মিয়ানমারের সেনাবাহিনী, বর্ডার গার্ড পুলিশ (বিজিপি) ও রাখাইনের বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির মধ্যে ভয়াবহ সংঘর্ষে রণক্ষেত্র পরিণত হয়েছে মিয়ানমার সীমান্ত। গত কয়েক দিন ধরেই সংঘাত চলছে বিরতিহীনভাবে। টানা গুলিবর্ষণ, মর্টার শেলসহ বিস্ফোরণের শব্দে আতঙ্কে রয়েছেন সীমান্তবর্তী এলাকার বাসিন্দা।
বিশেষ করে বান্দরবান জেলার নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়ন, কক্সবাজার জেলার উখিয়া উপজেলার পালংখালী ইউনিয়ন থেকে শুরু করে টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়ন পর্যন্ত সীমান্ত এলাকায় এমন শব্দ শোনা যাচ্ছে। এতে ঘরবাড়ি ছাড়তে শুরু করেছে সীমান্তে বসবাসকারী বাংলাদেশি নাগরিক। এছাড়া হতাহতের সংখ্যাও বাড়ছে।
গতকাল মঙ্গলবার সকাল ৬টা থেকে ৮টা পর্যন্ত ঘুমধুমের মধ্যমপাড়া এলাকা ঘুরে দেখা যায়, গ্রামে কয়েকজন পুরুষ ছাড়া কেউ নেই। নারী-শিশুরা গ্রাম ছেড়ে অন্যত্র অবস্থান নিয়েছে। ঘরের বাইরে খুব কম মানুষকে দেখা গেছে।
স্থানীয়রা জানান, মিয়ানমারের সীমান্তে গত সোমবার রাত ৯টা থেকে গতকাল মঙ্গলবার সকাল ৬টা পর্যন্ত অনবরত গোলাগুলির শব্দে নির্ঘুম রাত কাটিয়েছে এপারের বাসিন্দা। রাতভর গোলাগুলি ও মর্টার শেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ও উখিয়া উপজেলার পালংখালী ইউনিয়নের ওপারে মিয়ানমারের ঢেঁকিবনিয়া সীমান্তে।
ঘুমধুম উচ্চ বিদ্যালয়সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দা ছৈয়দ নুর বলেন, ‘এখন যতটুকু ভয় পাচ্ছে মানুষ, স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়ও এত ভয় পায়নি। ওই সময় মানুষ সামনে থেকে যুদ্ধ করেছে। এখন সংঘর্ষ চলছে ওপারে, আমাদের করার কিছু নেই। রাতে ঘরে কেউ ছিলেন না। আমি বালুখালী থেকে মাত্র এলাম।’
স্থানীয় লোকজন বলেন, ঢেঁকিবনিয়া সীমান্ত চৌকি দখলকে ঘিরে রোববার রাত থেকে থেমে থেমে আরকান আর্মির সঙ্গে মিয়ানমারের বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) সংঘর্ষ চলছে।
পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান গফুর উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘সোমবার রাত ৯টা থেকে দুই পক্ষের লড়াইয়ের ভয়াবহতা বেড়ে যায়। এত কম্পন আমরা আর দেখিনি। একেকটি গোলা নিক্ষেপের পর পুরো এলাকা কেঁপে ওঠে। এক একটি রাত নির্ঘুম কাটিয়ে দিয়েছেন লোকজন।’
ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আজিজ বলেন, ‘নির্ঘুম রাত পার করেছে মানুষ। মর্টার শেলে দুজন নিহত হওয়ার পর আতঙ্ক দ্বিগুণ বেড়েছে। তিনি আরও বলেন, ‘আজকে টানা ৫-৬ দিন ধরে সীমান্তের ওপারে গোলাগুলির কারণে আতঙ্কে আছেন এলাকাবাসী। সোমবার রাতভর ব্যাপক গোলাগুলির আওয়াজ শোনা গেছে। এতে সীমান্তবাসী চরম আতঙ্কে রয়েছেন। ঘরের মানুষও নিরাপদ নয় এখন।’
মিয়ানমারের অভ্যন্তরে চলমান সংঘর্ষের জেরে এখন পর্যন্ত মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড পুলিশ (বিজিপি), সেনা ও পুলিশসহ ২৬৪ জন বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছেন। মঙ্গলবার দুপুরে নতুন করে আরও ৩৫ জন যোগ হয়ে এ সংখ্যা দাঁড়িয়েছে।
২৬৪ জনের মধ্যে বিজিপির সদস্য আছেন ১৮৩ জন। বাকি ৪৬ জনের মধ্যে আছেন দুই সেনা সদস্য, চার সিআইডি, পাঁচ পুলিশ, স্পেশাল ব্রাঞ্চের ৯ জন, ইমিগ্রেশন সদস্য ২০ জন ও চারজন বেসামরিক নাগরিক।
এদিকে গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন নবনিযুক্ত বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)-এর মহাপরিচালক (ডিজি) মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী।
তিনি বলেন, গত সোমবার রাত পর্যন্ত ১১৫ জন মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিপি সদস্য, সেনাসদস্য আত্মসমর্পণ বা আমাদের কাছে আশ্রয় নিয়েছেন। গতকাল মঙ্গলবার সকালে আরও ১১৪ জন যোগ হয়েছেন। মোট ২২৯ জন আশ্রয় নিয়েছেন। পরবর্তীতে দুপুরের মধ্যে আরও ৩৫ জন যোগ হয়ে ২৬৪ জনকে আমরা আশ্রয় দিয়েছি।
বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. শরীফুল ইসলাম গণমাধ্যমে বলেন, যারা অস্ত্রসহ বাংলাদেশে প্রবেশ করেছেন, তাদের অস্ত্র জমা নিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে রাখা হয়েছে।
এদিকে, বিজিবির নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, ১৮৩ বিজিপি সদস্যের মধ্যে তুমব্রু বিওপির ৭৬ জন, ঘুমধুমের ৩৭ জন ও বালুখালী এলাকার ৭০ জন। এ নিয়ে মোট ২২৭ জন বিজিপি সদস্য কক্সবাজার বিজিবি ব্যাটেলিয়নের অধীনে আছেন। অন্যদিকে টেকনাফের হোয়াইক্যং বিওপিতে আরও দুই বিজিপি সদস্য রয়েছেন।
বিজিবি জানায়, সীমান্ত এলাকায় অতিরিক্ত টহল ও চেকপোস্ট বৃদ্ধি করা হয়েছে। কোনো রোহিঙ্গাকে প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছে না। দেশের স্বার্থে সীমান্তে সার্বক্ষণিক নজরদারি বৃদ্ধি করেছে বিজিবি। এর আগে, সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত বিজিপির ১০৬ জন এবং রাত পর্যন্ত ১১৫ জন মিয়ানমার বিজিপি সদস্য পালিয়ে আসার তথ্য জানায় বিজিবি।
এদিকে সীমান্তঘেঁষা মিয়ানমার থেকে আসা গুলিতে আরও এক বাংলাদেশি নাগরিক আহত হয়েছেন। মঙ্গলবার বিকালে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার তুমব্রু সীমান্তে এ ঘটনা ঘটে। এর আগে, মঙ্গলবার সকালে মিয়ানমার থেকে ছোড়া মর্টার শেল বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম সীমান্তে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে এসে পড়ে। এতে কেউ হতাহত না হলেও বসতঘরের কাচের জানালা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তার আগে গত সোমবার দেশটি থেকে ছোড়া মর্টার শেলের আঘাতে ঘুমধুম সীমান্তের জলপাইতলী এলাকায় এক বাংলাদেশিসহ এক রোহিঙ্গা নিহত হন।
জানা গেছে, গণতান্ত্রিক সরকারকে উৎখাত করে ক্ষমতা দখল করা মিয়ানমারের সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে লড়াই চালিয়ে আসছে আরাকান আর্মিসহ কিছু সশস্ত্র গোষ্ঠী। সম্প্রতি বিভিন্ন জায়গায় জান্তার অনুগত সেনাদের পরাজয়ের খবর আসছে। এমনকি অনেক জায়গায় সেনাবাহিনীর ঘাঁটি ও নিয়ন্ত্রিত এলাকাও দখলে নিতে শুরু করেছেন বিদ্রোহীরা। এ নিয়ে তীব্র লড়াইয়ের মধ্যে ৪ ফেব্রুয়ারি সকালে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির তুমব্রু সীমান্ত এলাকা দিয়ে প্রথম দফায় বাংলাদেশে প্রবেশ করেন বিজিপির ১৪ সদস্য। এরপর দফায় দফায় ওই সীমান্ত দিয়ে ঢুকতে থাকেন বিজিপির সদস্যরা। নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম সীমান্তের ওপারে তীব্র সংঘর্ষের মধ্যে সেখানে চাকমা সম্প্রদায়ের প্রায় ৪০০ এবং রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর কিছু লোক জড়ো হয়েছে বলে জানিয়েছেন কক্সবাজারের শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) মো. মিজানুর রহমান। এ অবস্থায় ওই চাকমা-রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশের আশঙ্কা করা হচ্ছে। অবশ্য আইনমন্ত্রী আনিসুল হক গত সোমবার জাতীয় সংসদে বলেছেন, মিয়ানমার সীমান্তের পরিস্থিতি খুবই নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে বাংলাদেশ। একই সঙ্গে সীমান্তে সশস্ত্র বাহিনীকে ধৈর্য ধরতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
বাংলাদেশে ঢোকার চেষ্টায় ‘বিদ্রোহীরা’
বাংলাদেশে ঢোকার চেষ্টা করল মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা। এসময় গ্রামবাসীর হাতে ধরা পড়েন ২৩ জন। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে চারটি অস্ত্র। মিয়ানমার সীমান্ত পেরিয়ে আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে বাংলাদেশের গ্রামে ঢোকার চেষ্টা করেছে দেশটির বিচ্ছিন্নতাবদী একটি সংগঠনের অর্ধশতাধিক বিদ্রোহী। তাদের ধাওয়া করেন গ্রামবাসী। তখন গ্রামবাসীকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে তারা। গ্রামবাসী চারটি আগ্নেয়াস্ত্রসহ ২৩ জন মিয়ানমারের বিদ্রোহীকে আটক করেছেন। গতকাল মঙ্গলবার বেলা দেড়টায় কক্সবাজারের উখিয়ার পালংখালী ইউনিয়নের ২, ৩ ও ৫নং ওয়ার্ডর রহমতের বিল গ্রামে তারা ঢোকার চেষ্টাকালে গ্রামবাসীর হাতে ধরা পড়ে। এ বিষয়ে ৩নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা আবদুল্লাহ বলেন, ‘বিদ্রোহীরা যখন সীমান্ত পেরিয়ে গ্রামে ঢুকে তখন আমরা তাদের েদেখি। এ কারণে তারা আমাদের গুলি করে। পরে আমরা তাদের ধাওয়া করি।’
একই ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা মো. জাহেদ বলেন, ‘তারা গুলি করে পলানোর চেষ্টা করলে আমরা গ্রামবাসী তাদের ঘিরে ফেলি। এ সময় আমরা ২৩ জনেকে আটক করতে পারলেও অনেকে পালিয়ে গেছে।’
পালংখালী ইউপি চেয়ারম্যান আবদুল গফুর বলেন, ‘গ্রামবাসীর সহযোগিতায় মিয়ানমারের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনের ২৩ জনকে চারটি আগ্নেয়াস্ত্রসহ আটক করা হয়েছে। তবে তারা কোন সংগঠনের সঙ্গে জড়িত এখনো জানা যায়নি।’
তিনি আরও বলেন, ‘বিদ্রোহীদের এখানে একটি স্কুলে রাখা হয়েছে। সেখানে বিজিবি, পুলিশ ও রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন রয়েছে। পরবর্তী সিদ্ধান্ত তারাই নেবেন।’
সংঘাতেও থেমে নেই মাদক পাচার: মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী জান্তা সরকার ও দেশটির বিদ্রোহী গ্রুপের অভ্যন্তরীণ সংঘাতে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে উত্তেজনা বিরাজ করছে। এর মধ্যেও থেমে নেই মাদক কারবারি চক্রের অপতৎপরতা। এবার নাফ নদ পেরিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশের সময় ৬৪ হাজার ৬০০ ইয়াবা জব্দ করেছে বডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)।
মঙ্গলবার ভোরে টেকনাফ-২ বিজিবির এক অভিযানে এ মাদক জব্দ করা হয়। টেকনাফ ব্যাটালিয়ন (২ বিজিবি) এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মহিউদ্দীন আহমেদ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘টেকনাফের খারাংখালীর হেলালের ঘের নামক এলাকা দিয়ে মাদকের একটি বড় চালান মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে আসতে পারে এমন একটি তথ্য জানতে পারি। ওই এলাকায় বিজিবির টহলদল দেখতে পায়, এক ব্যক্তি নাফ নদ পার হয়ে পোঁটলা হাতে নিয়ে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে আসার চেষ্টা করছে। তার গতিবিধি সন্দেহজনক মনে হলে বিজিবির টহলদল তাকে চ্যালেঞ্জ করে।
তখন পোঁটলাটি ফেলে দিয়ে সে দৌড়ে দ্রুত পাশের গ্রামের ভেতর পালিয়ে যায়। পরে পোঁটলাটি তল্লাশি করে ৬৪ হাজার ৬০০ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট উদ্ধার করা হয়।’ তিনি আরও বলেন, ‘ওই গ্রামে সকাল ৮টা পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে কোনো কারবারি কিংবা তাদের সহযোগীকে আটক করা সম্ভব হয়নি। তবে চোরাকারবারিদের শনাক্ত করার জন্য ব্যাটালিয়নের গোয়েন্দা কার্যক্রম চলছে।’
কেন এই যুদ্ধ
২০২১ সালে সামরিক অভ্যুত্থানে অং সান সু চির নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করে মিয়ানমারের ক্ষমতা নেয় দেশটির সেনাবাহিনী। ২০২৩ সালের অক্টোবরের শেষ দিক থেকে মিয়ানমারের তিনটি জাতিগত বিদ্রোহী বাহিনী একজোট হয়ে জান্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে সমন্বিত আক্রমণ শুরু করে। বাহিনীগুলো হলো- তা’আং ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি-টিএনএলএ, আরাকান আর্মি-এএ এবং মিয়ানমার ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটিক অ্যালায়েন্স আর্মি-এমএনডিএএ।
তারা শান, রাখাইন, চীন ও কেয়াহ রাজ্যে লড়াই চালাচ্ছে। বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ এলাকা ও সেনাপোস্ট দখল করে ইতোমধ্যে তারা সাফল্য দেখিয়েছে। আরাকান আর্মি (এএ) এ জোটের অন্যতম অংশ। মিয়ানমারের পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্য রাখাইনের সংখ্যালঘু নৃগোষ্ঠীর একটি সশস্ত্র বাহিনী এটি। তারা রাখাইনের বৃহত্তর স্বায়ত্তশাসনের দাবিতে লড়াই করছে।
রাখাইনে সেনা ও বিদ্রোহীদের মধ্যে লড়াইয়ের প্রভাব পড়ছে সীমান্তের এপারের জনগোষ্ঠীর মধ্যেও। যুদ্ধ শুরুর পর এখনই সবচেয়ে বড় অনুপ্রবেশের ঘটনা ঘটছে।
নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তের ২৪০ পরিবারকে সরিয়ে নেয়ার নির্দেশ
বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তের ২৪০ পরিবারকে নিরাপদ আশ্রয়ে ফিরিয়ে নিতে নির্দেশ দিয়েছেন জেলা প্রশাসক (ডিসি)। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্ত পরিদর্শনকালে জেলা প্রশাসক শাহ মুজাহিদ উদ্দিন এ নির্দেশ দেন। ডিসি বলেন, বান্দরবান-মিয়ানমার সীমান্তে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে চলমান পরিস্থিতির কারণে ছাত্রছাত্রী ও সীমান্তে অতি ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বসবাসকারী ২৪০ পরিবারকে নিরাপদ আশ্রয়ে নিতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত সীমান্তবর্তী স্কুলগুলো বন্ধ ও সবাইকে আতঙ্কিত না হয়ে সজাগ থাকার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, সীমান্তে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে সরকারি বাহিনী ও বিদ্রোহী আরাকান আর্মির মধ্যে তুমুল লড়াই চলছে। এরই মধ্যে সীমান্ত লাগোয়া দেশটির সরকারি বাহিনীর তুমব্রু রাইট ক্যাম্প দখলে নিয়েছেন বিদ্রোহীরা। বর্তমানে ঢেঁকুবনিয়ে বিজিপি ক্যাম্প দখলে নিতে উভয় পক্ষের লড়াই চলছে। তাদের এ সংঘাতে ব্যবহার করা গুলি ও মর্টার শেলের গোলা সীমান্ত অতিক্রম করে এসে পড়ছে বাংলাদেশের ঘুমধুম এলাকার বিভিন্ন লোকালয়ে।
গত সোমবার দুপুরে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের জলপাইতলি এলাকায় এক বাংলাদেশি নারীসহ দুজন নিহত ও আহত হয়েছে অন্তত তিনজন। বিদ্রোহীদের কাছে টিকতে না পেরে বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছেন দেশটির সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিজিপি) ১১৩ সদস্য। এ অবস্থায় সীমান্তে বসবাসকারী বাংলাদেশিদের নিরাপদে আশ্রয় দিতে উত্তর ঘুমধুম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। গত সোমবার রাত থেকে ঘুমধুমের কোনাকপাড়া, জলপাইতলী ও ভাজাবনিয়া এলাকার বাসিন্দাদের ওই আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
এদিকে মিয়ানমার থেকে ছোড়া গোলায় নাইক্ষ্যংছড়িতে সৈয়দ আলম (৩৮) নামের আরও এক বাংলাদেশি যুবক আহত হয়েছেন। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নের পশ্চিমকুল পাহাড়পাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
সৈয়দ আলম ওই এলাকার কাদের হোসেনের ছেলে। নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ড মেম্বার আনোয়ার হোসেন বলেন, গত রাত থেকে উত্তর ঘুমধুম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে স্থানীয়দের আশ্রয় দেয়া হচ্ছে। আহতের বিষয়টি শুনেছি। বিস্তারিত পরে জানা যাবে।
নয়া শতাব্দী/আরজে
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ