ঢাকা, শনিবার, ৫ অক্টোবর ২০২৪, ২০ আশ্বিন ১৪৩১, ১ রবিউস সানি ১৪৪৬

৮৯ কোটি টাকা আত্মসাৎ, আ.লীগ নেত্রীর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা 

প্রকাশনার সময়: ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৭:০১

ঋণ পরিশোধ না করে ব্যাংকের টাকা আত্মসাতের চেষ্টা করাসহ নানান অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে পটুয়াখালী জেলা আওয়ামী মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক জাকিয়া সুলতানা বেবির বিরুদ্ধে। রয়েছে ঋণ খেলাপির মামলা। তবুও দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছেন তিনি। একাধিক মামলা চলমান থাকলেও অদৃশ্য ক্ষমতার জোরে তাকে আটক করতে ব্যর্থ হচ্ছে পুলিশ।

জানা গেছে, পটুয়াখালী বিসিক শিল্প নগরীতে জাকিয়া সুলতানা বেবি ও তার স্বামী মৃত সিরাজুল ইসলাম খানের যৌথ মালিকানাধীন পটুয়াখালী টেক্সটাইল মিলের নামে ১৯৮৫ সালে সোনালী ব্যাংক পটুয়াখালী শাখা থেকে ২ কোটি ২৩ লাখ ২৪ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছিলেন সিরাজুল জাকিয়া দম্পতি। মরগেজ বাবদ জমা দিয়েছেন তাদের বরিশাল রূপাতলী এস এ ২৭০০ মৌজা খতিয়ান জমির দলিল ও মৃত সিরাজুলের মালিকাধীন পটুয়াখালী সিএনভি সড়কের বাড়ির দলিল।

৩৯ বছর আগে নেওয়া ওই ঋণ আদায়ে ব্যাংক থেকে কয়েকবার সম্পূর্ণ সুদ মওকুফের সুবিধা দেয়া হলেও এক টাকাও পরিশোধ করেননি আওয়ামী লীগ নেত্রী জাকিয়া ও তার স্বামী সিরাজুল। আসল টাকা আদায়ের জন্য ১৯৯৪ সালের ৯ এপ্রিল, ২০১১ সালের ২৭ জুলাই ও ২০২২ সালের ১২ জানুয়ারি শতভাগ সুদ মওকুফের অনুমোদন দেয় তৎকালীন পটুয়াখালী সোনালী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ। সেই টাকা পরিশোধ না করলে সর্বশেষ তাকে ৬ বছরে ৭২ কিস্তিতে ৩ কোটি ১৪ লাখ ৭৫ হাজার টাকা পরিশোধ করার সুযোগ দেয়া হলেও তিনি সেই সুযোগটিও গ্রহণ করেননি। সুদাসলে বর্তমানে সেই টাকার আদায়যোগ্য পরিমাণ এসে দাঁড়িয়েছে ৮৮ কোটি ৮৯ লাখ টাকায়। ঋণ পরিশোধ না করে উল্টো ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে ফাঁসানো হয়েছে বিভিন্ন মামলায়।

১৯৯৩ সালে জাকিয়ার স্বামী সিরাজুলকে ঋণ খেলাপি ঘোষণা করে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ ২০০৪ সালে পটুয়াখালী অর্থ ঋণ আদালতে একটি খেলাপি ঋণের মামলা দায়ের করে। যার মামলা নম্বর (ডিগ্রি জারি ১৩২০০৬)। মামলা চলমান অবস্থায় সিরাজুল মৃত্যুবরণ করেন। তার মৃত্যুর পরে ঋণগ্রস্ত প্রতিষ্ঠানটির শতভাগ মালিক হন জাকিয়া ও ঋণ খেলাপির মামলাটির মূল বিবাদী হিসেবে গণ্য করা হয় তাকে। তবে ক্ষমতাসীন দলের নেত্রী ব্যাংক কর্তৃপক্ষের অগোচরে ঋণের অনুকূলে দেয়া বরিশাল রুপাতলী এলাকার জমির ২৮ শতাংশ অন্যায়ভাবে বিক্রি করে দেন। যার দলিল নম্বর ৫৩৩৪/২।

এদিকে তার মৃত স্বামীর নামের পটুয়াখালীর বাড়িটি ব্যাংক কর্তৃপক্ষ নিলাম করার কথা জানতে পেরে তিনি ২০১৬ সালে তার প্রবাসী আপন বড় ভাই মাহাবুবুর রহমানকে বাদী করে আদালতে একটি দেওয়ানি মামলা দায়ের করান যাতে ওই বাড়ির রায় তার ভাইয়ের নামে পেতে পারেন। বর্তমানে সেই মামলাটি চলমান রয়েছে। যার তৎকালীন মামলা নম্বর দেওয়ানি মোকাদ্দমা ১৭১/২০১৬ ও বর্তমান ৫১৩/২২১। চলমান এই মামলার কারণে জমি নিলাম করে ব্যাংক ঋণ প্রদানকৃত টাকার কিছু অংশ আদায়ের চেষ্টা এখন রয়েছে অনিশ্চয়তার মধ্যে।

এদিকে ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়ার পর থেকেই বিভিন্ন তালবাহানা করে ঋণের দায় পরিশোধ না করায় গত বছরের মে মাসের ২৯ তারিখ পটুয়াখালী যুগ্ম জজ ১ম আদালতের বিচারক মো. হুমায়ুন কবির জেলা আওয়ামী মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক জাকিয়া সুলতানা বেবির বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে। তবে দীর্ঘ সময় কেটে গেলেও কোনো অজানা কারণে তাকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়নি পুলিশ।

পটুয়াখালী সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপক জিল্লুর রহমানের কাছে এসব বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার উপরস্ত কর্মকর্তার অনুমতি ছাড়া কোনো কথা বলতে পারব না।

এবিষয় নিয়ে সোনালী ব্যাংক বরিশালের জিএম গোপাল চন্দ্র গোলদারের সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

জাকিয়া সুলতানা বেবি জানান, আমার নামে যে বা যারা এই সব কথা বলতেছে তারা সবাই মিথ্যা বলতেছে।

পটুয়াখালী জেলা বিসিক শিল্পনগরী কর্মকর্তা জানান, আমরা সোনালী ব্যাংককে সহায়তা করছি। আমরা সোনালী ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে তিন মাসের সময় দিয়েছি মামলা নিষ্পত্তি করার জন্য। সার্ভিস চার্জ বাবদ মিল কর্তৃপক্ষের কাছে বিসিকের প্রায় ১৫ লক্ষাধিক টাকার বেশি পাওনা রয়েছে।

পটুয়াখালী সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জসীম বলেন, ওনাকে এখন এলাকায় দেখা যাচ্ছে না। তাকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।

নয়াশতাব্দী/এসএ

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ