আমেনা বেগম, মজিবর মিয়া, রেজাউল করিম, নাছিমা, রোকিয়া বেগম, রুবিয়া বেগম, রহিমা বেগম, বেবি বেগম, মাজেদুল, কফিল উদ্দিনের মতো অন্তত ১০ জন নিম্ন আয়ের মানুষ সমবেত হয়ে অভিযোগ করেন, তারা ইউপি সদস্যের চাহিদার জনপ্রতি ৬শ টাকা দিয়েও ফ্যামেলি কার্ড পাননি।
ছয় মাস পেরিয়ে গেলেও ইউপি সদস্যের বাসায় বারবার ধর্না দিয়ে গালমন্দ জুটলেও ফিরে পাননি উৎকোচের টাকা কিংবা কার্ড। আবার তালিকায় নাম থাকলেও পাচ্ছেন না ট্রেডিং কার্পোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবির) পণ্য। আবার অনেকের ফোন নম্বরের সাথে নামের মিল পাওয়া যায়নি, অনুসন্ধানে এমন চিত্র উঠে এসেছে।
গত ৭ ফ্রেব্রুয়ারি (বুধবার) সরেজমিনে নাজিরপুর ইউনিয়নের ওয়াবদা বাজার এলাকায় গেলে ঘটনার সত্যতা মেলে। সেখানে অন্তত ১০জন নিম্ন আয়ের নারী পুরুষ সমবেত হয়ে সংবাদকর্মীদের কাছে নানা অনিয়ম ও অভিযোগের তথ্য তুলে ধরেন।
অনুসন্ধান বলছে, নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার নাজিরপুর ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের শ্যামপুর ও চন্দ্রপুরের মহলদার পাড়ার অন্তত ১০ নিম্ন আয়ের নারী পুরুষের কাছ থেকে ফ্যামেলি কার্ড দেওয়ার কথা বলে ৬শ টাকা করে নিয়েছেন ইউপি সদস্য মতিউর রহমান মতি। টাকা দিয়েও মেলেনি কার্ড। ফিরে পাননি উৎকোচের টাকা। সংবাদ সংগ্রহ করতে গেলে ইউপি সদস্য তার লোকজন দিয়ে সংবাদকর্মীদের সামনে মুঠোফোনে ভুক্তোভোগীদের হুমকিও দেন।
অনুসন্ধান আরও বলছে, সর্বশেষ গত বছরের আগষ্ট মাসে ফ্যামেলি কার্ড হালনাগাদ কাজ শেষ হয়। উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা হালনাগাদ কাজ শেষ করে তালিকানুসারে উপকারভোগীদের মাঝে টিসিবির পণ্য প্রদান করছেন। কিন্তু নাজিরপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আয়ুব আলী তার স্বাক্ষরিত টোকেনের মাধ্যমে পণ্য বিতরণ করছেন। এতে চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্যগণ স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে তাদের পছন্দের লোকজনদের পণ্য বিতরণ করলেও বঞ্চিত হচ্ছেন অন্যরা।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে প্রাপ্ত নাজিরপুর ইউনিয়নের ফ্যামেলি কার্ডে উপকারভোগীর সংখ্যা ২ হাজার ৪৮৯। তালিকায় নাম থাকলেও অনেকে টিসিবির পণ্য পাচ্ছেন না। অনুসন্ধানে পণ্য না পাওয়া এমন শতাধিক ব্যক্তির নাম পাওয়া গেছে। তালিকার ২৬ নম্বরের দিনমজুর শাহিনুর ইসলাম, ১৪৫ নম্বরের মজিবর মিয়া, ৩৭৫ নম্বরের কফিল উদ্দিন, ৩৭৪ নম্বরের মাজেদুল ও ১৫৪ নম্বরের আছমা বেগমের মেলেনি টিসিবির পণ্য।তারা অভিযোগ করে বলেন, তালিকায় নাম থাকার কথা শুনলেও পরিষদ থেকে তারা কোন কার্ড পাননি। চেয়ারম্যানের টোকেনে তার পছন্দের লোকজন পণ্য পেলেও তারা বঞ্চিত।
স্থানীয়দের অভিযোগ, টোকেনে পণ্য বিনিময় হয় বলে অনেক পণ্য অবিক্রিত থাকে। এ সুযোগে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, ইউপি সদস্য এবং টিসিবির ডিলারের যোগসাজসে অবিক্রিত পণ্য কালোবাজারে বিক্রি হয়। সম্প্রতি র্যাবের অভিযানে টিসিবির পণ্যসহ আটক বিলদহর বাজারের ব্যবসায়ী শাহ আলম নাজিরপুর ইউনিয়নের টিসিবির পরিবেশক রিপন আলীর কাছ থেকে পণ্য কেনার কথা স্বীকার করেন।
এদিকে রোকিয়া বেগম, নাছিমা, রেজাউল করিমসহ অন্তত ১০ জন নিম্ন আয়ের মানুষ অভিযোগ করে বলেন, ১ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মতিউর রহমান মতি তাদের ফ্যামেলি কার্ড করে দেওয়ার কথা বলে জনপ্রতি ৬শ টাকা করে উৎকোচ নিয়েছেন। কিন্তু ইউপি সদস্য মতি ঘুষের টাকা ফেরত না দিয়ে কার্ড, পণ্য কোনটাই দিচ্ছেন না।
৯ নম্বর ওয়ার্ডের আরমান, মোবারক, রমজানের অভিযোগ, টিসিবির তালিকায় নাম তুলতে ইউপি সদস্য তমিজুর রহমান তমেজকে জনপ্রতি ৫শ টাকা দিতে হয়েছে। অভিযুক্তের বিচার দাবি করেন তারা।অভিযুক্ত ইউপি সদস্য মতিউর রহমান মতির ব্যবহৃত মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন দিলেও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
নাজিরপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আয়ুব আলী টোকেনের মাধ্যমে টিসিবির পণ্য বিতরণের কথা স্বীকার করে বলেন, কার্ড ছাপাতে দেরি হওয়ার কারণে এমনটা হয়েছে। আগামী মাস থেকে কার্ডের মাধ্যমে পণ্য মিলবে।
তিনি আরও জানান, সরকারী সুবিধা পেতে কোন টাকা লাগে না। কোন ইউপি সদস্য টাকা নিয়েছেন এমন বিষয়ে লিখিত অভিযোগ পেলে তিনি অভিযুক্তের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সালমা আক্তার জানান, তালিকায় নাম থাকলেও টিসিবির পণ্য না পাওয়ার বিষয়টি দুঃখজনক। বঞ্চিতদের তার কার্যালয়ে যোগাযোগের কথা বলেন তিনি। তদন্তে অনিয়ম কিংবা এর সাথে জড়িতদের সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
নয়াশতাব্দী/ডিএ/একে
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ