কক্সবাজারের উখিয়ার শীর্ষ ইয়াবা কারবারি ও ডজনখানেক মামলার আসামি পুরাতন রোহিঙ্গা আলমগীর। সম্প্রতি বালুখালী সীমান্তের বিজিবি ক্যাম্প এলাকায় একটি মাদকের চালান ছিনতাই করতে গিয়ে দুগ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষে আহত হন তিনি। তবে মাদকের ঘটনা আড়াল করতেই তিনি ওই গণপিটুনির নাটক সাজিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
অভিযোগ, পরিকল্পিত এ মাদক ছিনতাইয়ের সময় দুগ্রুপের অভ্যন্তরীণ ঘটনাকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করে মামলার আসামি করা হচ্ছে এলাকার সাধারণ মানুষকে। ইতোমধ্যে আটক কিংবা মামলার ভয়ে এলাকা ছেড়েছেন অনেকেই।
শুক্রবার (২৬ জানুয়ারি) রাত ৮টার দিকে পালংখালী ১নং ওয়ার্ডের বালুখালী জুমেরছড়া এলাকার স্থানীয় আহম্মদুর রহমানের বাসায় এক সংবাদ সম্মেলনে এমন অভিযোগ করেন এলাকাবাসী।
এসময় উপস্থিত ছিলেন- স্থানীয় ইউপি সদস্য নুরুল আলম, যুবলীগ নেতা মুফিদুল আলম, স্থানীয় যুবক তারেকুল রহমান, জসিম উদ্দিন, নুরুল আলম, নাসিমুল কবিরসহ অন্তত ৫০ জন নারী-পুরুষ।
এ সময় রোহিঙ্গাদের বেপরোয়া কর্মকাণ্ড, হত্যা, মাদক পাচার, জমি দখল, মিথ্যা মামলার হুমকি ও পুরাতন রোহিঙ্গাদের নানা ধরনের অত্যাচারের বর্ণনা দিতে গিয়ে কয়েকজনের আর্তনাদে ভারি হয়ে ওঠে গোটা সংবাদ সম্মেলনের পরিবেশ। মামলা-গ্রেফতারের ভয়ে পুরো এলাকা প্রায় পুরুষশূন্য হয়ে পড়েছেন বলেও দাবি করেন তারা।
এলাকাবাসীর হয়ে স্থানীয় তারেকুল ইসলাম লিখিত বক্তব্যে ও সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মাদক লুটের সময় রোহিঙ্গা চোরাকারবারিদের সংঘর্ষে পেশাদার মাদক সন্ত্রাসী ও ডজনখানেক মামলার আসামি আলমগীরকে অভিযুক্ত করেন।
তারেকুল ইসলাম অভিযোগ করে বলেন, গত ২৫ জানুয়ারি রাত ৯টার দিকে বালুখালী সীমান্তের বিজিবি ক্যাম্প জিরো পয়েন্ট এলাকা দিয়ে ৯০ হাজার পিস সম্বলিত একটি ইয়াবার চালান দেশে ঢুকছে- এমন খবর পান পুরাতন রোহিঙ্গা ইয়াবাডন আলমগীর ও তার প্রধান সহযোগী নুরুল আজাদ আশিক। ওই মাদকের চালানটি ছিনতাই করতে গিয়ে মাদক আমদানিকারক রোহিঙ্গাদের সঙ্গে তাদের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। এতে গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন আলমগীর।
তিনি আরও বলেন, পরদিন সকালে আমরা এ ঘটনা শুনতে পাই। কিন্তু মাদক ছিনতাইয়ের সংঘর্ষকে পরিকল্পিতভাবে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছেন আলমগীর ও তার সহযোগীরা। ইতোমধ্যে পূর্ব শত্রুতার জের ধরে এলাকার সাধারণ মানুষকে আসামি করে থানায় এজাহার দিয়েছেন বলে লক্ষ্য করা গেছে। হয়তো এটি মামলা হিসেবে নথিভুক্তও করা হয়েছে। এর আগেও তার অবৈধ কর্মকাণ্ডে বাঁধা দেওয়ায় স্থানীয় বিভিন্নজনকে মিথ্যা মামলা ও হত্যার হুমকি দেন রোহিঙ্গা আলমগীর। এ কারণে উখিয়া থানায় তার নামে একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়। যার নং-৮৭৩। ওই জিডির জের ধরে আমাকেও আসামি করা হয়েছে।
আলমগীরকে ‘দুর্ধর্ষ অপরাধী’ উল্লেখ করে স্থানীয় ইউপি সদস্য নুরুল আলম বলেন, আলমগীরের বহুমাত্রিক অপরাধের প্রতিবাদ করেছে বলে এলাকার অনেক মানুষের ওপর তার ক্ষোভ রয়েছে। মাদক চোরাকারবারি রোহিঙ্গাদের সঙ্গে ইয়াবা ছিনতাইকালে আলমগীর হামলার শিকার হন। এখন আসল ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার জন্য নতুন গল্প তৈরি করে এলাকার সাধারণ মানুষকে মিথ্যা মামলা দিয়ে ঘর ছাড়া করেছে।
সংবাদ সম্মেলনে এলাকাবাসী জানায়, রোহিঙ্গা আলমগীরের নেতৃত্বে মাদক কারবার, ডাকাতি, খুন, ছিনতাই, জমি দখলসহ নানা অপরাধ সংঘঠিত হয়। প্রায় সময় তার অবৈধ কর্মকাণ্ডে এলাকাবাসী বাধা দেয়। এতে তিনি এলাকাবাসীর ওপর ক্ষিপ্ত হন। বৃহস্পতিবার মাদক ছিনতাই করতে অপর রোহিঙ্গা চোরাকারবিদের হাতে তিনি আহত হন। এ ঘটনায় মিথ্যা মামলায় হয়রানি হওয়ার ভয়ে এলাকার বহু পুরুষ এখন আত্মগোপনে।
কয়েকজন নারী জানান, মামলার ভয়ে তাদের বাড়ির পুরুষরা রাতে বাড়িতে ঘুমাতে পারছেনা। এতে দিনরাত তারা আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন। যাচাই-বাচাই ছাড়া মামলা নথিভুক্ত করায় পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্থক্ষেপ কমনা করেন তারা।
এদিকে পুলিশের একটি সূত্র জানান, বার্মায়া আলমগীর একজন ভয়ঙ্কর মাদক সন্ত্রাসী। তার বিরুদ্ধে মাদক, হত্যা, ডাকাতি, ছিনতাইসহ অন্তত এক ডজন মামলা রয়েছে। যার মধ্যে উখিয়া থানায় অন্তত ৮টি মামলা রয়েছে। যার নং- ৬৩/২০, ৩/১৮, ২৬/১৮, ৭০/২২,১৪/২২, ১৩৫/২২, জিআর ৪৫৫/২৩, ৬৪৬/২৩।
এ বিষয়ে উখিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) মো. শামিম হোসাইন বলেন, আলমগীর মাদকসহ বহু অপরাধের সঙ্গে জড়িত। সম্প্রতি মাদক সংক্রান্ত একটি ঘটনার জেরে হামলার ঘটনা ঘটেছে। ইতোমধ্যেই এই হামলার ঘটনায় একটি মামলাও নথিভুক্ত করা হয়েছে।
এলাকার বহু নিরপরাধ মানুষকে ওই মামলায় আসামি করার বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে- ওসি বলেন, ঘটনাটি খুব গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে। নিরপরাধ কাউকে আসামি করা হলে তদন্ত করে বাদ দেওয়া হবে।
নয়া শতাব্দী/এনএস
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ