টাঙ্গাইলে মধুপুর গড়াঞ্চলে জেঁকে বসেছে শীতের তীব্রতা। শীতের আমেজে শুরু হয়েছে পিঠাপুলির উৎসব। খেজুরের রস সংগ্রহ ও গুড় তৈরিতে বেড়েছে গাছিদের ব্যস্ততা। অনেকেই মৌসুম চুক্তিতে খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ করতে শুরু করেছে। গাছি আর কারিগররা খেজুর গুড় বানাতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। গুণে মানে ভালো থাকায় চাহিদাও বাড়ছে।
আশপাশের উপজেলা জেলা থেকে গুড় কিনতে আসছে লোকজন। চিকিৎসকরা বলছে খেজুর রস ও গুড় মানবদেহের জন্য উপকারি তবে নিপা ভাইরাস থেকে সবার সাবধানে থাকা প্রয়োজন।
আনারসের মতো গড় এলাকার খেজুরের রস ও চাটি গুড়ের অর্থনৈতিক অপার সম্ভাবনা হতে পারে। হতে পারে গুড়ের জন্য বিখ্যাত এলাকা। মধুপুরের লাল মাটি কৃষি ফসলের জন্য উর্বর থাকায় ধারণা করা হচ্ছে এ অঞ্চল খেজুরের চাষের জন্য বেশ উপযোগী। বাণিজ্যিক ভিত্তিতে খেজুর চাষ হলে মধুপুর গড় খেজুরের রস ও গুড়ের জন্য বিখ্যাত হবে উঠবে এমনটাই ধারণা সংশ্লিষ্টদের।
টাঙ্গাইলের মধুপুর গড়ে আনারসের রাজধানীতে চলছে খেজুরের রস সংগ্রহ আর গুড় তৈরি। কুয়াশা ঢাকা ভোরে মাটির হাড়িতে ভরছে লাল মাটির খেজুরের টপটপে রস। রসের হাড়ি কাঁধে নিয়ে ছুটছে কারিগররা। বড় কড়াইয়ে কাঁচা রস ঢেলে আগুনে জাল করছেন শীতের সকালে। আগুনের তাপে জলীয় বাষ্পে ঘন হচ্ছে রসের কড়াই। চারপাশে ঘ্রাণ ছড়িয়ে পড়েছে। যতই সময় ঘনিয়ে আসছে দেখা দিচ্ছে ঘন রসের ঝোলাগুড়। এ যেন গাছি আর কারিগরের হাতের যাদু। কাঠের যন্ত্রের ঘর্ষণে বেরিয়ে আসছে গুড়।
মাটির চাটির উপরে কালো পলি বিছিয়ে ঢেলে দিচ্ছে গরম সিদ্ধ রসের ঘন ছানা। একটু পরেই জমাট বেঁধে রূপ নেয় গুড়ে। দারুণ রঙ আর পরিবেশ সম্মত উপায়ে তৈরি হচ্ছে খেজুরের গুড়। মেডিসিন কেমিক্যাল না দেওয়ায় মধুপুরের পাহাড়িয়া এলাকার পিরোজপুর গ্রামের তৈরিকৃত এ গুড়ের চাহিদা বেড়েই চলছে। প্রতি কেজি গুড় সাড়ে চারশ টাকা দামে বিক্রি হচ্ছে। গুড় কিনতে আশপাশের উপজেলা থেকে আসছে লোকজন।
গড় এলাকার আনারসের বাগান, বিল, বাইদ ও পুকুর পাড়ের বিভিন্ন খেজুর গাছের রস সংগ্রহ ও গুড় তৈরি করতে উত্তর বঙ্গ থেকে আসছেন কয়েকজন গাছি। তারা চুক্তি ভিত্তিক গাছ নিয়ে গুড় তৈরি করছে। লাল মাটির সুমিষ্ট গুড় নিয়ে গ্রামে চলছে পিঠাপুলি খাওয়ার ধুম। পুরো শীত চলবে গুড় তৈরি এমনটাই জানালেন গাছিরা।
পিরোজপুর গ্রামের জোয়াহের আলী (৫৫) জানান, অন্যান্য জেলার গুড়ের চেয়ে লাল মাটির গুড় স্বাদে গুণে ঘ্রাণে আলাদা। ভেজালমুক্ত হওয়ায় স্থানীয়দের চাহিদা বেড়েছে। এমন গুড় পেয়ে খুশি স্থানীয়রা। গুণেমানে ভালো থাকায় দিন দিন আসছে দূর দুরান্ত থেকে ক্রেতারা।
তারা মিয়া (৪৫) জানান, তার ১৫টি খেজুর গাছ এ বছর রস সংগ্রহের জন্য গাছিদের কাছে চুক্তি ভিত্তিক দিয়েছেন। ভালো রস আসছে। এ রস নিয়ে গাছিরা তাদের গ্রাামে গুড় তৈরি করছে। প্রতি কেজি গুড় সাড়ে চারশ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
আবুল হোসেন (৫৪) জানান, বাজারের গুড়ের চেয়ে তাদের এলাকার তৈরিকৃত গুড় গুণেমানে স্বাদে গন্ধে অনেক ভালো। এ জন্য দূর দুরান্ত থেকে লোকজন গুড় কিনতে আসছে।
খেজুরের রস ও গুড় তৈরির কারিগর মহসিন মিয়া (৫০) জানান, রাজশাহী থেকে টাঙ্গাইলের মধুপুরে গাছ কাটতে এসেছি। এই জেলায় আমরা ১২ বছর ধরে শীত মৌসুমে গাছ কেটে রস সংগ্রহ ও রস থেকে গুড় তৈরি করি। খেজুরের রস অনেক ভালো। আমাদের সংগ্রহ করা রস ও গুড়ের মান ভালো থাকায় এর চাহিদা বেশি। তার মতে মধুপুরের খেজুরের রসের গুণগত মান অনেক ভালো।
মধুপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সাইদুর রহমান বলেন, খেজুর রসে উপকারিতা আছে তেমনভাবে ক্ষতিও আছে। নিপা ভাইরাসের আক্রমণের হাত থেকে রক্ষার জন্য পরিমিত তাপমাত্রায় সিদ্ধ করে খেতে হবে। যুগের পরির্বতে খেজুর গাছ দিন দিন কমে যাচ্ছে। শীতের তীব্রতা বৃদ্ধির ফলে রসের পরিমাণ মোটামুটি ভালো পাচ্ছে। আহরিত রসের খেজুরের গুড় পেয়ে খুশি আনারসের জনপদের মানুষেরা।
যদি আনারসের মতো খেজুরের চাষ করা যায়, তবে আনারসের মতো খেজুর গুড়েরও সুনাম ছড়িয়ে পড়বে দেশ ও বিদেশে এমনটাই প্রত্যাশা এলাকাবাসীর।
নয়াশতাব্দী/এসএ
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ