দীর্ঘ ৮ বছর ধরে পায়ে শিকল বাঁধা অবস্থায় মানবেতর দিন কাটছে সেলিম মিয়া (২৩) নামে ময়মনসিংহের নান্দাইলের এক অসহায় যুবকের।
হতদরিদ্র পিতা অর্থের অভাবে ছেলের চিকিৎসা করাতে পারছেন না। এতে দিন দিন বেড়েই চলেছে সেলিমের মানসিক প্রতিবন্ধকতা।
মানসিক প্রতিবন্ধী সেলিম মিয়া উপজেলার খারুয়া ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের বীরবাগাইর গ্রামের হতদরিদ্র জালাল মিয়ার ছেলে।
হারিয়ে যাওয়ার ভয়ে ৮ বছর ধরে মানসিক প্রতিবন্ধী ছেলের দু’পায়ে শিকল পরিয়ে তালা দিয়ে গাছের সঙ্গে বেঁধে রেখেছেন অসহায় বাবা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ভুক্তভোগী সেলিমের পায়ে লোহার শিকল ও তালা লাগিয়ে গাছের সঙ্গে বেঁধে রাখা হয়েছে। প্রচণ্ড শীতের মধ্যে কখনো দাঁড়িয়ে, কখনো বসে সময় কাটছে অসহায় এই যুবকের। কারো সঙ্গে কথা বলেন না, শুধু ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকেন অসহায়ের মতো।
এমন অমানবিক ও নির্মম দৃশ্য দেখে সকলের কষ্ট হলেও, তার হতদরিদ্র পরিবারের পক্ষে এছাড়া আর কিছুই করার নেই। টাকার অভাবে মানসিক ভারসাম্যহীন ছেলেটির চিকিৎসা করাতে পারছেন না দিনমজুর জালাল মিয়া। সন্তানটি যেন হারিয়ে না যায়, সেই ভয়ে শিকল দিয়ে তাকে বেঁধে রেখেছেন বলে জানান তিনি।
সেলিমের পরিবার জানায়, ২০১৫ সালে ঢাকায় গার্মেন্টসে চাকরি করতেন সেলিম মিয়া। তখন তিনি কিছুটা অসুস্থবোধ করলে বাড়িতে চলে আসেন। বাড়িতে আসার ৫ মাস পর থেকেই তিনি মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে যান।
এরপর বাড়ি থেকে বের হয়ে গেলে, তিনি আর ফিরে আসতে পারতেন না। একাধিকবার হারিয়ে যান সেলিম মিয়া। পরে এলাকাবাসীর সহায়তায় খুঁজে এনে বাড়িতে বেঁধে রাখেন তার বাবা। বেঁধে রাখতে হয় শিকল দিয়ে। শিকলে বাঁধা অবস্থায় তাকে খাইয়ে দিতে হয়। এমন অসুস্থ হওয়ার পর থেকেই তিনি কারো সঙ্গে কোনো কথাও বলেন না।
প্রতিবেশিরা জানান, দীর্ঘ ৮ বছর ধরে সেলিমকে শিকলে বেঁধে রাখা হয়েছে। শিকল খুলে দিলেই অন্যত্র চলে যাওয়ায় তাকে স্থায়ীভাবে পায়ে শিকল পরিয়ে তালাবন্দি করে রাখা হয়েছে।
সেলিমের প্রতিবেশী চাচাতো ভাই মামুন, হারিছ মিয়া এবং ভাতিজা আবু সিদ্দিক বলেন, ৮ বছর ধরে সেলিমকে শিকলে বেঁধে রাখা হয়েছে। তার কষ্ট সহ্য করার মতো না। তারা সেলিমের চিকিৎসার জন্য সরকারি সাহায্যের আবেদন জানান।
সেলিমের মা জরিনা আক্তার কেঁদে কেঁদে বলেন, ‘আমার ছেলের এই কষ্ট আর সহ্য অয়না। দিনরাত শিকলে বাইন্ধা রাহি। শিকলে বান্ধা অবস্থায় খায়, ঘুমায়। আমি মা অইয়া পুতের এই কষ্ট দেখলে কলজায় আঘাত লাগে।’
সেলিমের পিতা জালাল মিয়া বলেন, ‘৮ বছর ধইরা ছেলেরে শিকলে বাইন্ধা রাখছি। কি করাম, গরিব মানুষ, টেহাপয়সা নাই। চিকিৎসা করাইতারি না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে চিকিৎসার জন্য সাহায্য চাই।’
স্থানীয় খারুয়া ইউপি চেয়ারম্যান কামরুল হাসনাত ভুইয়া মিন্টু বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা নেই। খোঁজ নিয়ে দেখবো।’
বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখার কথা জানিয়েছেন নান্দাইল উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) অরুণ কৃষ্ণ পাল।
নয়াশতাব্দী/এনএস
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ