ঢাকা, বুধবার, ৬ নভেম্বর ২০২৪, ২১ কার্তিক ১৪৩১, ৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

এবারও সা’দকে ছাড়া হচ্ছে আখেরি মোনাজাত

প্রকাশনার সময়: ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ২০:৫২

রোববার আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে মুসলিম বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম জমায়েত ৫৭তম বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্ব। এবারের বিশ্ব ইজতেমার আখেরি মোনাজাত ভারতের মাওলানা সাদ কান্ধলভিকে ছাড়াই অনুষ্ঠিত হচ্ছে। তাকে নিয়ে বিতর্ক ওঠার পর মাওলানা সাদ এবারেও ইজতেমায় অংশ নিতে বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত আসেননি। তবে তার তিন ছেলে ইতোমধ্যে একটি জামায়াত নিয়ে ইজতেমা ময়দানে এসেছেন। এপর্বের ইজতেমার শেষদিনে মাওলানা সাদ কান্ধলভীর বড় ছেলে মাওলানা ইউসুফ কান্ধলভী আখেরি মোনাজাত পরিচালনা করবেন বলে আশা করা হচ্ছে। মোনাজাতের আগে তিনি হেদায়েতি বয়ানও করবেন।

রোববার (১১ ফেব্রুয়ারি) সকাল ১১টার মধ্যে আখেরি মোনাজাত অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। মোনাজাতে বাংলাদেশসহ সারা দুনিয়ার মানুষের সুখ, শান্তি ও কল্যাণ কামনা করে দোয়া করা হবে বলে জানিয়েছেন ইজতেমা কর্তৃপক্ষ।

দ্বিতীয় পর্বের দ্বিতীয় দিনে শনিবার টঙ্গীর ইজতেমা ময়দানে লাখ-লাখ মুসল্লির উদ্দেশ্যে চলে পবিত্র কোরআন-হাদিসের আলোকে জিকির আশকার, আমল আখলাখ নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ বয়ান চলে বিরতিহীনভাবে। দুনিয়া এবং আখেরাতের সুখ-শান্তি অর্জনে কামিয়াবি হাসিলে প্রতিটি মূহুর্তে বয়ান চলে ইজতেমা ময়দানে। আল্লাহর নৈকট্য লাভের আশায় লাখো মুসল্লি যোগ দিয়েছেন এবারের বিশ্ব ইজতেমায়। মুরুব্বিদের বয়ান মনোযোগ দিয়ে শুনছেন মুসল্লীরা।

তাবলীগের ছয় উসুল নিয়ে চলছে এ বয়ান। ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বে শিল্প নগরী টঙ্গী ইতোমধ্যেই ধর্মীয় নগরীতে পরিণত হয়েছে। মহান আল্লাহ তা’আলার নৈকট্য লাভের ব্যাকুলতায় দ্বীনের দাওয়াতে মেহনত করার জন্য ইসলামের মর্মবাণী সর্বত্র পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্য নিয়ে ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা দলে দলে ছুটে আসছেন টঙ্গীর তুরাগ তীর ইজতেমা ময়দানে। টঙ্গীর তুরাগ তীরে বিশ্ব ইজতেমায় আগত লাখ লাখ মুসুল্লীর পদভারে মুখরিত হয়ে উঠেছে।

শনিবারও টঙ্গী অভিমুখী বাস, ট্রাক, ট্রেন, লঞ্চসহ বিভিন্ন যানবাহনে ছিল মানুষের ভিড়। এদিন সকালেই টঙ্গী শহর এবং ইজতেমাস্থল ও এর আশপাশের এলাকা জনসমুদ্রে পরিণত হয়েছে। রোববার আখেরি মোনাজাতের আগ পর্যন্ত মানুষের এ ঢল অব্যাহত থাকবে। ইতোমধ্যে ইজতেমা ময়দান কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে গেছে। মূল প্যান্ডেলে স্থান না পেয়ে অনেক মুসুল্লি নিজ উদ্যোগেই প্যান্ডেলের বাইরে পলিথিন সিট ও কাপড়ের সামিয়ানা টানিয়ে তাতেই অবস্থান নিয়েছেন। সৃষ্টিকর্তার বন্দনা, আরজ-গুজার, শোকরানা আর ইবাদত বন্দেগীতে মশগুল মানুষের কলরব।

সৃষ্টিকর্তার দিদার লাভের জন্যে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা পায়ে হেঁটে, র‌্যাব ও পুলিশ পাহারায় বাস ও ট্রেনে টঙ্গীর তুরাগ তীরে বিশ্ব ইজতেমা ময়দানে সমবেত হয়েছেন। এবারের ইজতেমার শেষ দফায় দেশের ৬৪টি জেলার মাওলানা সা’দ অনুসারী মুসল্লিরা ৮৫ খিত্তায় অবস্থান নিয়েছেন। এবারের দুই পর্বের বিশ্ব ইজতেমার প্রথমপর্ব শুরু হয় গত ২ ফেব্রুয়ারি। ওই পর্বে মাওলানা যোবায়েরর অনুসারী দেশি-বিদেশি মুসল্লিরা অংশ নেন। ৪ ফেব্রুয়ারি আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হয় প্রথমপর্ব। প্রথম পর্ব সম্পন্ন হওয়ার পর চার দিন বিরতি দিয়ে ৯ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হয় দ্বিতীয় পর্ব।

রোববার (১১ ফেব্রুয়ারি) আখেরি মোনাজাতের মধ্যে দিয়ে শেষ হবে এবারের ৫৭তম বিশ্ব ইজতেমা। আখেরি মোনাজাত উপলক্ষ্যে মুসল্লিদের সুবিধার্থে প্রথম পর্বের মতো শনিবার দিবাগত মধ্যরাত থেকে ওই এলাকায় যানবাহন চলাচলে বিধিনিষেধ আরোপ করেছে পুলিশ। রোববার সন্ধ্যা পর্যন্ত এ বিধিনিষেধ বলবৎ থাকবে।

এবারের বিশ্ব ইজতেমা নজিরবিহীন নিরাপত্তা ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। প্রায় ১২ হাজার র‌্যাব ও পোশাকধারী পুলিশের পাশপাশি রয়েছে সাদা পোশাকে প্রায় ৩ হাজার গোয়েন্দা সদস্য। আকাশ ও নৌপথে রয়েছে র‌্যাবের সতর্ক নজরদারী।

যারা বয়ান করলেন:

এবারের ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বে মাওলানা সা’দ কান্ধলভী অনুসারী দেশি-বিদেশি মুসল্লিরা অংশ নিচ্ছেন। দুদিন ধরে সার্বক্ষণিক ইবাদত-বন্দেগিতে নিয়োজিত রয়েছেন মুসল্লিরা। প্রতিদিন ফজর থেকে এশা পর্যন্ত ঈমান, আমল, আখলাক ও দ্বীনের পথে মেহনতের ওপর বয়ান অনুষ্ঠিত হয়। শনিবার বাদ ফজর ভারতের নিজামুদ্দিন মারকাজের শীর্ষ মুরুব্বি মাওলানা সা’দ কান্ধলভির মেঝো ছেলে মাওলানা সাঈদ বিন সাদ কান্ধলভীর বয়ানের মধ্য দিয়ে শুরু হয় দ্বিতীয় দিনের কার্যক্রম। তিনি তাবলীগের ৬ উসুলের (মৌলিক বিষয়ে) ওপর বয়ান করেন। এ বয়ান বাংলায় তরজমা করেন বাংলাদেশের মুফতি ওসামা ইসলাম। এরপর বাদ জোহর বয়ান করেন ভারতের মাওলানা শরিফ। তার বয়ান বাংলায় তরজমা করবেন মাওলানা মাহমুদুল্লাহ। বাদ আছর বয়ান করেন পাকিস্তানের মাওলানা ওসমান। তার বয়ান বাংলায় তরজমা করেন মাওলানা আজিম উদ্দিন। মাগরিবের নামাজের পর বয়ান করেন ভারতের মুফতি ইয়াকুব। তার বয়ান বাংলায় তরজমা করেন মাওলানা মনির বিন ইউসুফ।

যা বয়ান করলেন : গত দু’দিন ধরে ইজতেমা মাঠে সার্বক্ষনিক ইবাদত-বন্দেগীতে নিয়োজিত রয়েছেন প্রতিদিন ফজর থেকে এশা পর্যন্ত ইজতেমা মাঠে ইমান, আমল, আখলাক ও দ্বীনের পথে মেহনতের ওপর বয়ান অনুষ্ঠিত হচ্ছে। শনিবার বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় দিনে দেশ বিদেশী আগত মুরুব্বীগণ তাবলীগের ছয় ওছুলের মধ্যে দাওয়াতে দ্বীনের মেহনতের উপর গুরুত্বারোপ করে বয়ান করেন।

বয়ানে তাবলীগ মুরুব্বীগণ বলেন, আল্লাহ তায়ালা আপনাকে আমাকে দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন এবং আল্লাহ তায়ালা এটা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, দুনিয়াতে যে একবার আসবে তাকে মৃত্যুবরণ করতে হবে। আল্লাহ পাকের এ সিদ্ধান্তের কোনো পরিবর্তন হবে না। দুনিয়া হচ্ছে ধোকার ঘর, এ দুনিয়া হচ্ছে ধোকার জীবন। মিছে এই দুনিয়ার আরাম আয়েসের কথা ভুলে গিয়ে আখেরাতের কথা চিন্তা কর। দুনিয়ার জিন্দেগী ক্ষণস্থায়ী, যতক্ষণ পর্যন্ত মানুষের দিল থেকে আসবাবের (সম্পদের) এক্বিন বের না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত তার দিলে কুদরতি এক্বিন পয়দা হবে না। সকলকে দ্বীনের জন্য মেহনত করতে হবে। আল্লাহর কাছে আমল ছাড়া এ দুনিয়ার জিন্দেগীর কোনো মূল্য নেই।

বয়ানে আরও বলা হয়, দ্বীনের দাওয়াতের মাধ্যমে ঈমান মজবুত হয়। ঈমান মজবুত হলে আল্লাহর সাথে গভীর সম্পর্ক গড়ে ওঠে। আর এ সম্পর্ক গড়ে উঠলে দুনিয়া ও আখেরাতে কামিয়াবি হাসিল হয়। তাশকিলের কামরায় চিল্লাভুক্ত মুসুল্লী।

ইজতেমার প্যান্ডেলের উত্তর-পশ্চিমে তাশকিলের কামরা স্থাপন করা হয়েছে। বিভিন্ন খিত্তা থেকে বিভিন্ন মেয়াদে চিল্লায় অংশ গ্রহণেচ্ছু মুসুল্লিদের এ কামরায় আনা হচ্ছে এবং তালিকাভুক্ত করা হচ্ছে। পরে কাকরাইলের মসজিদের তাবলিগি মুরুব্বীদের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এলাকা ভাগ করে তাদের দেশের বিভিন্ন এলাকায় তাবলিগি কাজে পাঠনো হবে।

আয়োজকরা বলেছেন, বিশ্ব ইজতেমার কর্মসূচির মধ্যে আমল ও খাস বয়ান, তালিম, তাশকিল, ৬ উছুলের হাকিকত, দরসে কোরআন, দরসে হাদিস, চিল্লায় নাম লেখানোসহ নতুন জামাত তৈরির কাজ চলছে। আখেরি মোনাজাত রোববার সকালে।

বিশ্ব ইজতেমার এ পর্বের মিডিয়া সমন্বয়কারী মোহাম্মদ সায়েম জানান, এবারের বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বের আখেরি মোনাজাতের সময়ও এগিয়ে আনা হয়েছে। রোববার সকাল সাড়ে ১০টা হতে ১১টার মধ্যে আখেরি মোনাজাত করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। মুসুল্লিদের ভোগান্তি কমাতে পরামর্শ করে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তাবলীগ জামাতের শীর্ষস্থানীয় মুরুব্বীদের পরামর্শের ভিত্তিতে বিশ্ব তাবলীগ জামাতের শীর্ষ মুরব্বি মাওলানা সাদ কান্ধলভীর বড় ছেলে মাওলানা ইউসুফ বিন সাদ কান্ধলভী আখেরি মোনাজাত পরিচালনা করবেন বলে আশা করা হচ্ছে। মোনাজাতের আগে তিনি হেদায়েতি বয়ানও করবেন। এজন্য ব্যাপক প্রস্তুতিও নেওয়া হয়েছে বলে তিনি জানান।

নয়া শতাব্দী/এসএ

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ