ঢাকা, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

সীমান্তের বাতাসে বারুদের গন্ধ

আশ্রয় নেয়া ২৬৪ জনকে ফিরিয়ে নিতে প্রস্তুত মিয়ানমার
প্রকাশনার সময়: ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৭:৪৪ | আপডেট: ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৮:০৬

মিয়ানমারের জান্তা বাহিনী ও রাখাইনের বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির (এএ) মধ্যে বেশ কয়েক দিন ধরে ভয়াবহ সংঘর্ষ চলছে। বিধ্বংসী গৃহযুদ্ধে উত্তাল দেশটি। মুহুর্মুহ গুলির শব্দে প্রকম্পিত হচ্ছে বাংলাদেশে বান্দারবান ও কক্সবাজার সীমান্ত। জান্তা বাহিনীর সঙ্গে বিদ্রোহীদের লড়াইয়ে গোলাগুলি, মর্টারশেল ও বোমা বিস্ফোরণে হতাহতের সংখ্যা বাড়ছে ওপারের সীমান্তে। যার আঁচ এসে পড়ছে বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী জনপদেও। সীমান্তের বাতাসে এখন শুধুই বারুদের গন্ধ।

এদিকে ভয়াবহ যুদ্ধের কারণে অব্যাহত রয়েছে মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিপি, সেনাসদস্য ও বেসামরিক নাগরিকদের বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়ার সংখ্যাও। গতকাল বুধবারও প্রাণ বাঁচাতে দেশটির বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) নতুন করে আরও ৬৪ জন সশস্ত্র সদস্য পালিয়ে এসেছে। এ নিয়ে বুধবার দুপুর পর্যন্ত বিজিপি, সেনাসদস্য ও নাগরিকসহ মোট ৩২৮ জন বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে।

জানা গেছে, সামরিক সক্ষমতা বিবেচনায় মিয়ানমার সেনাবাহিনীর অবস্থান বিশ্বে ৩৫তম, যা বাংলাদেশ থেকে দুই ধাপ ওপরে। এ ধরনের একটি শক্তিশালী বাহিনীকে রীতিমতো নাস্তানাবুদ করছে দেশটির বিদ্রোহী ও প্রতিরোধকারী গোষ্ঠীগুলো। দেশটির রাজ্যে রাজ্যে প্রতিরোধ যোদ্ধাদের হাতে একের পর এক ঘাঁটি ও শহরের নিয়ন্ত্রণ হারাচ্ছে দেশটির সেনাবাহিনী। প্রশ্ন হতে পারে, সামরিক সক্ষমতাসম্পন্ন মিয়ানমার সেনাবাহিনীকে কী করে ঘায়েল করছে বিদ্রোহীরা। তারা এত অস্ত্রও কোথায় পাচ্ছে? অনেকের দাবি, দেশটির গেরিলা গোষ্ঠীগুলোর সাফল্যের মূল জায়গা নিজেদের অস্ত্র তৈরির সক্ষমতা।

সূত্রমতে, মিয়ানমার সেনাবাহিনী ২০২১ সালের ১ ফেব্রুয়ারি নির্বাচিত সরকারপ্রধান অং সান সু চিকে সরিয়ে ক্ষমতা দখল করে। ফলে দেশটিতে শুরু হয় শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ। কিন্তু জান্তা সরকার তা কঠোর হাতে দমন করে। বিশেষ করে মার্চ মাস থেকে বিক্ষোভকারীদের নির্বিচারে গুলি করে হত্যা করতে শুরু করে জান্তা সরকার। প্রতিক্রিয়ায় বিক্ষোভকারীরা গা ঢাকা দেয়। কিন্তু এপ্রিল নাগাদ তারা গড়ে তোলে জাতীয় ঐক্য সরকার (নাগ)। পরের মাসে নাগ নিজেদের সামরিক শাখা গণপ্রতিরোধ বাহিনী (পিডিএফ) তৈরি করে। পিডিএফ দেশটির পুরোনো জাতিগত বিদ্রোহীদের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করলে বড় একটা অংশ তাদের সঙ্গে যোগ দেয়। এ ছাড়া মিয়ানমারের শহরে গ্রামে স্থানীয়দের নেতৃত্বে গড়ে ওঠে পিডিএফের শাখা।

সাগাইং অঞ্চলের কো কিয়াও হিতিন নিজের এলাকায় পিডিএফ গঠন করেন। হিতিন একজন আইটি ইঞ্জিনিয়ার। বন্ধুদের সঙ্গে একত্র হয়ে ইম্প্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস (আইইডি) তৈরির পরিকল্পনা করেন হিতিন। তার মতো এমন তৎপরতা মিয়ানমারের গহীন অরণ্যে ছড়িয়ে পড়েছে। গণতান্ত্রিক সরকারকে উৎখাত করে ক্ষমতা দখল করা মিয়ানমারের সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে লড়াই চালিয়ে আসছে আরাকান আর্মিসহ কিছু সশস্ত্র গোষ্ঠী।

সম্প্রতি বিভিন্ন জায়গায় জান্তার অনুগত সেনাদের পরাজয়ের খবর আসছে। এমনকি অনেক জায়গায় সেনাবাহিনীর ঘাঁটি ও নিয়ন্ত্রিত এলাকাও দখলে নিতে শুরু করেছেন বিদ্রোহীরা।

রাখাইনে আরও দুই ঘাঁটি হাতছাড়া: রাখাইন রাজ্যের ম্রাউক ইউ ও কিয়াউকতাও শহরে জান্তা বাহিনীর আরও দুটি ঘাঁটি নিয়ন্ত্রণে নেয়ার কথা জানিয়েছে আরাকান আর্মি (এএ)। সশস্ত্র এ বিদ্রোহী গোষ্ঠী জানিয়েছে, রাজ্যের অন্য কয়েকটি এলাকায় সেনাবাহিনীর সঙ্গে তাদের তুমুল লড়াই চলছে। আরাকান আর্মি জানায়, বেশ কয়েক দিন লড়াইয়ের পর গত সোমবার সকালে ম্রাউক ইউ শহরে জান্তার পদাতিক বাহিনীর একটি ব্যাটালিয়নের (লাইট ইনফ্যানট্রি ব্যাটালিয়ন-এলআইবি ৩৭৮) সদর দপ্তর দখল করেছে তারা। এর আগে এর কাছের এলআইবি ৫৪০ ব্যাটালিয়নের সদর দপ্তর দখল করা হয়। এ ছাড়া শহরের এলআইবি ৩৭৭-এর ঘাঁটিতে হামলা চালানো হচ্ছে।

জানা গেছে, গত অক্টোবর থেকে রাখাইন প্রদেশে জান্তার বিরুদ্ধে ‘অপারেশন ১০২৭’ নামে অভিযান শুরু করে থ্রি ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্স নামে তিন বিদ্রোহী গোষ্ঠীর একটি জোট। আরাকান আর্মি, ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটিক অ্যালায়েন্স আর্মি এবং তায়াং ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি জোটটির তিন সদস্য। আরাকান আর্মি জোটের সবচেয়ে শক্তিশালী বিদ্রোহী গোষ্ঠী।

সম্প্রতি বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী মংডুতে জান্তার বিভিন্ন বাহিনীর সঙ্গে থ্রি ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্সের তীব্র সংঘাত চলছে। সংঘাতে বুধবার পর্যন্ত মিয়ানমার বর্ডার গার্ড পুলিশসহ (বিজিপি) ও সেনাবাহিনীসহ আরও কয়েকটি সরকারি বাহিনীর ৩২৮ সদস্য আশ্রয় নিয়েছে। একই সময়ে মিয়ানমারের অন্তত আট নাগরিকও বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। মিয়ানমার থেকে আসা মর্টারশেলে বাংলাদেশে এ পর্যন্ত অন্তত দুজন নিহত হয়েছে। বাংলাদেশের সঙ্গে মিয়ানমারের ২৮৩ কিলোমিটার সীমান্ত রয়েছে।

আরও ৬৪ সীমান্তরক্ষী বাংলাদেশে: মিয়ানমারের অভ্যন্তরে চলমান সংঘর্ষে প্রাণ বাঁচাতে দেশটির বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) নতুন করে আরও ৬৪ জন সশস্ত্র সদস্য পালিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছেন। এ নিয়ে এখন পর্যন্ত মোট ৩২৮ জন মিয়ানমারের বিজিপি, সেনা কাস্টমস কর্মকর্তা ও অসামরিক নাগরিক দেশে এলেন। বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্ত টেকনাফের হোয়াইক্যং সীমান্ত দিয়ে ৬৪ জন প্রবেশ করেছে বলে জানিয়েছেন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. শরীফুল ইসলাম।

তিনি গণমাধ্যমে জানান, মিয়ানমারের অভ্যন্তরে চলমান সংঘর্ষের জেরে এখন পর্যন্ত ৩২৭ জন মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড পুলিশ (বিজিপি), সেনা সদস্য, কাস্টমস কর্মকর্তাসহ অসামরিক নাগরিক বাংলাদেশে প্রবেশ করেছেন। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) তাদের নিরস্ত্রীকরণ করে নিরাপদ আশ্রয় নিয়েছে।

বিজিবির নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, মিয়ানমার থেকে আশা ১৮৩ বিজিপি সদস্যের মধ্যে তুমব্রু বিওপির ৭৬ জন, ঘুমধুমের ৩৭ জন ও বালুখালী এলাকার ৭০ জন ছিলেন। মোট ২২৭ বিজিপি সদস্য কক্সবাজার বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধীনে আছেন। অন্যদিকে টেকনাফের হোয়াইক্যং বিওপিতে আরও দুই বিজিপি সদস্য রয়েছেন।

এদিকে কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার হ্নীলার দমদমিয়া নাফ নদ জিরো লাইন দিয়ে মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের চেষ্টাকালে ৬৫ জন রোহিঙ্গা বোঝাই একটি নৌকাকে প্রতিহত করেছেন বিজিবি সদস্যরা। গতকাল দুপুরে উপজেলার হ্নীলার নাফ নদের দমদমিয়াসংলগ্ন জিরো লাইন থেকে রোহিঙ্গা বোঝাই নৌকাটি প্রতিহত করা হয়। টেকনাফ ২ বিজিবির অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মহিউদ্দিন আহমেদ এ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

নিরাপত্তাহীনতা আতঙ্কে ‘জনশূন্য’ গ্রাম: মিয়ানমার থেকে ছুটে আসা গুলিতে হতাহতের ঘটনায় বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম ও কক্সবাজারের উখিয়া এলাকায় আতঙ্ক বিরাজ করছে। সেখানকার মানুষ ব্যাপক নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। মুহুর্মুহু গুলির শব্দে সেখানে এখন কান পাতাই দায়। মিয়ানমারের অভ্যন্তরে জান্তা বাহিনী ও বিদ্রোহীদের মধ্যে সংঘর্ষের সময় বিক্ষিপ্তভাবে ছুটে আসা গুলিতে হতাহতের পাশাপাশি বাড়িঘরও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। গুলির আঘাতে বহু গাছপালা ক্ষতবিক্ষত হতে দেখা গেছে। এ পরিস্থিতিতে বুধবার সকাল সাড়ে ১০টার পর থেকে ঘুমধুমে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। সেই সঙ্গে জনমনে ছড়াচ্ছে আতঙ্ক। বিশেষ করে তুমব্রু এলাকার জলপাইতলীতে দুজনের মৃত্যুতে ঘুমধুম-তুমব্রু সীমান্তে এখন থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে।

অনেকে নিজ ঘর ও গ্রাম ছেড়ে আশ্রয়কেন্দ্র ও আত্মীয়ের বাড়ি চলে যাচ্ছেন। ফলে জনশূন্য হয়ে পড়েছে কয়েকটি গ্রাম। ঘুমধুম ইউনিয়নের তুমব্রু এলাকার বাসিন্দা মো. সাজিম উল্লাহর জানান, মিয়ানমারের তুমব্রু রাইট ক্যাম্প সীমান্ত চৌকিটি বাংলাদেশের বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার লোকালয়ের একদম কাছাকাছি। ঢেঁকিবনিয়া সীমান্ত চৌকি থেকে বাংলাদেশের লোকালয় প্রায় ৫০০ মিটার দূরে।

এ কারণে তুমব্রু রাইট ক্যাম্পে গোলাগুলির সময় বাংলাদেশের বসতঘরে গুলি ও মর্টারশেল এসে পড়েছে। তিনি আরও জানান, গত কয়েকদিন ধরে সীমান্তের ওপারে প্রচুর গোলাগুলি হচ্ছে আর গোলাগুলির ভয়ে আমাদের পরিবারের সবাই বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছেন।

তুমব্রু এলাকার সীমান্তের পাশে দীর্ঘ ২০ বছর ধরে বসবাস করে আসছে কলিম। তিনি বলেন, পরিবারের সবাইকে আশ্রয়কেন্দ্রে রেখে এসেছি। দিনের বেলায় বাড়িতে গরু ছাগল চুরি হবে তাই পাহারা দিচ্ছি। আর সন্ধ্যা হলে আমি দূরের আত্মীয়র বাড়ি চলে যাই।

ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. জাহাঙ্গীর আজীজ বলেন, সীমান্তের পরিস্থিতি দিন দিন অবনতি হচ্ছে। মিয়ানমারের অভ্যন্তরে কখনো একনাগাড়ে কখনো থেমে থেমে গুলি হচ্ছে। আর ওপারের গুলি আর মর্টারশেল এসে আমার ইউনিয়নের কয়েকজনের মৃত্যুর পাশাপাশি কয়েকজন আহত হয়েছেন।

যা বলছেন বিশ্লেষকরা: বাংলাদেশের সঙ্গে মিয়ানমারের ২৮৩ এবং ভারতের সঙ্গে ১ হাজার ৬৪৩ কিলোমিটার সীমান্ত রয়েছে। দেশটিতে চলমান গৃহযুদ্ধ ও সংঘাত বাড়তে থাকলে এ অঞ্চলের ভৌগোলিক নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা করছেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও নিরাপত্তাবিষয়ক বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, সংঘাত বন্ধে দক্ষিণ এশিয়ার বড় প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোর হস্তক্ষেপের মাধ্যমে মিয়ানমারের সরকার ও বিদ্রোহীদের মধ্যে চলমান এ যুদ্ধ বন্ধের উদ্যোগ নিতে হবে। একই সঙ্গে কূটনৈতিক ও সামরিক তৎপরতাও বৃদ্ধি করতে হবে।

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক ইমতিয়াজ আহমেদ গণমাধ্যমে বলেন, যেসব সামরিক ও বেসামরিক লোক এসেছে, তাদের দ্রুত ফেরত পাঠাতে হবে। এর সঙ্গে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিষয়টি যুক্ত করা ঠিক হবে না। বরং যদি তাদের ঝুলিয়ে রাখার ঘটনা ঘটে তবে তা দুই দেশের মধ্যে নতুনভাবে অবিশ্বাস শুরু হবে। এ ঘটনা মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ সংকট।

বাংলাদেশ সব সময় বলে আসছে যে, আমরা কোনো দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে হস্তক্ষেপ করি না। যারা এসেছে মানবিক দিক থেকে তাদের চিকিৎসা ও আশ্রয় দেয়া হয়েছে। এখন ভারত ও চীন যেভাবে ফেরত পাঠিয়েছিল, সেই প্রক্রিয়া অনুসরণ করে তাদের মিয়ানমারে পাঠানো ভালো হবে।

এটাই আপাতত সমাধান; এর মাধ্যমে বিশ্বাসের জায়গাটি তৈরি হবে আর রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিষয়টিও জোরদার করা যাবে। বাংলাদেশি সাধারণ নাগরিক নিহত ও আহত হওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, যদি এ সংঘাত আরও বাড়তে থাকে— প্রয়োজনে তা আন্তর্জাতিককরণ করার প্রয়োজন হবে।

এখানে পশ্চিমা দেশগুলোর মদদ রয়েছে। এটা শুধু বাংলাদেশের ইস্যু না, এখানে ভারত ও চীনসহ আঞ্চলিক নিরাপত্তার বিষয়টিও যুক্ত আছে। এজন্য ভারত, চীনসহ আশিয়ান এবং জাতিসংঘে বিষয়টি তুলে ধরার প্রয়োজন হবে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, মিয়ানমারে চলমান সংঘাত তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়।

যে কোনো সমস্যা আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমাধানে আমাদের সিদ্ধান্ত আছে। বাংলাদেশের সঙ্গে যদি মিয়ানমারের দ্বন্দ্বের কোনো বিষয় আসে, তাহলে জাতিসংঘের দৃষ্টি আকর্ষণ করব। গতকাল এক ব্রিফিংয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেন, মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে ডেকে কড়া প্রতিবাদ জানানো হয়েছে।

তাদের অভ্যন্তরীণ যে সংঘাত, সেটির কারণে আমাদের দেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ, একই সঙ্গে সেখান থেকে গোলাবারুদ এসে আমাদের এখানে পড়া এবং আমাদের মানুষ আহত-নিহত হওয়া, এ পুরো জিনিসটা তাদের জানানো হয়েছে। রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য আমরা যেখানে কাজ করছি, সেই প্রেক্ষাপটে এ ধরনের ঘটনা অনভিপ্রেত, অনাকাঙ্ক্ষিত, অগ্রহণযোগ্য। এটা আমরা জানিয়েছি।

প্রসঙ্গত: গত কয়েকদিনে বাংলাদেশের আকাশসীমা লঙ্ঘন করে দেশটির হেলিকপ্টার থেকে গোলাবর্ষণ ও ছুটে আসা মর্টারশেলের আঘাতে বাংলাদেশে দুজন নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এ অবস্থায় গতকাল ঢাকায় মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত অং কিউ মোয়েকে ডেকে নিয়ে কড়া প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ।

এ সময় মিয়ানমারের বিমানবাহিনীর কোনো যুদ্ধবিমান যাতে বাংলাদেশের সীমানায় না ঢোকে, এ ব্যাপারে দেশটিকে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে। গতকাল সন্ধ্যায় মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে প্রচারিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। অন্যদিকে মিয়ানমার পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রসহ ৯টি দেশ।

‘আশ্রয় নেয়া ২৬৪ জনকে ফিরিয়ে নিতে প্রস্তুত মিয়ানমার’: বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া ২৬৪ জনকে মিয়ানমার ফিরিয়ে নিতে প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) মহাপরিচালক (ডিজি) মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী। গতকাল বুধবার বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুমে সীমান্ত এলাকা পরিদর্শন শেষে তিনি সাংবাদিকদের এ কথা জানান। বিজিবি মহাপরিচালক বলেন, ‘সীমান্ত পরিস্থিতি সম্পূর্ণ বিজিবির নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।

আমরা প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা মেনে ধৈর্য ধারণ করে, মানবিক থেকে এবং আন্তর্জাতিক সুসম্পর্ক বজায় রেখে পরিস্থিতি মোকাবিলার সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছি। পরিস্থিতি যাই হোক না কেন অবৈধভাবে আর একজনকেও বাংলাদেশে ঢুকতে দেয়া হবে না।’ দেশ মাতৃকার সার্বভৌমত্ব রক্ষায় সীমান্তে উদ্ভূত যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় বিজিবি সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত রয়েছে বলেও তিনি দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।

বিজিবির কক্সবাজার ব্যাটালিয়নের (৩৪ বিজিবি) বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার তুমব্রু ও ঘুমধুম সীমান্ত এলাকা পরিদর্শন এবং সীমান্তে দায়িত্বরত বিজিবি সদস্যদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন মহাপরিচালক। তিনি দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় সবাইকে সর্বোচ্চ পেশাদারিত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি সীমান্তে উদ্ভূত যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় তৎপর থাকার নির্দেশনা দেন।

বিজিবি মহাপরিচালক মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে চলমান সংঘর্ষের জেরে প্রাণ বাঁচাতে সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড পুলিশ (বিজিপি), মিয়ানমার সেনাবাহিনী, ইমিগ্রেশন সদস্য, পুলিশ ও অন্যান্য সংস্থার সদস্যদের খোঁজখবর নেন এবং আহতদের দেখতে হাসপাতালে যান।

এ সময় বিজিবি মহাপরিচালকের সঙ্গে বিজিবি সদর দপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, কক্সবাজার রিজিয়ন কমান্ডার, রামু সেক্টর কমান্ডার ও কক্সবাজার ব্যাটালিয়নের অধিনায়কসহ বিজিবির অন্যান্য কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন।

মিয়ানমারের অভ্যন্তরে চলমান সংঘর্ষের জেরে এখন পর্যন্ত মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিজিপি), মিয়ানমার সেনাবাহিনী, পুলিশ, ইমিগ্রেশন সদস্য ও অন্যান্য সংস্থার ২৬৪ জন সদস্য বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) তাদের সম্পূর্ণ নিরস্ত্রীকরণ করে নিরাপদ আশ্রয় এবং আহতদের চিকিৎসাসেবা দিচ্ছে।

নয়া শতাব্দী/আরজে

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ