাল আছে। কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।

তিনি জানান, ইজতেমায় মুসল্লিদের আসা-যাওয়া নির্বিঘ্ন করতে শনিবার মধ্যরাত থেকে রোববার আখেরি মোনাজাতের দিন বিকেল পর্যন্ত ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের গাজীপুরের ভোগড়া বাইপাস মোড় থেকে আব্দুল্লাহপুর এবং টঙ্গী-কালীগঞ্জ সড়কের মীরের বাজার হতে টঙ্গী স্টেশন রোড হয়ে কামারপাড়া ও সাভারের বাইপাইল থেকে আব্দুল্লাহপুর পর্যন্ত অ্যাম্বুলেন্স ও পুলিশের গাড়ি ছাড়া সকল প্রকার সাধারণ যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকবে। এ ছাড়া ঢাকা বাইপাস সড়কের ভোগড়ায়, শাখা রোড বোর্ডবাজার, মীরেরবাজার থেকে আসা প্রত্যেকটি সড়ক ক্রসিংগুলোতে বন্ধ করে দেয়া হবে। তবে মুসল্লিদের যাতায়তের সুবিধার্থে আখেরি মোনাজাতের দিন রোববার ভোর হতে গাজীপুরের ভোগড়া বাইপাস মোড় এলাকা থেকে ইজতেমাস্থল পর্যন্ত মুসুল্লিদের সুবিধার্থে পুলিশের পক্ষ থেকে শ্যাটল বাস (ইজতেমার স্টিকার লাগানো) চলাচল করবে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত এ ট্রাফিক ব্যবস্থা অব্যাহত থাকবে।

এছাড়াও আখেরি মোনাজাত উপলক্ষ্যে বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা রয়েছে। ইজতেমা উপলক্ষ্যে ঢাকা-ময়মনসিংহ ও ঢাকা-চট্রগ্রাম রুটে ট্রেনগুলো টঙ্গী রেলস্টেশনে যাত্রাবিরতি করবে। গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মো. মাহবুবুর রহমান শনিবার ইজতেমার শীর্ষ মুরুব্বিদের বরাত দিয়ে জানান, দ্বিতীয় পর্বের আখেরি মোনাজাত রোববার সকাল ১০টা থেকে সাড়ে ১০টার মধ্যে অনুষ্ঠিত হয়ে যাবে।

নিরাপত্তা: বিশ্ব ইজতেমা উপলক্ষ্যে ইজতেমা ময়দানসহ আশপাশ এলাকায় ৫ স্তরের কড়া নিরাপত্তার মধ্যে রয়েছে। ইজতেমা মাঠে প্রবেশের রাস্তায় নিরাপত্তা তল্লাশি পেরিয়ে মুসল্লিদের মাঠে প্রবেশ করতে হচ্ছে। প্যান্ডেলের ভিতর ও বাইরে মুসল্লি বেশে রয়েছে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার প্রায় ৩ হাজার সদস্য। ইজতেমা ময়দানের সব প্রবেশপথে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা ও বিভিন্ন পয়েন্টে পর্যবেক্ষণ টাওয়ার স্থাপন করা হয়েছে। ভ্রাম্যমান আদালত সার্বিক আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় কাজ করছে।

নয়া শতাব্দী/এসএ

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ