বেঁচে থাকার অপরিহার্য উপাদান বিশুদ্ধ খাবার পানির চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। আর তারই সুযোগ নিয়ে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে এক শ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ী শুরু করেছে ‘ভেজাল পানির’ ব্যবসা। এখানে পানি নিয়ে চলছে অভিনব প্রতারণা। বিশুদ্ধ পানির নামে বিক্রি করা হচ্ছে মোটরের পানি। এমনকি, বিশুদ্ধ পানি সরবরাহে নেই বিএসটিআই এর অনুমোদনও।
এমন অপরাধে সীতাকুণ্ডের ছোট কুমিরা ঘাট এলাকার নীল প্রিমিয়াম ড্রিংকিং ওয়াটার নামের এক পানির কারখানাকে এক লাখ টাকা জরিমানা করেছে বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই)।
মঙ্গলবার (৬ ফেব্রুয়ারি) দুপুর দেড়টার দিকে বিএসটিআইয়ের ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান পরিচালনা করে বিএসটিআই আইন-২০১৮ অনুযায়ী এ শাস্তি দেয় প্রতিষ্ঠানটিকে। ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. আলাউদ্দীন।
অভিযানে অংশ নেন বিএসটিআইয়ের প্রসিকিউটর ফিল্ড অফিসার প্রকৌশলী মো. মাহফুজুর রহমান (সিএম), পরিদর্শক প্রকৌশলী মো. জিল্লুর রহমান (মেট্রোলজি)।
জানা গেছে, নামসর্বস্ব ট্রেড লাইসেন্স দিয়ে পিওর ন্যাচারাল ড্রিংকিং ওয়াটারের নামে দেদারসে বিক্রি করা হচ্ছে অনুমোদনহীন কারখানার পানি। এ ধরনের কারখানা নির্মাণে মানা হয়নি কোনো রকমের বিধিমালা।
সরেজমিনে দেখা যায়, জরাজীর্ণ স্যাঁতসেঁতে জায়গায় সরাসরি মোটর থেকে জারে ঢোকানো হয় পানি। এ ছাড়াও অনুমোদনহীন এই কারখানায় পানির জার ফুডগ্রেড নয় বলেও শনাক্ত করা হয়। সায়েন্স ল্যাবরেটরি, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআরবি), বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশনের (বিএসটিআই) অনুমোদনসহ জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের প্রিমিসেস সার্টিফিকেট, শ্রমিকদের শারীরিক সুস্থতার সনদ, পরিবেশগত ছাড়পত্র ও কল-কারখানার সনদের বিধান থাকলেও এসবের একটিও নেই কারখানাগুলোতে। এমনকি এসব কারখানায় নিজস্ব ল্যাব বা কেমিস্ট পর্যন্ত নেই।
অনুসন্ধানে জানা যায়, সীতাকুণ্ড উপজেলায় বিএসটিআই অনুমোদন ছাড়া বিভিন্ন ইউনিয়নে প্রায় ২০ টির মতো পানির কারখানা রয়েছে। এসব কারখানায় বিশুদ্ধ পানির নামে মানুষের জীবন নিয়ে চলছে ছিনিমিনি। মিনারেল পানি বলে বাজারজাত করছে সর্বত্র। বিএসটিআই অনুমোদন না থাকলেও বোতলে দেখা গেছে বিএসটিআইয়ের সিল এবং লোগো। বিশুদ্ধ পানির নামে চালিয়ে যাচ্ছে প্রতারণা।
বিএসটিআইয়ের ফিল্ড অফিসার প্রকৌশলী মো. মাহফুজুর রহমান (সিএম) বলেন, প্রতিষ্ঠানটির বিএসটিআইয়ের কোনো অনুমোদন নেই। এটি চলমান রাখার কোন সুযোগ নেই। কেননা, পানি বিএসটিআইয়ের বাধ্যতামুলক ২৭৩ টি পণ্যের মধ্যে একটি। বিএসটিআই অনুমোদন ছাড়া পণ্য উৎপাদন এবং বাজার জাত করার কোন সুযোগ নেই। যদি তারা এটি করে সেটাও বেআইনি হবে।
উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. আলা উদ্দিন জানান, বিভিন্ন অভিযোগের প্রেক্ষিতে কুমিরা ঘাট এলাকায় অভিযান পরিচালনা করি। পানি আমাদের জীবনের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু কোনরকম অনুমোদন ছাড়াই কয়েকটি কোম্পানির নামে পানি সরবরাহ করা হচ্ছে। নীল প্রিমিয়াম ড্রিংকিং ওয়াটার কারখানায় বিএসটিআইয়ের অনুমোদন না নিয়ে বিএসটিআইয়ের সিল এবং লোগো ব্যবহার করা হয়েছে, সেটি একটি অপরাধ। এছাড়া জারের মাধ্যমে পানি সরবরাহ করার ক্ষেত্রে বিএসটিআইয়ের অনুমোদন লাগে। এ কারণে প্রথমবারের মতো এ প্রতিষ্ঠানকে সতর্ক এবং বিএসটিআইয়ের ২০১৮ এর ১৫ ধারা লঙ্ঘনের দায়ে ২৭ ধারায় ১ লক্ষ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। তারা কথা দিয়েছেন খুব শীঘ্রই অনুমোদনের জন্য আবেদন করবেন। আমাদের এই অভিযান অব্যাহত থাকবে।
নয়াশতাব্দী/ডিএ/একে
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ