চুয়াডাঙ্গায় আখের পাশাপাশি সাথী ফসল চাষ করে লাভবান হচ্ছেন চাষিরা। এ জেলার দর্শনায় রয়েছে দেশের বৃহৎ চিনিকল কেরু অ্যান্ড কোম্পানি কমপ্লেক্স। এখানে আখ মাড়াই করে চিনি, চিটাগুড়, উন্নতমানের মদ, ভিনেগার ও জৈব সার উৎপাদন হয়ে থাকে। কিন্তু দিন দিন উন্নত জাতের আখ চাষ কমে যাওয়ায় এ চিনিকলে উৎপাদন ব্যাহত হয়ে চিনি আহরণ কমে যাচ্ছিল। তবে আধুনিক প্রযুক্তিতে আখের সঙ্গে সাথী ফসল চাষে লাভের মুখ দেখায় কৃষকরা ফের আখচাষে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন।
কৃষিনির্ভর এ জেলায় আখ চাষ থেকে অন্যান্য চাষাবাদ বেশ লাভজনক। আখ চাষের জন্য ফেলে রাখা জমি চাষিদের বেশ অসুবিধায় পড়তে হয়। আর উন্নতমানের আখ না পেয়ে চিন্তিত ছিল চিনিকল কমপ্লেক্স কর্তৃপক্ষ।
এদিকে আখ চাষিদের আধুনিক প্রযুক্তিতে আখ চাষের সাথে সাথী ফসল চাষ করিয়ে লাভবান করার জন্য তাদের উদ্বুদ্ধ করছে পাবনা জেলার ঈশ্বরদীতে অবস্থিত বাংলাদশ
সুগারক্রপ গবেষণা ইনস্টিটিউট।চাষিরা আখের সাথে সাথী ফসল হিসেবে চাষ করছেন ডাল, মসলা, ভুট্টা, সরিষা, ফুলকপি, বাঁধাকপি, পেঁয়াজ, রসুন, আদা, গাঁজর ও টমেটো। বাংলাদেশ সুগারক্রপ গবেষণা ইনস্টিটিউট চুয়াডাঙ্গা উপকেন্দ্র জাতীয় ফসল উৎপাদন প্রকল্পের অর্থায়নে প্রায় দেড় শতাধিক আখ চাষিদের আখ ও সাথী ফসলের বীজ, সার এবং কীটনাশক সহায়তা করেছে। একজন চাষির জমি ও শ্রম ছাড়া চাষের সমস্ত উপকরণই সরবরাহ করা হয়েছে এ প্রকল্পের মাধ্যমে। লাভের আশায় পরিকল্পিতভাবে আখ চাষে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন চাষিরা।
জীবননগর উপজেলার উথলী গ্রামের আখ চাষি রাশেদুল জানান, আখের সাথে ফুলকপির চাষ করেছি। এ দুটি চাষে আমার ৪০-৫০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। আখ আর ফুলকপি ৩ লাখ ২০ হাজার টাকা বিক্রি হবে। এতে খরচ বাদে আমার লাভ হবে ২ লাখ ৭০-৮০ হাজার টাকা।
একই গ্রামের সাইদুর বলেন, দুই বিঘা জমিতে আখের সাথে ফুলকপি চাষ করেছি। এতে আমার খরচ হয়েছে ১৫-১৬ হাজার টাকা। এ পর্যন্ত ৩০ হাজার টাকার ফুলকপি বিক্রি করেছি। এখনো যে পরিমাণ ফুলকপি জমিতে আছে, সেগুলো ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকায় বিক্রি করতে পারব। একেকটি ফুলকপির ওজন দেড় থেকে ২ কেজি। আখ চাষে খরচ হবে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা। দুই বিঘা জমির আখ ১ লাখ ৮০ হাজার টাকায় বিক্রি হবে। এতে খরচ বাদে লাভ হবে ২ লাখ ২৪ হাজার টাকা।
একই উপজেলার নিশ্চিন্তপুর গ্রামের আমিনুল হক জানান, আখের সাথে সাথী ফসল হিসেবে ছোলার চাষ করেছিলাম। কিন্তু দেরিতে ছোলা চাষের কারণে ফলন ভাল হয়নি। তবে আখ অত্যন্ত ভাল হয়েছে। প্রতি একরে ১০ থেকে ১২ টন আখ উৎপাদন হবে।
জেলার সদর উপজেলার আখ চাষি আখতার বলেন, এক বিঘা জমিতে আখ চাষ করেছি। এর মধ্যে সাথী ফসল পেঁয়াজ চাষ করেছিলাম। এক বিঘা জমিতে ৭০ মণ পেঁয়াজ হয়েছিল, যা বিক্রি করেছি ৭০ হাজার টাকায়।
একই গ্রামের আমির হোসেন জানান, এক বিঘা জমিতে আখ চাষের সাথে সাথী ফসল হিসেবে ছোলা আবাদ করেছিলাম এবং সাড়ে ৫ মণ ছোলা হয়েছে। ছোলা কেটে নিয়ে ওই জমিতে মুগ চাষ করে ৭৫ কেজি পেয়েছি। এ চাষের ফলে জমিতে আখও ভাল হয়েছে। বাংলাদেশ সুগারক্রপ গবেষণা ইনস্টিটিউটের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও প্রকল্প পরিচালক ড. মো. আবু তাহের সোহেল বলেন, এটি ৩ বছরের প্রকল্প ছিল। কিন্তু কৃষি মন্ত্রণালয় সার্বিক কার্যক্রমে খুশি হয়ে প্রকল্পের কাজ এক বছর বাড়িয়ে দিয়েছে। এ প্রকল্পের উদ্দেশ্য হলো আখ চাষের সাথে সাথী ফসলের চাষ করে চাষিদের উৎসাহিত করা।
বাংলাদেশ সুগারক্রপ গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. মো. ওমর আলী জানান, এ প্রকল্পের মাধ্যমে আখ চাষিরা লাভবান হয়ে আরও বেশি আখ চাষে উদ্বুদ্ধ হবে বলে মনে করছেন। সেই সাথে চুয়াডাঙ্গার দর্শনায় অবস্থিত বৃহৎ চিনিকল কমপ্লেক্সে উন্নত জাতের আখ সরবরাহ বাড়বে বলে আশা প্রকাশ করেছেন চিনিকল কর্তৃপক্ষ।
নয়াশতাব্দী/টিএ/এসএ
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ