শনিবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৩ পৌষ ১৪৩১

প্রকাশ্যে ঘুরছে হত্যা মামলার আসামিরা

প্রকাশনার সময়: ২৮ জানুয়ারি ২০২৪, ২২:৪২

কক্সবাজারের উখিয়ার পালংখালী ইউনিয়নের রহমতের বিল এলাকায় বিজিবির সোর্স সন্দেহে সংঘবদ্ধ মাদক কারবারিদের হাতে খুন হওয়া মো. শাহজাহান হত্যা মামলার আসামিদের হুমকিতে অসহায় হয়ে পড়েছে মামলার বাদী ও পরিবার। মামলার তদন্তকারী পুলিশ কর্মকর্তার রহস্যজনক আচরণ, প্রকাশ্যে ঘুরাফেরা করলেও কোনো আসামিকে গ্রেফতার না করা, বাদী পরিবারকে হত্যাসহ মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে হয়রানি করা হচ্ছে। এ অবস্থায় তিন কন্যা ও বৃদ্ধ শশুরকে নিয়ে অসহায় জীবন যাপন করছে নিহত শাহজাহানের স্ত্রী ও মামলার বাদী জোসনা আক্তার।

এছাড়াও মামলার অন্যতম আসামি বার্মায়া আলমগীর ও তার অন্যান্য সহযোগীদের এলাকাবাসী প্রকাশ্যে ঘোরাফেরা করতে দেখলেও পুলিশের এমন নিষ্ক্রিয়তার সুযোগে একের পর এক অপরাধ কর্মকাণ্ড করছেন তারা। এতে নিহতদের পরিবারের সদস্যরা রয়েছেন আতঙ্কে।

রোববার (২৮ জানুয়ারি) দুপুরে কক্সবাজার প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে এমন তথ্য জানান নিহত শাহজাহানের স্ত্রী ও মামলার বাদী জোসনা আক্তার। এ সময় প্রশাসনের অসহযোগিতা, আসামিদের অত্যাচার ও হত্যার বর্ণনা দিতে গিয়ে জোসনা আক্তারের আর্তনাদে গোটা সংবাদ সম্মেলনের পরিবেশ ভারি হয়ে ওঠে।

নিহত মো. শাহজাহান উখিয়া উপজেলার পালংখালী ইউনিয়নের রহমতের বিল এলাকার সিরাজুল ইসলামের ছেলে। একমাত্র পুত্রকে হারিয়ে অনেকটা বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছে নিহত শাহজাহানের বৃদ্ধ পিতা সিরাজুল ইসলামও।

জোসনা আক্তার সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ২০২৩ সালের ৮ নভেম্বর উখিয়ার পালংখালীর রহমতের বিল এলাকায় তার স্বামী মো. শাহজাহানকে একটি সংঘবদ্ধ মাদক কারবারি চক্রের সদস্যরা পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে। বিজিবি সদস্যরা একটি মাদকের চালান আটক করার পর ওই চালানটি ধরিয়ে দিতে আমার স্বামী সোর্স ছিল সন্দেহে এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে ইয়াবা কারবারিরা। এ ঘটনায় তিনি বাদী হয়ে ১০ নভেম্বর ১০ জনের নাম উল্লেখ করে ১৫ জনের বিরুদ্ধে উখিয়া থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।

মামলায় এজাহারভুক্ত আসামিরা হলেন, মনির আলম, ল্যাংটা কামাল, মোস্তাফিজ, সাইফুল ইসলাম, ওসমান গণি, সালা উদ্দীন, জানে আলম, ফারুক, জিয়াউদ্দিন তারেক ও বার্মাইয়া আলমগীর। আলমগীর বাহিনীর সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে গোটা এলাকায় আতঙ্ক বিরাজ করছে।

তিনি বলেন, মামলাটি দায়েরের পর মামলার তদন্তকারী পুলিশ কর্মকর্তার রহস্যজনক আচরণ আমাদের অসহায় করে তুলেছে। মামলা দায়েরের পর থেকে এ পর্যন্ত পুলিশ কোনো আসামিকে গ্রেফতার করেনি। গ্রেফতারের জন্য দৃশ্যমান কোনো তৎপরতাও নেই। আসামিরা প্রকাশ্যে ঘুরাফেরা করে প্রতিনিয়ত আমাদের প্রাণনাশের হুমকি, মিথ্যা মামলায় উল্টো হয়রানির হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। পুলিশকে আসামিদের অবস্থান সম্পর্কে বারবার অবহিত করার পরও পুলিশ কোনো আসামি গ্রেফতার করেনি।

মামলার বাদী বলেন, এ পরিস্থিতিতে মামলার এক নম্বর আসামি মনির আলমকে বিজিবি সদস্যরা গ্রেফতার করে পুলিশের কাছে সোপর্দ করে। মনির বর্তমানে কারাগারে থাকলেও মামলার তদন্তকারী পুলিশ কর্মকর্তা আসামিকে রিমান্ড বা জিজ্ঞাসাবাদের প্রয়োজন মনে করেনি। এক মাস ধরে মনির কারাগারে রয়েছে। এতে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার বিষয়টি আমাদের সন্দেহ তৈরি হয়েছে। আমরা আদালত ও পুলিশ সুপারের নিকট মামলার তদন্তকারী কর্মকতার পরিবর্তন চেয়ে আবেদন করেছি। এরও কোনো সুরাহা এ পর্যন্ত হয়নি।

অন্যদিকে আসামিরা স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। মামলার এজাহারভুক্ত আসামি বর্মাইয়া আলমগীর প্রকাশ্যে আমার বাড়িতে গিয়ে হত্যার হুমকি দিচ্ছেন। বিষয়টি পুলিশকে অবহিত করলেও পুলিশ আসামি গ্রেফতারের পরিবর্তে আইনজীবীদের সম্পর্কে বিরূপ মন্তব্য করছেন। এ পরিস্থিতিতে আমরা মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তার পরিবর্তনের দাবি জানাচ্ছি। একই সঙ্গে আমাদের নিরাপত্তার দাবি জানাই। অন্যথায় আমাদের বলা হোক আমরা মামলা প্রত্যাহার করে নেব।

তিনি বলেন, প্রভাবশালী চক্রের হুমকিতে আমিসহ আমার পরিবার অসহায়। এখন স্বামী হত্যার বিচার পাব কিনা আমি জানি না। এ অবস্থায় তিন কন্যা ও বৃদ্ধ শশুরকে নিয়ে অসহায় জীবনযাপন করছি। একমাত্র পুত্রকে হারিয়ে অনেকটা বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছে আমার শ্বশুর সিরাজুল ইসলাম। আমরা প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করছি।

উখিয়া থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) ও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এ বি এম তারেক হোসেন অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, পুলিশ নিজস্ব গতিতে মামলার তদন্তকাজসহ আসামিদের গ্রেফতারে সব ধরনের প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে।

নয়া শতাব্দী/এসএ

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ