মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ সংঘাতের মধ্যে একদিন পর শনিবার (১০ ফেব্রুয়ারি) আবার কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার হোয়াইক্যং ইউনিয়নের সীমান্তে গুলি ও মর্টার শেলের বিকট আওয়াজ শোনা যাচ্ছে।
শুক্রবার (৯ ফেব্রুয়ারি) দুপুর থেকে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম সীমান্তে বন্ধ রয়েছে গুলিবর্ষণের শব্দ। তবে এই সীমান্তবর্তীদের মধ্যে মর্টার শেল নিয়ে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। ওপারে গুলির শব্দ বন্ধ থাকলেও এপারে একদিনে দুইটি অবিস্ফোরিত মর্টার শেল পাওয়া গেছে।
স্থানীয় সূত্র জানায়, শনিবার ভোর থেকে হোয়াইক্যং ইউনিয়নের লম্বাবিল, উনচিপ্রাং ও কানজরপাড়া সীমান্তের ওপারে গুলিবর্ষণ ও মর্টার শেল বিস্ফোরণের শব্দ পাচ্ছেন এপারের বাসিন্দারা। এসব এলাকায় তার আগে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত গোলাগুলির শব্দ পাওয়া গিয়েছিল। শুক্রবার সকাল থেকে শনিবার ভোর পর্যন্ত বন্ধ ছিল। বান্দরবানের ঘুমধুম সীমান্তে সর্বশেষ শুক্রবার দুপুরে গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। এপারে গুলিও এসে পড়েছিল। এরপর থেকে নতুন করে গোলাগুলি শব্দ শোনা না গেলেও শনিবার সকালে অবিস্ফোরিত দুটি মর্টার শেল পাওয়া গেছে। পরে সেগুলো নিষ্ক্রিয় করে সেনাবাহিনী।
সীমান্তের বাসিন্দারা বলছে, মিয়ানমার থেকে ছোঁড়া অসংখ্য গোলা ও গুলি বাংলাদেশের ভূখণ্ডে এসে পড়েছে; যা এখন খেত-খামারে পাওয়া যাচ্ছে। তাদের দাবি, দ্রুতসময়ের মধ্যে এসব গোলা যেন নিষ্ক্রিয় করা হয়।
বিজিবি জানায়, সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবি এসব গোলা উদ্ধার করছে। যার চারপাশে টাঙিয়ে দিচ্ছে লাল পতাকা। নিরাপত্তার স্বার্থে সড়কে দেওয়া হয়েছে ব্যারিকেড।
মিয়ানমারে বিদ্রোহী গোষ্ঠীর হাত থেকে প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশ পালিয়ে এসে আশ্রয় নিয়েছেন দেশটির ৩৩০ জন সীমান্তরক্ষী। দুই দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মধ্যে আলোচনার পর তাদের ফিরিয়ে নিতে সম্মত হয়েছে মিয়ানমার। ইতোমধ্যে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে বলে জানালেন শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মিজানুর রহমান।
৫ ফেব্রুয়ারি মিয়ানমার থেকে বান্দরানের ঘুমধুমে উড়ে আসা মর্টার শেলের আঘাতে প্রাণ হারিয়েছে এক বাংলাদেশি নারী ও এক রোহিঙ্গা। ঘুমধুম ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ড তুমব্রু পশ্চিম কুল ব্রিজসংলগ্ন এলাকা থেকে পরিত্যক্ত অবস্থায় আরও একটি মর্টার শেল উদ্ধার করেছে বিজিবি।
টেকনাফের হোয়াইক্যং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নুর আহমদ আনোয়ারি বলেন, আমরা জানতে পেরেছি ভোরে সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারের কুমিরখালী এলাকায় দেশটির সামরিক বাহিনী ও বিদ্রোহীদের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়েছে। এপারের লম্বাবিল ও উনচিপ্রাং এলাকায় কয়েকটি গুলি এসে পড়েছে।
বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুমের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আজিজ জানান, ঘুমধুম সীমান্তে একের পর এক অবিস্ফোরিত মর্টার শেল পাওয়া যাচ্ছে। সকালে নতুন করে দুটি অবিস্ফোরিত মর্টার শেল পেয়েছেন স্থানীয়রা। এর আগেও দুটি মর্টার শেল পাওয়া গিয়েছিল। সেগুলো পরে নিষ্ক্রিয় করা হয়।
ঘুমধুমের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আজিজ বলেন, বান্দরবানের ঘুমধুম ও তুমব্রু সীমান্তে জমিতে মিলছে এসব মর্টার শেল। সকালে কৃষি জমিতে কাজ করতে গিয়ে মর্টার শেল দেখতে পান রাজিয়া। পরে সেটি নিষ্ক্রিয় করার জন্য বিজিবি নিয়ে গেছে। রাজিয়া বলেন, ‘কৃষি জমিতে কাজ করছিলাম। তখন দেখি শিশুরা লম্বা লোহার রডের মতো একটি জিনিস নিয়ে খেলছে। তখন তাদের কাছ থেকে এটি নিয়ে বাসা চলে আসি। পরে স্বামী বলে এটি অস্ত্র। তার পরপরই বিজিবিকে এটি হস্তান্তর করি।
নয়া শতাব্দী/এসএ
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ