কক্সবাজারের টেকনাফের একমাত্র সরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান টেকনাফ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। এই হাসপাতালে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে চিকিৎসা নিতে আসেন রোগীরা। বিশেষ করে যারা অর্থের অভাবে বেসরকারি হাসপাতালে বা অন্য কোথাও গিয়ে উন্নত চিকিৎসা নিতে পারেন তারাই টেকনাফ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিতে আসেন। কিন্তু এই হাসপাতালের খাবার নিয়ে আছে চরম দুর্নীতির অভিযোগ। ঠিকাদার অধিক লাভের আশায় রোগীদের খাবার পরিবেশনে দুর্নীতি করছে বলে জানান রোগীরা।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, রোগীদের খাবার বাবদ প্রতিদিন মাথাপিছু বরাদ্দ দেওয়া হয় ১৭৫ টাকা। এ টাকায় সকালে নাস্তা, দুপুর ও রাতের খাবার সরবরাহ করার কথা। কিন্তু নির্ধারিত পরিমাণ ও মানসম্মত খাবার পাচ্ছে না অভিযোগ তুলেছেন রোগীরা।
টেকনাফ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের রোগীদের খাবার বিতরণে আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) এনামের সঙ্গে আঁতাত করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান অনিয়ম ও দুর্নীতি করছেন বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। এনামের সহযোগীতায় টানা কয়েক বছর ধরে ঠিকাদারি করছেন জিয়া নামের এক যুবলীগ নেতা, এছাড়াও ওই ঠিকাদার টেকনাফ সরকারি কলেজের শরীর চর্চা বিভাগের শিক্ষক।
তবে আচরণ বিধিমালার ১৭ (১) নম্বর ধারায় বলা হয়েছে, এই আইনের অন্য বিধান অনুসারে কোনো সরকারি কর্মচারী সরকারের পূর্ব অনুমোদন ছাড়া কোন ব্যাবসায় জড়াতে পারবেন না। অথবা দায়িত্বের বাইরে অন্য কোন কাজ কিংবা চাকরি করতে পারবেন না।
হাসপাতালে ভর্তি এক রোগী জানান, দুপুরের খাবারে রুই কিংবা কাতল মাছ ৮০ গ্রাম দেওয়ার কথা। কিন্তু বেশিরভাগ দিন দেওয়া হয় পাঙ্গাস মাছ। পরিমাণে অনেকটা কম। সকালের নাস্তায় একশ’ গ্রাম ওজনের পাউরুটি কেউ পান না। অপর একাধিক রোগী ও তার স্বজনরা বলেন, দুইশ’ গ্রাম ভাত দেওয়ার কথা থাকলেও সেটি পান না। ডাল ও সবজির পরিমাণ কম দেওয়া হয়। মাঝেমধ্যে কর্মচারিদের বকশিস দিয়ে সেই খাবার কিনে নিতে হয়।
এ হাসপাতালটিতে খাবারের মানের পাশাপাশি স্যাঁতসেঁতে ও অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ নিয়েও রয়েছে অভিযোগ। এছাড়াও নার্স ও স্টাফদের দুর্ব্যবহারের শিকার হন রোগীরা।
জাদিমুরা এলাকার নুরুন নবীর স্ত্রী শামিনা বেগম হাসপাতালে ভর্তি। তিনি বলেন,‘চারদিন পর আমার বিছানার নোংরা চাদর পরিবর্তন করা হয়েছে। খাবার অত্যন্ত নিম্নমানের। এছাড়াও ডাল আর পানির তফাৎ বুঝা যায় না।’
শামছুন্নাহার নামে আরেক রোগী বলেন, ‘ডাকলে ডাক্তার, নার্সরা আসতে চায় না। বেশি ডাকলে নার্সরা রাগ হয়ে ধমক দেন।’
টেকনাফ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এর ঠিকাদার জিয়া এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী জিয়া বলেন, ‘প্রতি সপ্তাহে খাবারের মান নিয়ে প্রতিবেদন জমা দেয় কর্তৃপক্ষ। খাবারের মান খারাপ হওয়ার কথা নয়। খারাপ হলে তো প্রতিবেদনে উঠে আসত। তাছাড়া জিয়া এন্ট্রারপ্রাইজ ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানটি আমার বউয়ের নামে। আমি দেখাশোনা করি মাত্র।’
এদিকে আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. এনাম ও ঠিকাদার জিয়া’র যোগসাজশে খাবার বিতরণে অনিয়ম-দুর্নীতি চলছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এ প্রসঙ্গে অভিযুক্ত ওই ঠিকাদারের পক্ষ নিয়ে কথা বলেন ডা. এনাম।
তিনি বলেন, ‘১৭৫ টাকা একজন রোগীর জন্য পর্যাপ্ত নয়। এজন্য খবারের মান ভাল হচ্ছেনা।’
টেকনাফ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা.প্রণয় রুদ্র বলেন, ‘বর্তমান যুগে একজন রোগীর জন্য ১৭৫ টাকা বরাদ্দের ভিতরে আসলে এর চেয়ে ভালো খাবার দেওয়া সম্ভব না।’
রুই মাছের পরিবর্তে পাঙ্গাস দিয়ে রোগীর সাথে প্রতারণার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘রুই মাছের পরিবর্তে অন্য মাছ দেওয়ার বিষয়টি জানা নেই।’
তবে টেকনাফ হাসপাতালটি অনেক ভাল করছে বলে প্রসংশা করেছেন কক্সবাজারের সিভিল সার্জন ডা. বিপাশ খীসা। তবে সরকারি ওষুধ বাইরে বিক্রি, স্টাফদের দুর্ব্যবহার, স্যাঁতসেঁতে ও অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ, রোগী আসলেই অন্যত্র পাঠানোসহ নানা বিষয়ে দৃষ্টি আর্কষণ করা হলে এর আগে তার কাছে কেউ অভিযোগ করেনি দাবি করেন তিনি।
নয়াশতাব্দী/ডিএ/
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ