ঢাকা, শনিবার, ৫ অক্টোবর ২০২৪, ২০ আশ্বিন ১৪৩১, ১ রবিউস সানি ১৪৪৬

মেঘনা-তেঁতুলিয়ায় চলছে অবাধ ইলিশ নিধন

প্রকাশনার সময়: ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৬:০৩

সরকারি নিষেধাজ্ঞার তিন মাস পেরিয়ে গেলেও ভোলার চরফ্যাশনে মেঘনা ও তেঁতুলিয়ায় জাটকা সংরক্ষণ মৌসুমে কোনো অভিযান হয়নি। সরকারি নিষেধাজ্ঞায় ১ নভেম্বর থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত আট মাস জাটকা আহরণ, পরিবহন, বিক্রি ও মজুত করা নিষিদ্ধ হলেও প্রশাসনের নজরদারি না থাকায় ভোলার চরফ্যাশনে জাটকা (ইলিশের পোনা) ধরে তা উপজেলার সব মাছের আড়ত এবং উপজেলা সদরসহ গ্রামের বাজারগুলোতে প্রকাশ্যে বিক্রির অপকাণ্ডে মেতেছেন জেলে ও ব্যবসায়ীরা। অবাধে জাটকা নিধনের ফলে ইলিশ শূন্য হতে চলেছে মেঘনা ও তেঁতুলিয়া নদী।

মৎস্য বিভাগ ও প্রশাসনের কর্মকর্তারা নীরব থাকায় অবাধে নিধন হচ্ছে জাটকা ইলিশ-এমনটাই দাবি সচেতন মহলের। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মেঘনা ও তেঁতুলিয়া নদী থেকে জেলেরা জাটকা ধরে চরফ্যাশন উপজেলার নতুন স্লুইস, মাইনুদ্দিন, খেজুর খাছিয়া, পাঁচ কপাট, আট কপাট, বকসি, বাবুরহাট, ঘোষের হাট, গাছির খাল ও চৌকিদারের খাল ঘাটসমূহের আড়তগুলোতে বিক্রি করে।প্রতিদিন ভোর ৬টা থেকে সকাল ১০টা পর্যন্ত এসব ঘাটে ডাকে লাখ লাখ টাকার জাটকা বেচাকেনা হয়।

উপজেলার বিভিন্ন স্থান থেকে পাইকাররা এসে আড়তদারদের কাছ থেকে

জাটকা ইলিশ কিনে চরফ্যাশন সদর বাজারসহ স্থানীয় হাটবাজারে বিক্রি করছেন। এছাড়া প্রতিদিন লঞ্চযোগে ঢাকা, বরিশাল, চাঁদপুরসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় ইলিশের পাশাপাশি জাটকা নিয়ে যাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। কিন্তু এ ব্যাপারে উপজেলা মৎস্য বিভাগ বা প্রশাসনের কোনো তৎপরতা দেখা যায় না।

অভিযোগ আছে, ব্যবসায়ীরা উপজেলা মৎস্য অফিসসহ সংশ্লিষ্টদের ম্যানেজ করার কারণে নিষেধাজ্ঞার তিন মাস অতিবাহিত হতে চললেও উপজেলা মৎস্য অফিসের কর্মকর্তারা অভিযানে না নেমে নীরব ভূমিকায় রয়েছেন। এ সুযোগে অবাধে জাটকা ইলিশ ধরা এবং বিক্রি অব্যাহত রেখেছেন ব্যবসায়ী ও জেলেরা।

বাংলাদেশ ক্ষুদ্র মৎস্যজীবী জেলে সমিতি চরফ্যাশন উপজেলা শাখার সভাপতি মো. নাজু মিয়া জানান, মেঘনা ও তেঁতুলিয়া নদীতে জাটকা শিকার করে স্থানীয় আড়ত ও হাটবাজারে বিক্রি করা হচ্ছে। বিগত বছরগুলোতে প্রশাসন কিছু কিছু অভিযান চালালেও এবার কোনো অভিযান চেখে পড়েনি। দ্রুত জাটকা নিধন বন্ধের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, এভাবে জাটকা নিধন অব্যাহত থাকলে অচিরেই মেঘনা ও তেঁতুলিয়া ইলিশ শূন্য হয়ে যাবে।

উপজেলা মৎস্যজীবী লীগের সভাপতি শফি উল্যাহ পলোয়ান বলেন, দেশের ক্রমবর্ধমান জনগোষ্ঠীর পুষ্টি চাহিদা পূরণ, কর্মসংস্থান, দারিদ্র্য বিমোচন ও রপ্তানি আয়ে মৎস্য খাতের অবদান সর্বজনস্বীকৃত। আর এ সম্পদ রক্ষায় প্রতি বছরই সরকার বিভিন্ন রকম পদক্ষেপ গ্রহণ করে আসছে। সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোকে সে অনুযায়ী নির্দেশনা প্রদান ও তা বাস্তবায়নে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। তবে নির্দেশনা থাকলেও অজ্ঞাত কারণে চরফ্যাশনে তা বাস্তবায়নে গাফিলতি দেখা যাচ্ছে। এতে জাতীয় এ সম্পদ রক্ষার পরিবর্তে এটি হুমকির মুখে পড়েছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক জেলে বলেন, এবার এখনো অভিযান শুরু হয়নি। মাছ শিকার ছাড়া বিকল্প কোনো কাজ না থাকায় বাধ্য হয়েই আমরা জাটকা শিকার করছি।

মো. আব্বাছ নামের সামরাজ ঘাটের এক আড়তদার বলেন, এ বছর নদীতে মাছ না থাকায় জেলেদের পিঠ দেওয়ালে ঠেকেছে। জাটকা ছাড়া এখন নদীতে কেনো মাছ নেই। তাই তারা নিরুপায় হয়ে জাটকা ধরছে। প্রশাসন যদি জাটকা ধরা বন্ধ করে দিতে পারে তাহলে বিক্রিও বন্ধ হবে।

নিষেধাজ্ঞার তিন মাস অতিবাহিত হতে চললেও কেন অভিযান পরিচালিত হয়নি-জানতে চাইলে চরফ্যাশন সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মারুফ হোসেন মিনার বলেন, নভেম্বর-ডিসেম্বরে আসলে নদীতে মাছ ছিল না। জানুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে বাংলাদেশের নদীতে ইলিশের ঝাঁক ঢোকে, সেই ঝাঁকটাই ঢুকেছে, যার কারণে এত পরিমাণ জাটকা আসছে। মিটিংয়ের অভাবে আমরা অভিযান শুরু করতে পারিনি। বৃহস্পতিবার উপজেলা টাস্কফোর্স কমিটির মিটিং হয়েছে। কাল পরশুর মধ্যে আমরা অভিযান শুরু করব।

তিনি আরও বলেন, গত বছর অভিযান পরিচালনার জন্য সরকারিভাবে ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা বরাদ্দ পেয়েছি কিন্তু এ বছর অভিযানের জন্য এখনো কোনো বরাদ্দ পাইনি।

চরফ্যাশন উপজেলা নির্বাহী অফিসার নওরীন হক বলেন, জাতীয় নির্বাচনের কারণে সঠিক সময়ে কাজ শুরু করা যায়নি। আমি নিজেও দেখেছি বাজারে প্রচুর পরিমাণে জাটকা ইলিশ আসছে। এ ব্যাপারে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

নয়া শতাব্দী/এসএ

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ