শনিবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৩ পৌষ ১৪৩১

বন্ধুদের ফাঁদে পড়ে নিঃস্ব যুবক এখন পাগল প্রায়

প্রকাশনার সময়: ৩০ জানুয়ারি ২০২৪, ২২:০৭

দীর্ঘদিন একসঙ্গে দুবাইয়ে প্রবাস জীবন কাটিয়েছেন কয়েকজন বাংলাদেশি। সেই সূত্রে বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে একে অপরের মধ্যে। দশ বছর প্রবাস জীবন কাটিয়ে যা আয় করেছেন, দুবাইয়ের আল মাশরাফ ব্যাংকে জমা করেন প্রবাসী বন্ধুদের একজন আমিনুল ইসলাম।

দুবাই প্রবাসী আমিনুলের বাড়ি গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার শান্তিরাম ইউনিয়নের শান্তিরাম গ্রামে। তার আশা ছিল, কষ্টে অর্জন করা মূলধন দিয়ে দেশে ফিরে ভালো কিছু করবেন। যাতে পুরো পরিবারের সবাইকে নিয়ে স্বচ্ছল জীবনযাপন করতে পারেন। কিন্তু একটি অভিনব প্রতারণার ঘটনায় তার সেই লালিত স্বপ্ন লণ্ডভণ্ড হওয়ার উপক্রম প্রায়।

ভুক্তভোগীর এবং তার পরিবারের বর্ণনা থেকে জানা যায়, আমিনুল নয় বছর ধরে দুবাই প্রবাসী। সম্প্রতি দুবাইয়ের আল মাশরাফ ব্যংকে তার ১০ বছর মেয়াদি ফিক্সড ডিপোজিটের মেয়াদ শেষ হয়েছে। তার জমানো টাকা বিদেশ থেকে বাংলাদেশের সোনালী ব্যাংকের মতিঝিল শাখায় ট্রান্সফার করার কথা চলতি বছরের জানুয়ারিতে। প্রবাসে থাকতেই তার কিছু বন্ধু তৈরি হয়। তারাও করোনার পর দেশে এসেছে। একই ব্যাংকে একসঙ্গে ২২ বন্ধু টাকা জমা করেছেন ১০ বছরের জন্য।

আমিনুলের পরিবার আরো জানায়, গত ২৪ জানুয়ারি সব বন্ধু মিলে সোনালী ব্যাংকের মতিঝিল শাখায় গিয়ে টাকা উত্তোলন করার কথা। কিন্তু হঠাৎ ওই চার বন্ধু আমিনুলের গাইবান্ধার বাড়িতে বেড়াতে আসতে চায়। আমরা খুশি মনে আসতে বলি। পরের দিন ২৪ জানুয়ারি একসঙ্গে একই মাইক্রোতে ঢাকায় গিয়ে সোনালী ব্যাংকের মতিঝিল শাখায় (প্রবাসী বন্ধুদের দেওয়া কথা অনুযায়ী) আমিনুল ফিঙ্গার প্রিন্ট দিয়ে টাকা উত্তোলন করে সেই টাকা গাইবান্ধার সোনালী ব্যাংক শাখায় ট্রান্সফার করা হবে।

পরিবার জানায়, কথা অনুযায়ী মঙ্গলবার (২৩ জানুয়ারি) দুপুর ১টায় প্রবাসী ওই চার বন্ধু গাইবান্ধায় এসে আমিনুলকে ফোন দেয়। আমিনুলকে তারা তার বাড়ির কাছাকাছি কোন স্থানে আসতে বলে। আমিনুল তাদের বাড়ির নিকটবর্তী সুন্দরগঞ্জের ধুবনী বাজারে আসতে বলে। সেখানে গিয়ে সে তাদের রিসিভ করে এবং তাদের সাথে দেখা হওয়ার বিষয়টি বাড়িতে ফোন করে নিশ্চিত করে। আমরা তাদের জন্য গরুর মাংস, খাসির মাংস, মুরগী, পোলাও সব রান্না করে রাখি আর অপেক্ষা করি।

এদিকে কিছুক্ষণ পর ধুবনী বাজারের একটি দোকান থেকে পান এবং সিগারেট কিনে আমিনুলকে তাদের গাড়িতে উঠতে বলে এবং এখান থেকে বাড়ি কতদূর হবে জানতে চায়। এরপর আমিনুল তাদের গাড়িতে ওঠে। কিছুদূর আসার পর তারা আমিনুলকে মাঝখানে বসিয়ে জোরপূর্বক ফিঙ্গার প্রিন্ট নেয়। তারা ব্যাংক একাউন্টের পাসওয়ার্ড বলতে বলে। বলতে অস্বীকৃতি জানালে ধ্বস্তাধস্তি শুর হয়। এক পর্যায়ে তারা আমিনুলের ঘাড়ে একটি ইনজেকশন পুশ করলে আমিনুল অচেতন হয়ে পরে। এ সময় তারা আমিনুলের মোবাইলে ব্যাংকের সব ডকুমেন্টস সংরক্ষণ করা ফাইলটিসহ একটি এন্ড্রয়েড মোবাইল ফোন নিয়ে যায়। দুপুর ২টার দিকে ফোন করলে আমিনুলের ফোন বন্ধ দেখায়।

সব জায়গায় খোঁজা-খুঁজির পর আমিনুলের উদ্বিগ্ন পরিবার যখন সুন্দরগঞ্জ থানায় সাধারণ ডায়েরি করতে যায় তখন রাত প্রায় নয়টা। এরইমধ্যে খবর আসে, আমিনুলকে বেলকা ইউনিয়ন পরিষদের পার্শ্ববর্তী জহুরুলের মোড় নামক স্থানে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করেছে স্থানীয়রা। পরে গ্রাম পুলিশকে দিয়ে সুন্দরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহবুব আলম সুন্দরগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন।

এ ঘটনায় গত রবিবার (২৮ জানুয়ারি) রাতে ভুক্তভোগী প্রবাসী আমিনুল ইসলাম বাদি হয়ে সুন্দরগঞ্জ থানায় প্রবাসী চার বন্ধু ময়মনসিংহ জেলার আমির হোসেন, নড়াইল জেলার আরিফ মিয়া, সিরাজগঞ্জ জেলার আসাদ মোল্লা, টাঙ্গাইল জেলার গোপাল চন্দ্রসহ অজ্ঞাতনামা ১০ থেকে ১৫ জনের নামে অভিযোগ দাখিল করেন।

ভুক্তভোগী প্রবাসী আমিনুলের বাবা নুর মোহাম্মদ বলেন, আমিনুলকে উদ্ধার করার পর সুন্দরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। কিন্তু গতকাল সোমবার (২৯ জানুয়ারি) থেকে সে পাগলের মতো আচরণ করছে। বারবার ব্যাংকের ফাইলসহ মোবাইলটি খোঁজে আর ঘর থেকে বের হয়ে ছোটাছুটি করে। পরে ডাক্তারের পরামর্শে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেছি। ইনজেকশনের বিষয়ে ডাক্তার বলেছে, সুস্থ হতে কমপক্ষে সাতদিন লাগবে।

তিনি আরও বলেন, ওই প্রতারকরা আমার ছেলের ফিঙ্গার নিয়ে হাতের আঙ্গুল ঘষে দিয়ে গেছে। যাতে ওর ফিঙ্গার নষ্ট হয়ে যায়। এখন যদি ওই ফিঙ্গার প্রিন্ট দিয়ে কোনভাবে ব্যাংক থেকে ওরা সব টাকা তুলে নিয়ে যায়, কি হবে আমাদের? আপনারা একটু সহযোগিতা করেন বাবা। আমরা খুব দুঃশ্চিন্তায় আছি। প্রশাসনের কাছে আবদার, আমার ছেলের অপহরণকারীদের দ্রুত গ্রেফতার করে মোবাইলটা যেন উদ্ধার করে দেয়।

সুন্দরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহবুব আলম বলেন, এ ঘটনায় একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। ঘটনাটি যেহেতু প্রথমদিন থেকেই জানি তাই ভুক্তভোগী ওই প্রবাসীকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে। তবে, ভুক্তভোগী এবং তার পরিবার অতি সহজসরল। এতদিনের তাদের বন্ধুত্ব অথচ তাদের কোন দেশি মোবাইল নাম্বার নেয়নি তারা। ওই প্রবাসী বন্ধুদের বাড়ির ঠিকানা পর্যন্ত তারা জানে না। শুধু নাম, ছবি এবং কিছু ইমু নাম্বার দিতে পেরেছে। তদন্ত চলছে। আশা করি, অপহরণের সাথে জড়িতদের গ্রেফতার করা সম্ভব হবে।

নয়াশতাব্দী/একে

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ