মাঠের পর মাঠজুড়ে বিরাজ করছে থোকা থোকা হলুদ ফুলের দৃষ্টিনন্দন সরিষা খেতের মনোমুগ্ধকর দৃশ্য। এ সুযোগে খেতের পাশে সারিবদ্ধভাবে মৌ বক্স বসিয়েছেন নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার ভ্রাম্যমান মৌ-খামারিরা। সেখান থেকে দলে দলে মৌমাছির ঝাঁক বসছে সরিষার হলুদ ফুলে।
একদিকে মৌমাছির পরাগায়ণে কৃষকদের সরিষা উৎপাদন যেমন বৃদ্ধি পাচ্ছে তেমনি মধু সংগ্রহের মাধ্যমে বদলে যাচ্ছে মৌ-খামারিদের ভাগ্যের চাকা। মৌ-খামারিরা বলছেন, বিস্তীর্ণ এই সরিষা খেতে মৌচাষের মাধ্যমে এ বছর ৬ হাজার ৩৭৫ মেট্রিক টন মধু সংগ্রহ করবেন।
গুরুদাসপুর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিস সূত্রে জানা গেছে, এ বছর গুরুদাসপুর উপজেলায় একটি পৌরসভাসহ ৬টি ইউনিয়নে ১১শ ১৫ হেক্টর জমিতে সরিষার চাষ হয়েছে। এদিকে সরিষা মাঠ সংলগ্ন ৩৫০ হেক্টর জমির পাশে প্রাকৃতিকভাবে উৎপাদন হচ্ছে মধু। ৬৮০টি মৌবাক্স বসিয়েছেন মৌয়ালরা। মৌসুম শেষে এসব বাক্স থেকে উৎপাদিত মধুর লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৬ হাজার ৩৭৫ মেট্রিক টন। শষ্য বহুমুখীকরণে কৃষকদের সরিষা চাষে উৎসাহিত করা হচ্ছে। কৃষি অফিসের মাধ্যমে কৃষকদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
সরেজমিনে, রোববার (২৮ জানুয়ারি) দুপুরে গুরুদাসপুর উপজেলার বিলশা, রুহাই ও বামনবাড়িয়া গ্রামে দেখা গেছে, বিস্তীর্ণ মাঠ জুড়ে সরিষা ফুলে ফুলে মৌমাছির আনাগোনা। খেতের পাশেই মৌ-খামারিরা বাক্স পেতে বসেছেন। মৌমাছিগুলো সরিষাফুল থেকে মধু সংগ্রহ করে বাক্সের ভেতর ঢুকছে আর বের হচ্ছে। নির্দিষ্ট সময় পর মৌয়ালরা বাক্স থেকে মধু সংগ্রহ করছেন। সেই মধু বাজারজাত করা হচ্ছে।
বিলশা ও রুহাই গ্রামে সরিষার খেত থেকে মধু সংগ্রহ করতে এসেছেন নাজিরপুর ইউনিয়নের মোল্লা বাজারের মৌচাষি দিগন্ত মন্ডল। তিনি জানান, তার ১০০টি মৌবাক্স রয়েছে। সেখান থেকে সপ্তাহে ৮ মণ মধু সংগৃহীত হয়।
তিনি ছাড়াও আরও ২ জন শ্রমিক নিয়োজিত আছেন। মধু থেকে তার সাপ্তাহিক আয় ৪৮ হাজার টাকা হলেও খরচ ১৬ হাজার টাকা। তার সাপ্তাহিক আয় প্রায় ৩২ হাজার টাকা। একই ইউনিয়নের মোল্লা বাজার গ্রামের মৌচাষি বেলাল হোসেন জানান, তাদের উৎপাদিত মধুগুলো এপি, ডাবর, কম্বোসহ দেশীয় বিভিন্ন কোম্পানি ৬-৭ হাজার টাকা মণ হিসাবে পাইকারি কিনে নেন। ডিসেম্বর মাস জুড়ে সরিষা ফুল থেকে মধু সংগৃহীত হয়ে থাকে। তার মতো এ উপজেলার অন্তত ৪০ জন মৌচাষি এ পেশার সাথে যুক্ত।
এদিকে সরিষার বাম্পার ফলনের সম্ভাবনায় খুশি কৃষকরা। উপজেলার খুবজীপুর ইউনিয়নের বিলশা গ্রামের কৃষক ফারুক হোসেন জানান, স্বল্প সময়ে সরিষার ফসল ঘরে তুলে একই জমিতে বোরো ধান চাষ করা যায়। এ কারণে সরিষা চাষ করে থাকেন। এ বছর তিনি ৫ বিঘা জমিতে সরিষার আবাদ করেছেন। সরিষার গাছ দেখে অনুমান করা যাচ্ছে বাম্পার ফলন হবে।
রুহাই গ্রামের কৃষক ফয়েজ উদ্দিন জানান, তিনি ৮ বিঘা জমিতে সরিষা আবাদ করেছেন। তার মতো এলাকার অধিকাংশ কৃষক সরিষার আবাদ করেছেন।
গুরুদাসপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হারুনর রশীদ জানান, গুরুদাসপুর উপজেলায় ১১শ ১৫ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। ভোজ্যতেল ও সরিষার বাজারদর বেশি থাকায় সরিষা চাষে কৃষকের আগ্রহ বেশি। চলতি বছরে ৬ হাজার ৩৭৫ মেট্রিক টন মধু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এ কারণে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি চাষ ও উৎপাদন দুটোই বাড়েছে। আর সরিষা ফুলকেন্দ্রিক মধু সংগ্রহে কৃষক ও মৌ-খামারিরা উভয়েই লাভবান হচ্ছেন।
নয়াশতাব্দী/ডিএ/এসএ
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ