মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী ও দেশটির বিদ্রোহী গ্রুপের অভ্যন্তরীণ সংঘাতের পারদ ছড়িয়ে পড়েছে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে। মর্টাল শেল ও গুলি এসে পড়ছে কক্সবাজার ও বান্দরবানের সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোতে। এসব এলাকার বাসিন্দাদের হতাহতের খবরও পাওয়া যাচ্ছে।
মঙ্গলবার (৬ ফেব্রুয়ারি) সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পাঁচজন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন বলে সীমান্তের সূত্রগুলো নিশ্চিত করেছে। যদিও এ ব্যাপারে আনুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্য দেয়নি বাংলাদেশ সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবি (বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ)।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সারাদিনে গুলিবিদ্ধ পাঁচজনের মধ্যে চারজন কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার পালংখালী ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দা। অপরজন বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুমের তুমব্রু সীমান্তের বাসিন্দা।
মিয়ানমারের সশস্ত্র বাহিনীর সঙ্গে বিদ্রোহী সংগঠন আরাকান আর্মির (এএ) সংঘর্ষ শুরু হয় দেড় বছর আগে। ২০২২ সালে জুলাই থেকে শুরু হয়ে টানা ছয় মাস যুদ্ধ চলে সরকারি বাহিনী ও বিদ্রোহী বাহিনীর মধ্যে। এরপর পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হলেও সম্প্রতি আবারও সংঘর্ষ শুরু হয়েছে।
তীব্র লড়াইয়ের মুখে বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে শুরু করেছে মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিপি, সেনাবাহিনী ও অন্যান্য বাহিনীর সদস্যরা। মঙ্গলবার সন্ধ্যা পর্যন্ত এই সংখ্যা ২৬৪ বলে নিশ্চিত করেছে বিজিবি।
দেশটির অভ্যন্তরে সীমান্তবর্তী এলাকার গোলাগুলির মধ্যে বাংলাদেশের ভেতরে গুলি ও মর্টার শেল এসে পড়েছে। নিহত হয়েছেন এক বাংলাদেশি ও এক রোহিঙ্গা।
কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার পালংখালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান গফুর উদ্দিন চৌধুরী জানান, তার এলাকায় চারজন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন মঙ্গলবার দুপুরের পর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত। তারা হলেন- নলবনিয়া এলাকার বাসিন্দা আয়ুবুল ইসলাম, রহমতেরবিল এলাকার আনোয়ার হোসেন, পুটিবনিয়া এলাকার মোবারক হোসেন ও মো. কালাম।
তুমব্রু সীমান্তে গুলিবিদ্ধ ব্যক্তির নাম সৈয়দ আলম। বিকেল ৪টার দিকে তুমব্রু পশ্চিমকুল পাহাড় পাড়া থেকে আশ্রয়কেন্দ্র উত্তর ঘুমধুম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যাওয়ার সময় গুলিবিদ্ধ হন তিনি।
আহত সৈয়দ আলম জানান, মিয়ানমার থেকে ছোড়া গুলি প্রথমে একটি গাছে লেগে তার কপাল ঘেঁষে চলে যায়। কপালে হাত দিয়ে স্থানীয় চিকিৎসা কেন্দ্রে গিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন তিনি।
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহিন ইমরান জানান, মিয়ানমারে সংঘাত বেড়েছে। মিয়ানমার থেকে ছোড়া গুলি, মর্টার শেল এসে পড়ছে সীমান্তের এপারে বসতঘরে। সীমান্তের ঝুঁকিপূর্ণ বাসিন্দাদের নিরাপদে সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশনা রয়েছে। প্রাথমিক অবস্থায় ঘুমধুম ও তুমব্রু সীমান্তের মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে বলা হয়েছে।
বিজিবি মহাপরিচালক মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী গণমাধ্যমে বলেন, ‘দেশটির দুই বাহিনীর মধ্যে গোলাগুলি হলে এদিকে কিছু শেল এসে পড়ছে। দুর্ভাগ্যবশত একজন রোহিঙ্গা ও বাংলাদেশি নারী মারা গেছেন। এই মৃত্যু কোনোভাবেই কাম্য নয়। আমরা প্রতিবাদলিপি দিয়েছি। আমরা বারবার বলেছি। এ নিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে একটি বড় মিটিংও হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা ধৈর্য ধারণ করে মানবিক দিক এবং আন্তর্জাতিক সুসম্পর্ক বজায় রেখে পরিস্থিতি মোকাবিলার চেষ্টা করছি। প্রধানমন্ত্রীর দিকনির্দেশনাও সে রকমই। তিনি আমাদের ধৈর্য ধারণের নির্দেশ দিয়েছেন। সেই ধারাবাহিকতায় আমরা কাজ করে যাচ্ছি।’
নয়া শতাব্দী/এনএস
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ